জাতীয় ডেস্ক
রাজধানীর কড়াইল বস্তিতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে বহু ঘরবাড়ি পুড়ে শতাধিক পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছেন। মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) রাতে প্রকাশিত এক সরকারিভাবে প্রচারিত বার্তায় তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে উদ্ধার, ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রম দ্রুততর করার নির্দেশ প্রদান করেন।
বার্তায় প্রধান উপদেষ্টা জানান, অগ্নিকাণ্ডে যেসব পরিবার তাদের একমাত্র বাসস্থান হারিয়েছেন, তাদের দুর্দশা জাতির জন্য গভীর বেদনার। তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে সরকার প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহায়তা নিশ্চিত করবে এবং জরুরি মানবিক সহায়তা দ্রুত সরবরাহের উদ্যোগ ইতোমধ্যে নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে তিনি অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধানে একটি সম্পূর্ণ তদন্ত পরিচালনার নির্দেশ দেন, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কার্যকর নীতিমালা ও কাঠামোগত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়।
ফায়ার সার্ভিসের তথ্যমতে, মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে কড়াইল বস্তির ভেতরে হঠাৎ আগুনের সূত্রপাত ঘটে। বস্তির ভেতরে ঘরগুলো বাঁশ, টিন ও অন্যান্য দাহ্য উপকরণে নির্মিত হওয়ায় আগুন দ্রুত চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। প্রাথমিকভাবে আগুনের উৎস সম্পর্কে নিশ্চিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি, তবে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো সম্ভাব্য সব কারণ খতিয়ে দেখছে। আগুন লাগার পরপরই বস্তির ভেতরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং স্থানীয় বাসিন্দারা নিজেরা প্রাথমিকভাবে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালান।
ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তর জানিয়েছে, খবর পাওয়ার পর কাছাকাছি বিভিন্ন স্টেশন থেকে মোট ২০টি ইউনিট ঘটনাস্থলের উদ্দেশে রওনা হয়। তবে সরু রাস্তা, যানজট এবং বস্তির ভেতরে মানুষের ভিড়ের কারণে ইউনিটগুলো দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে পারেনি। প্রথম দলটির পৌঁছাতে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ মিনিট সময় লেগে যায়, যা আগুনের বিস্তৃতি নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রাথমিক পর্যায়ে বাধা সৃষ্টি করে। রাত ১০টা ৩৫ মিনিটে দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আসে।
অগ্নিকাণ্ডে ঠিক কতটি ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা নিরূপণের কাজ চলছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, শতাধিক ঘর সম্পূর্ণ বা আংশিক পুড়ে গেছে এবং বিপুলসংখ্যক পরিবার তাদের সমস্ত সম্পদ হারিয়েছে। অনেক পরিবার শুধু পোশাক-পরিচ্ছদ নিয়েই নিরাপদ স্থানে সরে যেতে পেরেছে। ক্ষতিগ্রস্তরা রাতে আশ্রয়স্বরূপ নিকটবর্তী বিদ্যালয়, খোলা মাঠ ও অস্থায়ী শেডে অবস্থান নেন। তাদের জন্য খাবার, পানি ও চিকিৎসাসহ জরুরি সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার কাজ চলছে।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণে সমন্বিত জরিপ পরিচালনা করা হচ্ছে। বস্তির ঘনবসতি, অপরিকল্পিত নির্মাণ এবং পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা না থাকায় এ ধরনের ঝুঁকি দীর্ঘদিন ধরেই বিদ্যমান। রাজধানীর বস্তিগুলোতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা প্রায়শই দেখা যায়, যা মানবিক ক্ষতির পাশাপাশি সামাজিক ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা বাড়িয়ে দেয়। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিয়মিত পরিদর্শন, অগ্নিনির্বাপণ প্রশিক্ষণ, বিকল্প প্রবেশপথ এবং পর্যাপ্ত সরঞ্জাম স্থাপন জরুরি।
সরকারি সংস্থাগুলোর পাশাপাশি বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে ত্রাণ কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছে। আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসার জন্য নিকটবর্তী হাসপাতালগুলোতে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। প্রশাসন জানায়, ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে এবং বস্তিতে বসবাসরত মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় কাঠামোগত উন্নয়ন বিবেচনায় আনা হবে।
অগ্নিকাণ্ডের কারণ উদ্ঘাটনে ফায়ার সার্ভিস ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সংস্থা যৌথভাবে তদন্ত শুরু করেছে। তদন্তে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ভবিষ্যৎ ঝুঁকি মোকাবিলায় যথাযথ নির্দেশনা প্রদান করা হবে। সরকার জানিয়েছে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং বস্তি এলাকায় অগ্নি-ঝুঁকি কমাতে প্রয়োজনীয় নীতিগত সংস্কার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা হবে।


