জাতীয় ডেস্ক
বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। সর্বশেষ চিকিৎসকদের মূল্যায়নে তার শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে শ্বাসকষ্ট এবং ফুসফুসে সংক্রমণজনিত জটিলতার কারণে তাকে কেবিনে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখে চিকিৎসা দেওয়া অব্যাহত রয়েছে।
মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) রাতে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. মোহাম্মদ আল মামুন জানান, চিকিৎসা শুরুর পর তার অবস্থায় আগের তুলনায় কিছুটা অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে। তিনি বলেন, ফুসফুসে সংক্রমণের বিষয়টি চিকিৎসকদের নিয়ন্ত্রিত পর্যবেক্ষণে রয়েছে এবং প্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিকসহ অন্যান্য থেরাপি চালু আছে। মেডিকেল বোর্ড সার্বক্ষণিকভাবে অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছে।
চিকিৎসক দলের আগের তথ্য অনুযায়ী, সোমবার রাতে খালেদা জিয়ার হৃদযন্ত্র ও ফুসফুসে পূর্ব-existing সমস্যার সঙ্গে নতুন সংক্রমণ যুক্ত হওয়ায় তার শ্বাসকষ্ট তীব্র হয়ে ওঠে। পরিস্থিতি বিবেচনায় মেডিকেল বোর্ড তাকে দ্রুত নিবিড় পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থায় রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। হাসপাতালে পৌঁছানোর পর তাৎক্ষণিকভাবে তার বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পন্ন হয় এবং শ্বাসকষ্ট কমানোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
চিকিৎসাসংক্রান্ত সূত্রগুলো জানায়, খালেদা জিয়ার বুকে পাওয়া সংক্রমণ তার ফুসফুস পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে আগে থেকেই থাকা হৃদরোগ আরও জটিল হয় এবং শ্বাসপ্রশ্বাসে ব্যাঘাত তৈরি করে। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনতে এবং শ্বাসকষ্ট কমাতে চিকিৎসকরা বিভিন্ন ধাপের চিকিৎসা প্রয়োগ করছেন। হাসপাতালের অভ্যন্তরে বিশেষায়িত দলের সদস্যরা তার চিকিৎসা পরিচালনা করছেন।
দলীয় সূত্র জানায়, লন্ডনে অবস্থান করা বড় ছেলে তারেক রহমান ও পুত্রবধূ ডা. জুবাইদা রহমান নিয়মিতভাবে চিকিৎসকদের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখছেন এবং খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার সর্বশেষ অগ্রগতির খবর নিচ্ছেন। ঢাকায় তার পাশে রয়েছেন প্রয়াত ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী সৈয়দা শামিলা রহমান, যিনি চিকিৎসা-সংক্রান্ত সিদ্ধান্তে পরিবারের পক্ষ থেকে উপস্থিত থাকছেন।
মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শে গত রোববার রাতে খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দেশে ফেরার পর তিনি নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার অংশ হিসেবে হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিলেন। এর আগে চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি উন্নত চিকিৎসার উদ্দেশ্যে তিনি লন্ডনে যান এবং সেখানে ১১৭ দিন অবস্থান শেষে ৬ মে ঢাকায় ফেরেন। দেশে ফিরে তিনি বিভিন্ন সময় স্বাস্থ্য জটিলতার কারণে হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করেন।
দলের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়ার দ্রুত সুস্থতার জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া কামনা করা হয়েছে। রাজনৈতিক অঙ্গনেও তার শারীরিক অবস্থার অগ্রগতি নিয়ে ঘনিষ্ঠভাবে নজর রাখা হচ্ছে। বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন এবং নিয়মিত খোঁজখবর নিচ্ছেন।
এদিন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দলের চেয়ারপারসনের সুস্থতা কামনায় একটি বার্তা প্রকাশ করেন। এতে তিনি খালেদা জিয়ার দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন এবং দলের নেতাকর্মীদের শান্ত ও সচেতন থাকার আহ্বান জানান। বার্তাটি নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে আলোচনার সৃষ্টি করে এবং অনেকে সেখানে তার দ্রুত সুস্থতার প্রত্যাশা জানান।
চিকিৎসাসংক্রান্ত বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বর্তমান জটিলতা নিয়ন্ত্রণে আনতে আরও সময় লাগতে পারে। সংক্রমণের মাত্রা এবং হৃদযন্ত্রের পূর্ববর্তী সমস্যার প্রভাব বিবেচনায় চিকিৎসা প্রক্রিয়া সতর্কতার সঙ্গে পরিচালিত হচ্ছে। চিকিৎসকরা বলছেন, সংক্রমণ স্থিতিশীল পর্যায়ে এলে তার সামগ্রিক অবস্থার আরও উন্নতি হতে পারে। তবে এ ধরনের জটিলতার চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদি হওয়ায় কয়েকদিন নিবিড় পর্যবেক্ষণ প্রয়োজন হতে পারে।
বর্তমানে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অগ্রগতি এবং চিকিৎসার বিষয়টি সংবেদনশীল হওয়ায় মেডিকেল বোর্ড নিয়মিত মূল্যায়ন করছে। আগামী কয়েক দিন চিকিৎসা প্রক্রিয়ার অগ্রগতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।


