যুক্তরাষ্ট্রের ইউক্রেন শান্তি পরিকল্পনা ২৮ দফা থেকে কমিয়ে ১৯ দফায় সংশোধন

যুক্তরাষ্ট্রের ইউক্রেন শান্তি পরিকল্পনা ২৮ দফা থেকে কমিয়ে ১৯ দফায় সংশোধন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

যুক্তরাষ্ট্র প্রণীত ইউক্রেন শান্তি পরিকল্পনার খসড়া ২৮ দফা থেকে কমিয়ে ১৯ দফায় আনা হয়েছে। সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র, ইউক্রেন এবং ইউরোপীয় দেশগুলোর প্রতিনিধিদের মধ্যে আলোচনা শেষে প্রস্তাবিত এই সংশোধন করা হয়। সংশোধিত প্রস্তাবটি এখনো চূড়ান্ত নয়, তবে বৈঠকে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো একে গঠনমূলক অগ্রগতি হিসেবে বিবেচনা করেছেন।

জেনেভার আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ইউক্রেনীয় প্রতিনিধিরা জানান, আলোচনার মাধ্যমে কয়েকটি বিতর্কিত দফা বাদ দেওয়া হয়েছে। আগের খসড়ার মোট ২৮ দফা থেকে ৯টি দফা অপসারণ করা হয়। তবে কোন দফাগুলো বাদ দেওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে অংশগ্রহণকারীরা আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি। আলোচনায় অংশ নেওয়া পক্ষগুলো কেবল জানিয়েছে যে, সংশোধন প্রক্রিয়া এখনো চলমান এবং আরও কিছু বিষয়ে সমঝোতা প্রয়োজন।

প্রাথমিক খসড়া প্রকাশের পর থেকেই কিয়েভ ও কিছু ইউরোপীয় রাষ্ট্র পরিকল্পনার কয়েকটি বিধান নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল। বিশেষ করে রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরোপিত নিষেধাজ্ঞা এবং জব্দ করা রুশ সম্পদ ভবিষ্যতে কীভাবে ব্যবস্থাপনা করা হবে—এ বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের এখতিয়ার স্পষ্ট না থাকায় কিছু দেশ আপত্তি তোলে। সংশোধন প্রক্রিয়ায় এসব বিষয় পুনর্বিবেচনার প্রয়োজনীয়তা উঠে আসে।

ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার স্টাব পরিকল্পনাটি থেকে দফা কমানোকে ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখলেও তিনি উল্লেখ করেন, সামনে এখনো জটিল কয়েকটি বিষয় আছে যেগুলোর সমাধান ছাড়া পরিকল্পনাটি বাস্তবায়নযোগ্য হবে না। আলোচনায় উপস্থিত ইউরোপীয় প্রতিনিধিরাও একই ধরনের অবস্থান জানান, বিশেষত নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনার ভবিষ্যৎ কাঠামো নিয়ে।

শান্তি পরিকল্পনার প্রস্তাবিত খসড়ায় উল্লেখ ছিল যে, যুদ্ধবিরতির বিনিময়ে ইউক্রেনকে রাশিয়ার কাছে অতিরিক্ত কিছু অঞ্চল ছাড়তে হতে পারে। পাশাপাশি ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর আকার সীমিত করার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত ছিল। আরও উল্লেখ ছিল যে, ইউক্রেনকে ন্যাটোতে যোগদানের আনুষ্ঠানিক প্রচেষ্টা স্থগিত বা পরিত্যাগ করতে হতে পারে। এসব প্রস্তাব ইউক্রেনের অভ্যন্তরে এবং এর পশ্চিমা মিত্রদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য উদ্বেগ সৃষ্টি করে। তাঁদের মতে, সামরিক সক্ষমতা সীমিত করা হলে দেশটি ভবিষ্যতে সম্ভাব্য আক্রমণের ঝুঁকিতে পড়বে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত পরিকল্পনা সম্পর্কে দেশটির শীর্ষ নেতৃত্ব জানিয়েছে যে, এটি কোনো চূড়ান্ত প্রস্তাব নয়। পক্ষগুলোর আলোচনার ভিত্তিতে রূপান্তর ও সংশোধনের সুযোগ রয়েছে। আলোচনার পর যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের পক্ষ থেকে এক যৌথ বিবৃতিতে জানানো হয় যে, বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হয়েছে। তবুও, যুদ্ধবিরতির শর্ত, নিরাপত্তা নিশ্চয়তা এবং রাজনৈতিক সমাধানের কাঠামো নিয়ে আরও আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে প্রস্তাবিত পরিকল্পনার ওপর আনুষ্ঠানিক জবাব প্রদান করতে বলা হয়েছে। এর আগে এ বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে তিনি বলেন, দেশটির সামনে এখন কঠিন সিদ্ধান্ত রয়েছে—রাষ্ট্রের মর্যাদা রক্ষার ঝুঁকি নেবে কি না, নাকি গুরুত্বপূর্ণ এক আন্তর্জাতিক মিত্রকে দূরে ঠেলে দেওয়ার ঝুঁকি গ্রহণ করবে। এই অবস্থান পরিকল্পনা সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক জটিলতাকে আরও স্পষ্ট করে।

অন্যদিকে, নয়টি ইউরোপীয় দেশ, জাপান, কানাডা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের কয়েকজন শীর্ষ প্রতিনিধি একটি যৌথ বিবৃতি দিয়ে পরিকল্পনার কিছু দফা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাঁদের মতে, ইউক্রেনের সামরিক শক্তি সীমিত করার প্রস্তাব দেশটির সার্বিক নিরাপত্তাকে দুর্বল করতে পারে। এই অবস্থান তুলে ধরে তাঁরা জানান, শান্তির জন্য যেকোনো সমাধানে ইউক্রেনের দীর্ঘমেয়াদি প্রতিরক্ষা সক্ষমতা অক্ষুণ্ণ রাখার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

সাড়ে তিন বছরের বেশি সময় ধরে চলমান রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে এক গভীর সংকট সৃষ্টি করেছে। এই যুদ্ধ বন্ধে বিভিন্ন পক্ষের উদ্যোগের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তাবিত ২৮ দফার এই পরিকল্পনাটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক প্রচেষ্টা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছিল। জেনেভার বৈঠকে দফা কমিয়ে ১৯ এ আনা—উভয় পক্ষের মধ্যে আলোচনার অগ্রগতি নির্দেশ করলেও—চূড়ান্ত সমাধান কতটা বাস্তবায়নযোগ্য হবে, সে বিষয়ে এখনো বহু প্রশ্ন রয়ে গেছে। আগামী দিনগুলোতে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর অবস্থান এবং কিয়েভের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া—পরিকল্পনার ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

আন্তর্জাতিক