জাতীয় ডেস্ক
রাজধানীর পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে সরকারি প্লট বরাদ্দকে কেন্দ্র করে ক্ষমতার অপব্যবহার ও অনিয়মের অভিযোগে দায়ের করা দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানা এবং অন্যান্য অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণার জন্য আগামী ১ ডিসেম্বর তারিখ নির্ধারণ করেছেন আদালত। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে এই দিন ধার্য করেন।
মামলার নথিপত্র অনুযায়ী, পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের একটি প্লট বরাদ্দকে কেন্দ্র করে অভিযোগের সূত্রপাত। দুদকের অভিযোগ অনুসারে, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং অনিয়মের মাধ্যমে প্রকল্পটির ১০ কাঠা জমির একটি প্লট বরাদ্দ নেওয়া হয়েছে বলে তদন্তে উঠে আসে। এই অভিযোগ ভিত্তিতে দুদকের উপপরিচালক সালাহউদ্দিন গত ১৩ জানুয়ারি মামলাটি দায়ের করেন। প্রাথমিক তদন্ত শেষে ১৫ জনকে আসামি করা হয় এবং পরবর্তী তদন্তে আরও দুইজনকে যুক্ত করা হয়।
তদন্ত শেষে দুদকের সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া গত ১০ মার্চ মোট ১৭ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অভিযোগপত্রে উল্লেখ আছে যে, বরাদ্দ প্রক্রিয়ার বিভিন্ন পর্যায়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অনিয়ম, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং প্রভাব খাটানোর অভিযোগ পাওয়া যায়। এতে সরকারি জমি বরাদ্দের ক্ষেত্রে নির্ধারিত নীতিমালা লঙ্ঘন হয়েছিল কি না, সে বিষয়টিকেও গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হয়।
এই মামলার অন্যান্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ও রাজউকের বিভিন্ন পর্যায়ের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তারা। এদের মধ্যে আছেন প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম সরকার, সিনিয়র সহকারী সচিব পুরবী গোলদার, অতিরিক্ত সচিব অলিউল্লাহ, সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যানের পিএ আনিছুর রহমান মিঞা, সাবেক সদস্য মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, তন্ময় দাস, মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, মেজর (অব.) সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী, সাবেক পরিচালক নুরুল ইসলাম, সহকারী পরিচালক মাজহারুল ইসলাম এবং উপপরিচালক নায়েব আলী শরীফ। পরে তদন্তে আরও যুক্ত হন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-১ মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন এবং সাবেক প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ।
গত ৩১ জুলাই আদালত তিনটি পৃথক মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর নির্দেশ দেন। মামলার বিচারিক কার্যক্রমে মোট ৩২ জন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য প্রদান করেন। সাক্ষ্যগ্রহণের সময় বরাদ্দ প্রক্রিয়ার বিভিন্ন ধাপ, সংশ্লিষ্ট নথি, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের ভূমিকা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের ধরন নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা আসে। এসব সাক্ষ্য ও নথিপত্রের ভিত্তিতেই আদালত যুক্তিতর্ক পর্ব শেষে রায় ঘোষণার দিন নির্ধারণ করেছেন।
আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, সরকারি জমি বরাদ্দ, বিশেষ করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অধীনে পরিচালিত বৃহৎ প্রকল্পগুলোর ক্ষেত্রে নীতিমালা অনুসরণের গুরুত্ব অত্যন্ত বেশি। এ ধরনের মামলায় আদালতের রায় ভবিষ্যতে সরকারি সম্পদ ব্যবস্থাপনায় দায়বদ্ধতা ও স্বচ্ছতার কাঠামোকে আরও সুসংহত করতে ভূমিকা রাখবে বলে তাদের ধারণা। মামলার রায় সরকারি উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের বিচারপ্রক্রিয়া কতটা কার্যকরভাবে সম্পন্ন হতে পারে, সে বিষয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ নজির স্থাপন করতে পারে বলেও পর্যবেক্ষক মহল মনে করে।
আগামী ১ ডিসেম্বর রায় ঘোষণার মধ্য দিয়ে মামলার বিচারিক প্রক্রিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় সম্পন্ন হবে। রায় অনুযায়ী অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট আইনের বিধান অনুসারে দণ্ডাদেশ দেওয়া হবে। অন্যদিকে অভিযোগ প্রমাণিত না হলে আসামিদের অব্যাহতি দেওয়া হবে। রায় ঘোষণার পর মামলার পরবর্তী আইনগত পদক্ষেপ—যেমন আপিল বা পুনর্বিবেচনার আবেদনের সম্ভাবনাও সৃষ্টি হতে পারে।
এ মামলাটি সরকারি সম্পদ ব্যবস্থাপনা, নীতিমালা অনুসরণ এবং ক্ষমতার সীমারেখা বিষয়ে একটি বড় ধরনের বিচারিক প্রক্রিয়া হিসেবে গণ্য হচ্ছে। রায় ঘোষণার পর এটি প্রশাসনিক কাঠামো, নীতি প্রয়োগ এবং ভবিষ্যতের প্রকল্প বরাদ্দ পদ্ধতির ওপর প্রভাব ফেলতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট মহলের ধারণা।


