রাজধানীতে বৈশাখী পরিবহনের চলন্ত বাসে আগুন

রাজধানীতে বৈশাখী পরিবহনের চলন্ত বাসে আগুন

রাজধানী ডেস্ক

রাজধানীর মহাখালীতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের সামনে বৈশাখী পরিবহনের একটি চলন্ত বাসে শনিবার রাতে আকস্মিকভাবে আগুন লাগে। রাত ৯টা ১৫ মিনিটে ঘটনাটি ঘটে এবং খবর পাওয়ার পর ফায়ার সার্ভিসের দুই ইউনিট দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। আগুনের কারণ তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত করা না গেলেও দমকল বাহিনী পরিস্থিতি স্থিতিশীল করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

ঘটনাস্থল মহাখালী এলাকা রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক ও প্রশাসনিক কেন্দ্রগুলোর নিকটবর্তী হওয়ায় আগুন লাগার পরপরই এলাকাজুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। চলন্ত বাসে আগুন লাগার ফলে কিছু সময়ের জন্য সড়কে যান চলাচল বিঘ্নিত হয় এবং আশপাশের পথচারীরা নিরাপদ স্থানে সরে যেতে বাধ্য হয়। ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর পর দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে, যাতে আগুন ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি না থাকে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর, মহাখালী বাস টার্মিনাল এবং আশপাশের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাটি প্রতিদিনই বিপুল সংখ্যক যাত্রী ও কর্মজীবী মানুষের চলাচলে ব্যস্ত থাকে। এ কারণে এমন ঘটনায় বড় ধরনের দুর্ঘটনা বা ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। ফায়ার সার্ভিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান, আগুন লাগার খবর পেয়ে নিকটস্থ স্টেশন থেকে দুই ইউনিট দ্রুত ঘটনাস্থলে যায়, যাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়। দমকল কর্মীরা আগুনের তীব্রতা কমিয়ে বাসের ভেতরে সম্ভাব্য দাহ্য পদার্থ বা বিস্ফোরণের উৎস আছে কি না, তা পর্যবেক্ষণ করেন।

প্রাথমিক তদন্তে আগুন লাগার সম্ভাব্য উৎস সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বাসে যান্ত্রিক ত্রুটি, বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট বা ইঞ্জিনের অতিরিক্ত উত্তাপ—এসব বিষয় সাধারণত এমন ঘটনার সম্ভাব্য কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়। ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তারা সম্ভাব্য প্রতিটি দিক পর্যালোচনা করে প্রকৃত কারণ নির্ধারণে কাজ করছেন। তবে বিস্তারিত তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত আগুনের উৎস বা ঘটনার প্রকৃতি সম্পর্কে নিশ্চিত তথ্য প্রদান সম্ভব নয়।

ঘটনার সময় বাসের ভেতরে যাত্রী বা চালক-সহকারীদের কেউ ছিলেন কি না, সে বিষয়ে তাৎক্ষণিক নিশ্চিত হওয়া যায়নি। দমকল বাহিনীর কর্মকর্তারা জানান, এখন পর্যন্ত হতাহতের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে যাত্রীবাহী গণপরিবহনে আগুন লাগার মতো ঘটনা সাধারণত বড় ধরনের মানবিক বিপর্যয়ের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। এ কারণে এমন ঘটনা তদন্ত করে ভবিষ্যতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিতে পারে।

মহাখালী এলাকায় সম্প্রতি যানবাহনে আগুন লাগা বা যান্ত্রিক ত্রুটিজনিত দুর্ঘটনা কয়েকবার ঘটেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, রাজধানীতে গণপরিবহনের বড় অংশই দীর্ঘদিন ধরে রক্ষণাবেক্ষণের ঘাটতিতে রয়েছে, ফলে এ ধরনের দুর্ঘটনা হঠাৎ বাড়ছে। বাসে আগুন লাগার ঘটনায় যাত্রী নিরাপত্তার বিষয়টি আবারও আলোচনায় এসেছে। শহরের বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী যানবাহনে নিয়মিত পরিদর্শন, যন্ত্রাংশ নবায়ন এবং নিরাপত্তা মানদণ্ড নিশ্চিত না হলে এমন ঘটনা বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এই ঘটনার পর সড়কে সাময়িক যানজট সৃষ্টি হলেও পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। আগুন নেভানোর পর বাসটি নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে সড়ক চলাচল সচল রাখা হয়। ফায়ার সার্ভিস ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো ঘটনাটি তদন্তের জন্য আরও তথ্য সংগ্রহ করছে। প্রয়োজন হলে বাসের মালিকপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট যান্ত্রিক বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণ করা হবে।

আগুন লাগার মতো ঘটনা জননিরাপত্তার সাথে সরাসরি সম্পর্কিত হওয়ায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ভবিষ্যতে গণপরিবহনের নিরাপত্তা জোরদারে অতিরিক্ত পদক্ষেপ নিতে পারে। নিয়মিত পরিদর্শন, চালক-সহকারীদের প্রশিক্ষণ এবং যান্ত্রিক রক্ষণাবেক্ষণের মান উন্নত করলে এমন দুর্ঘটনা প্রতিরোধে ভূমিকা রাখতে পারে। এছাড়া জরুরি পরিস্থিতিতে যাত্রীদের দ্রুত নিরাপদভাবে বের করে আনার ব্যবস্থা নিশ্চিত করাও গুরুত্বপূর্ণ।

ঘটনার বিস্তারিত তদন্ত শেষে সংশ্লিষ্ট দপ্তর আনুষ্ঠানিক প্রতিবেদন প্রকাশ করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তদন্তে আগুন লাগার প্রকৃত কারণ, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এবং ভবিষ্যতের নিরাপত্তা ব্যবস্থার সুপারিশ অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।

রাজধানী