বাংলাদেশ নৌপরিবহন খাতের আন্তর্জাতিক অগ্রগতি তুলে ধরলেন উপদেষ্টা

বাংলাদেশ নৌপরিবহন খাতের আন্তর্জাতিক অগ্রগতি তুলে ধরলেন উপদেষ্টা

জাতীয় ডেস্ক

লন্ডন, সোমবার: আন্তর্জাতিক নৌ সংস্থা (আইএমও)-এর ৩৪তম সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিয়ে বাংলাদেশের নৌপরিবহন সেক্টরে অর্জিত অগ্রগতি এবং বৈশ্বিক ভূমিকা তুলে ধরেছেন নৌপরিবহন ও শ্রম ও কর্মসংস্থান বিষয়ক উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। অধিবেশনটি লন্ডনে অনুষ্ঠিত হয় এবং এতে বিশ্বের ১৭৬টি সদস্য দেশের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

অধিবেশনের মূল এজেন্ডার মধ্যে ছিল আগামী দুই বছরের জন্য ৪০ সদস্যের আইএমও কাউন্সিল নির্বাচনের আয়োজন। বাংলাদেশ ‘সি’ ক্যাটাগরিতে প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। নৌপরিবহন উপদেষ্টা নির্বাচনের প্রার্থীতা ঘোষণা করে ১৭৫টি সদস্য দেশের প্রতিনিধিদের বাংলাদেশের পক্ষে ভোট প্রদানের আহ্বান জানান।

ড. এম সাখাওয়াত হোসেন তার বক্তব্যে বাংলাদেশের শিপ রিসাইক্লিং, শিপ বিল্ডিং এবং নৌবাণিজ্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ধারাবাহিক সাফল্য তুলে ধরেন। তিনি বিশ্বমানের নৌ প্রশিক্ষণ এবং দ্বীপ রাষ্ট্রসহ স্বল্পোন্নত দেশের নাবিকদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রতিবছর ১০টি বৃত্তি প্রদানের উদ্যোগের কথাও উল্লেখ করেন।

উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ সমুদ্রনির্ভর একটি জাতি। গত এক দশকে উপকূলীয় অর্থনীতি থেকে উদীয়মান মেরিটাইম জাতিতে রূপান্তরের মধ্য দিয়ে দেশের নৌখাত আধুনিকায়ন, উদ্ভাবন ও টেকসই উন্নয়নের পথে এগিয়ে গেছে। তিনি চট্টগ্রাম, মোংলা ও পায়রা বন্দরের দ্রুত ডিজিটালাইজেশন ও অবকাঠামো উন্নয়নের চিত্রও তুলে ধরেন। বিশেষভাবে নির্মাণাধীন মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দরের উল্লেখ করে জানান, এটি দক্ষিণ এশিয়াকে বৈশ্বিক বাণিজ্য নেটওয়ার্কের সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত করবে।

উপদেষ্টা আরও বলেন, বাংলাদেশের ২১ হাজারের বেশি নাবিক বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নৌবহরে দক্ষতা, শৃঙ্খলা ও নির্ভরযোগ্যতার সঙ্গে কাজ করে দেশের মর্যাদা বৃদ্ধি করেছে। নাবিকরা শুধু কর্মী নয়, সমুদ্রপথে দেশের দূত হিসেবেও কাজ করছে। তিনি আইএমও-এর সঙ্গে বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদী ও গঠনমূলক অংশীদারিত্বের কথাও উল্লেখ করেন এবং দেশের সক্রিয় অংশগ্রহণে বৈশ্বিক সামুদ্রিক বিধিমালা বাস্তবায়নে অবদান তুলে ধরেন।

ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, বাংলাদেশের নৌখাতের উন্নয়নে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ‘থ্রি জিরো’ দর্শন নির্দেশক। এছাড়া, বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ এবং ব্লু ইকোনমি রোডম্যাপ দেশের সামুদ্রিক অগ্রযাত্রার শক্ত ভিত্তি হিসেবে কাজ করছে। বাংলাদেশ আইএমও কনভেনশন পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়ন করছে, বন্দর অবকাঠামো আধুনিকায়ন করছে এবং সার্চ অ্যান্ড রেসকিউ সক্ষমতা ও মারপোল-কমপ্লেইন পোর্ট রিসিপিশন ফ্যাসিলিটি সম্প্রসারণ করছে।

উপদেষ্টা আইএমও কাউন্সিলে পুনর্নির্বাচিত হলে উন্নয়নশীল সামুদ্রিক দেশগুলোর জন্য প্রযুক্তি ও অর্থায়নে ন্যায্য প্রবেশাধিকার নিশ্চিতকরণ, নাবিক ও মেরিটাইম সেক্টরে প্রশিক্ষণ ও সক্ষমতা বৃদ্ধি, জলবায়ু-সহনশীলতা ও লো-কার্বন শিপিং সমর্থন এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক আইএমও গঠনে নেতৃত্ব দেওয়ার পরিকল্পনা জানিয়েছেন।

অধিবেশন চলাকালে ড. এম সাখাওয়াত হোসেন পাকিস্তানের মেরিটাইম বিষয়ক মন্ত্রী এবং বেলিজের জনসেবা, জ্বালানি ও লজিস্টিকস মন্ত্রীর সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেন। পাকিস্তানের সঙ্গে বৈঠকে চট্টগ্রাম ও করাচি বন্দরের নৌবাণিজ্য সম্প্রসারণ, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন ও পাকিস্তান ন্যাশনাল শিপিং কর্পোরেশনের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন বিষয় আলোচনা হয়। উভয়পক্ষ একে অপরের দেশে সফরের আমন্ত্রণ দেন।

বেলিজের মন্ত্রী মিশেল চেবাটের সঙ্গে বৈঠকে জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াকরণ, নৌবাণিজ্য এবং মানবসম্পদ উন্নয়নের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হয়। বাংলাদেশের চট্টগ্রাম মেরিন একাডেমিতে ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্রের মেরিন ক্যাডেটদের জন্য উন্মুক্ত বৃত্তির সুযোগের বিষয়েও উপদেষ্টা আলোচনা করেন। মিশেল চেবাটে এই সুযোগের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং ভবিষ্যতে সহযোগিতার আগ্রহ ব্যক্ত করেন।

অধিবেশন জুড়ে বাংলাদেশ তার প্রার্থিতা এবং বৈশ্বিক নৌপরিবহনে ইতিবাচক ভূমিকা তুলে ধরে বিভিন্ন অনুষ্ঠান, আলোচনা ও নেটওয়ার্কিং সেশনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছে। লন্ডনে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার আবিদা ইসলাম ও নৌপরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমডোর মোঃ শফিউল বারীসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন।

জাতীয় শীর্ষ সংবাদ