জেলা প্রতিনিধি
পঞ্চগড়ে শীতের তীব্রতা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত কয়েকদিন ধরে ভোর থেকে সকাল পর্যন্ত হিমেল হাওয়া ও উচ্চ আর্দ্রতার প্রভাবে জেলার বিভিন্ন এলাকায় শীতের উপস্থিতি স্পষ্টভাবে অনুভূত হচ্ছে। তাপমাত্রা দ্রুত নিচে নামা এবং দিন–রাতের তাপমাত্রার তারতম্য স্থানীয়দের মধ্যে বাড়তি শীতের অনুভূতি সৃষ্টি করেছে।
রবিবার ভোরে তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারে রেকর্ড করা সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসে আর্দ্রতার মাত্রা ছিল ৯৭ শতাংশ। যদিও ঘন কুয়াশা দেখা যায়নি, তবে হালকা কুয়াশার পর সকালে সূর্যের আলো মিললেও প্রচণ্ড আর্দ্রতা ও ঠান্ডা বাতাস শরীরে অতিরিক্ত শীতের অনুভূতি তৈরি করে। আবহাওয়ার এ পরিবর্তন গত কয়েকদিনের তুলনায় আরও তীব্র, কারণ শনিবার একই সময়ে তেঁতুলিয়ায় তাপমাত্রা ছিল ১৪ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং বাতাসে আর্দ্রতা ছিল ৯৯ শতাংশ।
জেলার বিভিন্ন স্থানে—দেবীগঞ্জ, বোদা, আটোয়ারী ও পঞ্চগড় সদরে—ভোররাত থেকেই ঠান্ডা বাতাস বইতে শুরু করেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, তাপমাত্রা হঠাৎ কমে যাওয়ার ফলে শীতের প্রকোপ বেড়েছে এবং দৈনন্দিন কাজে বাড়তি শীতের প্রভাব অনুভূত হচ্ছে। বিশেষ করে সকালে মাঠে কাজ করতে যাওয়া কৃষক, দিনমজুর ও নিম্ন আয়ের মানুষেরা শীতের বাড়তি তীব্রতায় অধিক ভোগান্তির মুখে পড়ছেন।
আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উত্তরাঞ্চলে শীতের আগমন প্রতি বছর নভেম্বরের শেষ দিক থেকেই প্রকট হতে থাকে। এ অঞ্চলটি দেশের সবচেয়ে উত্তরের সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় শীত মৌসুমে এখানে তাপমাত্রা দ্রুত কমে যায়। গত কয়েক বছরে তেঁতুলিয়া দেশে সর্বনিম্ন তাপমাত্রার স্থান হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে, এবং এ অঞ্চলেই শীত মৌসুমের শুরুতে তাপমাত্রার বড় পরিবর্তন প্রথমে লক্ষ্য করা যায়।
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের আবহাওয়াবিদ জিতেন্দ্রনাথ রায় জানান, গত এক সপ্তাহ ধরে তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশপাশে ছিল। তবে রবিবারের তাপমাত্রা এ সীমার নিচে নেমেছে, যা শীতের তীব্রতা বৃদ্ধির ইঙ্গিত দিচ্ছে। তার মতে, আগামী সপ্তাহে তাপমাত্রা আরও কমতে পারে এবং ডিসেম্বরের শুরুতেই উত্তরাঞ্চলে শীত পুরোপুরি জেঁকে বসবে।
বিশেষজ্ঞদের অভিমত অনুযায়ী, তাপমাত্রা আরও কমলে জেলার দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর ওপর এর প্রভাব আরও তীব্র হতে পারে। শীতের মৌসুমে এসব এলাকায় শীতবস্ত্রের ঘাটতি সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বাড়ায়। স্থানীয় প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো সাধারণত ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে শীতবস্ত্র বিতরণ কার্যক্রম শুরু করে থাকে; তবে তাপমাত্রা দ্রুত কমতে থাকায় আগাম প্রস্তুতির প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।
জেলার কৃষি কার্যক্রমেও শীতের প্রভাব পড়তে পারে। ভোরের কুয়াশা, উচ্চ আর্দ্রতা ও নিম্ন তাপমাত্রার কারণে বিভিন্ন শীতকালীন ফসলের ওপর রোগবালাইয়ের ঝুঁকি বাড়ে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সাধারণত এই সময় কৃষকদের জমির আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ, সেচ ব্যবস্থাপনা ও রোগ প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেয়। তাপমাত্রা আরও কমলে এসব পদক্ষেপের গুরুত্ব বাড়বে বলে কৃষি কর্মকর্তারা মনে করছেন।
পঞ্চগড়ের সামগ্রিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, শীত মৌসুম এবার স্বাভাবিকের তুলনায় কিছুটা আগে ও তীব্রভাবে শুরু হতে পারে। তাপমাত্রা কমার প্রবণতা অব্যাহত থাকলে জেলার সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা, কৃষিকাজ ও পরিবহন ব্যবস্থায় শীতের প্রভাব আরও প্রশস্ত হতে পারে। ফলে স্থানীয় প্রশাসন, স্বাস্থ্য খাত ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর আগাম প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি হয়ে উঠছে।
শীতের তীব্রতা নিয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পর্যবেক্ষণ ও বিভিন্ন কার্যকরী পরামর্শ আগামী দিনগুলোতে পরিস্থিতি মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। একই সঙ্গে স্থানীয়দের জন্য প্রয়োজন শীত মোকাবিলায় ব্যক্তিগত সতর্কতা এবং প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ। শীতের অগ্রগতি আরও বাড়ার সম্ভাবনায় জেলা জুড়ে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে প্রশাসন পর্যন্ত সবাই এখন তাপমাত্রার পরবর্তী পরিবর্তনের দিকে নজর রাখছে।


