আন্তর্জাতিক ডেস্ক
চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিং এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক, বাণিজ্য ইস্যু এবং তাইওয়ান প্রসঙ্গ নিয়ে সোমবার টেলিফোনে আলোচনা করেছেন। বেইজিংয়ের সরকারি সূত্রে জানা যায়, এ আলাপের মূল লক্ষ্য ছিল দুই দেশের মধ্যে চলমান কূটনৈতিক যোগাযোগ বজায় রাখা এবং সাম্প্রতিক বৈঠকের ধারাবাহিকতায় সহযোগিতার অগ্রগতি নির্ধারণ করা।
আলোচনায় চীনা প্রেসিডেন্ট দুই দেশের সম্পর্ককে স্থিতিশীল ও গঠনমূলক রাখতে উভয় পক্ষের দায়িত্বশীল ভূমিকার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি উল্লেখ করেন যে, বর্তমান বৈশ্বিক বাস্তবতায় চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কার্যকর যোগাযোগ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে স্থিতিশীলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। টেলিফোনালাপটি অনুষ্ঠিত হয় গত মাসে দক্ষিণ কোরিয়ায় দুই নেতার সামনাসামনি বৈঠকের পর, যেখানে দীর্ঘদিন ধরে চলমান বাণিজ্যিক উত্তেজনা প্রশমনের বিষয়ে তারা অগ্রগতি অর্জনের চেষ্টা করেছিলেন।
শি চিনপিং আলোচনায় পুনর্ব্যক্ত করেন যে, আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে তাইওয়ানের চীনে প্রত্যাবর্তনের প্রশ্নটি বেইজিংয়ের দীর্ঘদিনের অবস্থান। তিনি এই অবস্থানকে যুদ্ধ-পরবর্তী বৈশ্বিক কাঠামোর স্বীকৃত বাস্তবতা হিসেবে তুলে ধরেন। চীন বহু বছর ধরে তাইওয়ানকে নিজের অংশ বলে দাবি করে আসছে এবং দ্বীপটির ওপর সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজন হলে শক্তি ব্যবহারের সম্ভাবনার কথাও বারবার জানিয়েছে। ফলে এই ইস্যু যুক্তরাষ্ট্র-চীন সম্পর্কের অন্যতম সংবেদনশীল অক্ষ হিসেবে বিবেচিত হয়।
দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ব্যাপক উত্তেজনার মুখোমুখি হয়েছে। দুর্লভ খনিজের বাজার, কৃষিপণ্য আমদানি, প্রযুক্তি সংক্রান্ত সীমাবদ্ধতা এবং কর কাঠামো—এসব বিষয় ঘিরে দীর্ঘমেয়াদি টানাপড়েন আন্তর্জাতিক বাজারকে অস্থির করেছে। সরবরাহ শৃঙ্খল ব্যাহত হওয়ায় বৈশ্বিক বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে, যার অভিঘাত বিভিন্ন দেশের অর্থনীতিতে অনুভূত হয়। এসব প্রেক্ষাপটে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক যোগাযোগ স্থিতিশীল হওয়া আন্তর্জাতিক বাণিজ্য পরিবেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি বার্তা বহন করে।
গত অক্টোবর দুই নেতা প্রথমবারের মতো ২০১৯ সালের পর সামনাসামনি সাক্ষাৎ করেন। ওই বৈঠককে দুই দেশের সম্পর্কের নতুন অধ্যায়ের সূচনা হিসেবে পর্যবেক্ষণ করা হয়। সেখানে দুই পক্ষই উত্তেজনা প্রশমনে আগ্রহ প্রকাশ করে এবং বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও কৌশলগত ইস্যুতে ভবিষ্যত সহযোগিতার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করে। দক্ষিণ কোরিয়ায় অনুষ্ঠিত তাদের সর্বশেষ বৈঠকটিকে উভয় পক্ষই ইতিবাচক হিসেবে মূল্যায়ন করে, যা পরবর্তী কূটনৈতিক যোগাযোগের গতি নির্ধারণে সহায়ক ভূমিকা রাখে।
চীনা সূত্র জানায়, সোমবারের আলোচনায় শি চিনপিং দক্ষিণ কোরিয়ার বৈঠককে দুই দেশের জন্য দিকনির্দেশনামূলক বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, বৈঠকটি চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের বৃহৎ কাঠামোকে স্থির গতিতে এগিয়ে নিতে সহায়তা করেছে। এছাড়া, বৈঠকের পর থেকে কূটনৈতিক যোগাযোগ নিয়মিত হচ্ছে এবং বিভিন্ন স্তরে সংলাপের সুযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা সম্পর্ককে আরও স্থিতিশীল করেছে।
আলোচনায় আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা, বিশেষ করে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের নিরাপত্তার গুরুত্ব নিয়েও মতবিনিময় হয়। দক্ষিণ চীন সাগর এবং তাইওয়ান প্রণালীকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা কমাতে দুই দেশের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়। ফলে এ ধরনের উচ্চ পর্যায়ের আলোচনা আঞ্চলিক উত্তেজনা কমানোর পাশাপাশি বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক ভারসাম্য রক্ষায় সহায়ক হতে পারে।
চীন ও যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের বৃহত্তম দুটি অর্থনীতি, এবং তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে। সাম্প্রতিক বৈঠক ও আলোচনাগুলোকে অনেকেই মনে করছেন কূটনৈতিক অচলাবস্থা কাটিয়ে উঠার সুযোগ হিসেবে। বিশেষ করে বাণিজ্যনীতি, প্রযুক্তিগত প্রতিযোগিতা এবং কৌশলগত নিরাপত্তা—এসব বিষয় দুই দেশের সম্পর্কের ভবিষ্যৎ পথ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
টেলিফোনালাপের পর উভয় দেশ আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনার অগ্রগতির ব্যাপারে কোনো স্বাধীন বিবৃতি না দিলেও, কূটনৈতিক যোগাযোগ বৃদ্ধির বিষয়টি আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও বাণিজ্যে আগামী মাসগুলোতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।


