লক্ষ্মীপুরে চাঁদা বিরোধে ব্যবসায়ী খুন

লক্ষ্মীপুরে চাঁদা বিরোধে ব্যবসায়ী খুন

জেলা প্রতিনিধি

লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে দাবিকৃত চাঁদা পরিশোধ না করার জেরে মো. ইউসুফ হোসেনের (৩৮) ছুরিকাঘাতে আনোয়ার হোসেন নামে এক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। এই ঘটনা মঙ্গলবার সকাল ১০টায় উপজেলার ৯নং ভোলাকোট ইউনিয়নের সাহারপাড়া গ্রামের আনোয়ার হোসেনের চা দোকানে সংঘটিত হয়।

স্থানীয়রা জানায়, ভোলাকোট ইউনিয়নের যুবদলের কর্মী এবং এলাকায় পরিচিত সন্ত্রাসী হিসেবে খ্যাত ইউসুফ হোসেন দীর্ঘদিন ধরে আনোয়ার হোসেনের কাছে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করছিলেন। আনোয়ার এ চাঁদা দিতে সব সময় অপারগতা প্রকাশ করতেন। মঙ্গলবার সকাল ১০টায় দাবিকৃত চাঁদার টাকা নিয়ে তাদের মধ্যে কথাকাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে ক্ষিপ্ত হয়ে ইউসুফ আনোয়ারের বুকে ও পিঠে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যান। পরে আনোয়ারকে রামগঞ্জ সরকারি হাসপাতালে নেয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

রামগঞ্জ উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক কবির হোসেন জানান, ইউসুফ যুবদলের একজন কর্মী এবং উপজেলা পর্যায়ের বিভিন্ন প্রোগ্রামে তাকে অংশগ্রহণ করতে দেখা গেছে। তবে এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে রাজনৈতিক সংযোগ রয়েছে কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়।

রামগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ আব্দুল বারী বলেন, “দাবিকৃত চাঁদা পরিশোধ না করায় বাগবিতণ্ডার একপর্যায়ে ইউসুফ ছুরিকাঘাতে আনোয়ারকে হত্যা করে। আমরা লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে প্রেরণ করেছি। থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে এবং অভিযুক্তকে ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।”

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, নিহত আনোয়ার হোসেন দীর্ঘদিন ধরে সাহারপাড়া গ্রামে চা ও মুদি ব্যবসা পরিচালনা করতেন। এই হত্যাকাণ্ডে স্থানীয় জনগণের মধ্যে উদ্বেগ ও আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এর ফলে এলাকার সাধারণ ব্যবসায়ী ও দোকানদাররা চাঁদা দাবির শিকার হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।

নিহতের পরিবার জানিয়েছে, ইউসুফ দীর্ঘদিন ধরে ধারাবাহিকভাবে চাঁদা দাবি করছিলেন। আগে তারা থানায় বিষয়টি জানানোর চেষ্টা করেছেন, কিন্তু ঘটনার পূর্বে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এই হত্যাকাণ্ড সামাজিক ও আইনগতভাবে এলাকায় অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে।

লক্ষ্মীপুরে চাঁদা সংক্রান্ত সংঘর্ষ এবং হত্যা মামলার ঘটনা নতুন নয়। অতীতে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এ ধরনের চাঁদা দাবির অভিযোগের কারণে সংঘাত ও খুনের ঘটনা ঘটেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে পুলিশি তৎপরতা ও স্থানীয় প্রশাসনের সমন্বিত উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ।

প্রাথমিকভাবে পুলিশ স্থানীয় সিসিটিভি ফুটেজ এবং প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ সংগ্রহ করেছে। অভিযুক্ত ইউসুফ হোসেনের অবস্থান শনাক্ত করতে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। মামলার তদন্ত শেষ হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এই হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষিতে স্থানীয় প্রশাসন এবং পুলিশ সতর্ক অবস্থানে আছে, যাতে ভবিষ্যতে এমন ধরনের সংঘাতের পুনরাবৃত্তি না ঘটে। এছাড়া, এলাকার ব্যবসায়ী ও সাধারণ জনগণকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্থানীয় পর্যায়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হচ্ছে।

সারাদেশ