জাতীয় ডেস্ক
বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার সূচনা হয়েছে। ঢাকায় নিযুক্ত নবনিযুক্ত ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত জঁ-মার্ক সেরে-চারলে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে জানান যে বাংলাদেশ একটি ঐতিহাসিক নির্বাচনের পথে অগ্রসর হচ্ছে। মঙ্গলবার রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এ সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে উভয় পক্ষ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা করেন।
সাক্ষাৎকালে রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশ এমন এক সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, যখন একটি ইতিহাস সৃষ্টিকারী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। তার মতে, এ সময়টি দুই দেশের অংশীদারত্ব আরও জোরদার করার জন্য উপযুক্ত। তিনি জানান, ফ্রান্স বাংলাদেশের সঙ্গে গণতন্ত্র, উন্নয়ন সহযোগিতা এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে কাজ করতে আগ্রহী। রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য অনুযায়ী, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে প্রায় ১৫ লাখ ফরাসি নাগরিকের উপস্থিতি ফ্রান্সের জন্য এ অঞ্চলের গুরুত্বকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে, যা দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় তিন শতাংশ।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস রাষ্ট্রদূতের এই মূল্যায়নকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়, যেখানে শান্তিপূর্ণ ও বিশ্বাসযোগ্য জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে। তিনি রাষ্ট্রদূতকে জানান যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাজনৈতিক পরিবেশ স্থিতিশীল রাখা, নির্বাচন ব্যবস্থায় আস্থা পুনরুদ্ধার এবং প্রশাসনিক কাঠামোতে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনতে কাজ করছে। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এ ধরনের আন্তঃসাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সহযোগিতা দুই দেশের পরস্পর বোঝাপড়াকে আরও গভীর করবে।
দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় রাষ্ট্রদূত সেরে-চারলে আসন্ন নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ এবং প্রক্রিয়া সম্পর্কে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি উল্লেখ করেন যে নির্বাচনকালীন সময়ে বিভিন্ন দেশে ভুল তথ্য ছড়িয়ে রাজনৈতিক বিভাজন সৃষ্টি করার প্রচেষ্টা দেখা গেছে। এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ যাতে নির্বাচনী প্রচারণা এবং নির্বাচন ব্যবস্থায় তথ্যসমৃদ্ধ ও সহনশীল পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারে, সেজন্য অভিজ্ঞতা বিনিময়ের ক্ষেত্রেও ফ্রান্স প্রস্তুত বলে তিনি জানান। রাষ্ট্রদূতের মতে, সুশৃঙ্খল গণতান্ত্রিক চর্চা এবং তথ্যের সঠিক ব্যবস্থাপনা নির্বাচনকে আরও বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে পারে।
এ আলোচনায় অর্থনীতি ও উন্নয়ন সহযোগিতার প্রসঙ্গও উঠে আসে। রাষ্ট্রদূত জানান, বাংলাদেশ এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের পথে যে অগ্রগতি অর্জন করেছে, তা ফ্রান্স উচ্চভাবে মূল্যায়ন করে। তিনি জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় সহযোগিতা, টেকসই উন্নয়ন উদ্যোগ, এবং মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রে যৌথভাবে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। বিশেষ করে জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে বাংলাদেশের প্রয়োজনে সমর্থন বাড়ানোর প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি। রাষ্ট্রদূত মনে করেন, জলবায়ু অভিযোজন ও নিঃসরণ কমানোর প্রকল্পে ফরাসি প্রযুক্তি এবং অভিজ্ঞতা বাংলাদেশকে উল্লেখযোগ্যভাবে সহায়তা করতে পারে।
ড. ইউনূস ফ্রান্সকে দীর্ঘদিনের নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে অভিহিত করে বলেন, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রয়াস, মানবাধিকার সুরক্ষা এবং জলবায়ু কার্যক্রমের মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলোতে দেশটির সমর্থন অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি জানান, আগামী নির্বাচনকে সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক করতে সরকার প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করছে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করছে।
উভয় পক্ষের আলোচনায় আঞ্চলিক সহযোগিতা, নিরাপত্তা কাঠামো এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে অবাধ ও নৌ-স্বাধীনতা নিশ্চিত করার বিষয়ও গুরুত্ব পায়। রাষ্ট্রদূত বলেন, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা, বাণিজ্য প্রবাহ ও নীতিগত সহযোগিতার দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ অঞ্চলে বাংলাদেশ একটি কৌশলগত অবস্থানে রয়েছে, যা দুই দেশের সহযোগিতার ক্ষেত্রকে আরও প্রসারিত করতে পারে।
সাক্ষাৎ শেষে উভয় পক্ষই ভবিষ্যৎ সহযোগিতাকে আরও সুদৃঢ় করার আশা ব্যক্ত করেন। তারা জানান যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক অব্যাহতভাবে উন্নত করার পাশাপাশি আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অগ্রগতি ও স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে পারস্পরিক যোগাযোগ অব্যাহত থাকবে।


