জেলা প্রতিনিধি
গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় জাতীয় গ্রিড লাইনের রক্ষণাবেক্ষণ কাজের কারণে আগামী ২৭ ও ২৯ নভেম্বর নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। রক্ষণাবেক্ষণ কার্যক্রম নিরাপদ ও নির্বিঘ্নভাবে সম্পন্ন করতে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হবে।
গাজীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১-এর কালীগঞ্জ জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মো. আক্তার হোসেন নিশ্চিত করেন যে নির্ধারিত দুই দিনে কালীগঞ্জ, সেভেন রিংস এবং জাংগালিয়া এলাকায় রক্ষণাবেক্ষণ কার্যক্রম পরিচালিত হবে। তিনি বলেন, জাতীয় গ্রিড লাইনে নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী রক্ষণাবেক্ষণ কাজ পরিচালনার প্রয়োজনীয়তা থাকায় সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোতে সাময়িক বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নতা অনিবার্য।
রক্ষণাবেক্ষণের অংশ হিসেবে গ্রিড লাইনের বিভিন্ন উপকরণ পরীক্ষা, লাইন পরিষ্কারকরণ, ঝুঁকিপূর্ণ অংশ মেরামত ও প্রয়োজনীয় প্রতিস্থাপন কাজ করা হবে। কর্তৃপক্ষ জানায়, এসব কাজ সম্পন্ন হওয়ায় ভবিষ্যতে বিদ্যুৎ সেবা আরও স্থিতিশীল হবে এবং আকস্মিক বিভ্রাট কমে আসবে। জাতীয় গ্রিডের নিরবচ্ছিন্ন কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে নির্দিষ্ট সময় পরপর এসব রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়ে থাকে। এ ধরনের কার্যক্রম দেশের বিভিন্ন এলাকায় পর্যায়ক্রমে পরিচালিত হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ গ্রাহকদের অসুবিধা কমাতে কিছু বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও জানিয়েছে। কালীগঞ্জ উপজেলা সদর, কালীগঞ্জ থানা এলাকা এবং প্রোপার ফিডার—এই তিনটি এলাকায় বিকল্প ব্যবস্থা চালু রেখে আংশিক বিদ্যুৎ সরবরাহ সচল রাখার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এতে জরুরি সেবা ও সাধারণ গ্রাহকদের প্রয়োজনীয় কার্যক্রমে বাধা কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকার কারণে ঘরোয়া ও বাণিজ্যিক গ্রাহকদের দৈনন্দিন কাজে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটতে পারে। বিশেষ করে স্থানীয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, কারখানা ও ক্ষুদ্র শিল্পের উৎপাদন কার্যক্রমে প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে রক্ষণাবেক্ষণ কাজ শেষ হলে গ্রাহকরা উন্নতমানের ও স্থিতিশীল সেবা পাবেন বলে কর্তৃপক্ষ জানান। বিদ্যুৎ বিভ্রাট জনজীবনে সাময়িক অসুবিধা সৃষ্টি করলেও দীর্ঘমেয়াদে এটি গ্রাহক স্বার্থরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
রক্ষণাবেক্ষণকাজ চলাকালীন সময়ে গ্রাহকদের সতর্ক থাকারও আহ্বান জানানো হয়েছে। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় লাইনের ওপর কাজ হওয়ায় স্থানীয়দের সংশ্লিষ্ট এলাকায় অপ্রয়োজনীয়ভাবে অবস্থান না করার অনুরোধ করে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। একই সঙ্গে বাসাবাড়ি, দোকানপাট ও শিল্পকারখানায় বিদ্যুৎসংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতি নিরাপদে বন্ধ রাখা এবং হঠাৎ বিদ্যুৎ ফিরে এলে যেন বৈদ্যুতিক যন্ত্রে ক্ষতি না হয় সেজন্য প্রয়োজনীয় সতর্কতা গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
গাজীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১-এর কালীগঞ্জ জোনাল অফিস সাময়িক ভোগান্তির জন্য গ্রাহকদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করে জানিয়েছে যে রক্ষণাবেক্ষণ কার্যক্রমটি ভবিষ্যতে আরও নিরবচ্ছিন্ন ও মানসম্পন্ন বিদ্যুৎ সেবা নিশ্চিত করতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত দুই দিনে গ্রাহকদের সহযোগিতা কামনা করেছে এবং প্রয়োজনীয় তথ্য যথাসময়ে জানিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে।
বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থার নিরবচ্ছিন্নতা ও নিরাপত্তা বজায় রাখতে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা এখন সময়ের দাবি। গ্রিডের কোনো অংশে ত্রুটি দেখা দিলে তা বৃহৎ এলাকার বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় প্রভাব ফেলতে পারে। তাই দীর্ঘমেয়াদি স্থায়িত্ব বজায় রাখতে এবং অনাকাঙ্ক্ষিত বিভ্রাট এড়াতে পরিকল্পিতভাবে এসব রক্ষণাবেক্ষণ পরিচালনা করা হয়। গাজীপুরের কালীগঞ্জে অনুষ্ঠিতব্য এই রক্ষণাবেক্ষণ কার্যক্রম স্থানীয় বিদ্যুৎ ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করতে ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রক্ষণাবেক্ষণ শেষ হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিকভাবে পুনরায় চালু হবে। কোনো ধরনের প্রযুক্তিগত সমস্যা দেখা দিলে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গ্রাহকদের অনুরোধ করা হয়েছে নির্ধারিত সময়ের আগে বা পরে বিদ্যুৎ সংযোগে কোনো সমস্যা দেখা দিলে স্থানীয় জোনাল অফিসে যোগাযোগ করার জন্য।
সাময়িক বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নতা সত্ত্বেও এই রক্ষণাবেক্ষণ কার্যক্রম ভবিষ্যতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সুবিধা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। গাজীপুরের কালীগঞ্জে বসবাসকারী মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা, শিক্ষা কার্যক্রম, ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্প উৎপাদনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জাতীয় গ্রিডের এই পরিকল্পিত রক্ষণাবেক্ষণ কার্যক্রমের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সেবার মানোন্নয়ন আরও ত্বরান্বিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।


