জাতিসংঘের মহাসচিব নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শুরু

জাতিসংঘের মহাসচিব নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শুরু

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

জাতিসংঘের নতুন মহাসচিব নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া মঙ্গলবার শুরু হয়েছে। নিরাপত্তা পরিষদ ও সাধারণ পরিষদের সভাপতির যৌথ চিঠির মাধ্যমে সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে প্রার্থীদের মনোনয়নের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে এবং আসন্ন কয়েক মাসের নির্বাচনী ধাপের নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, এখন পর্যন্ত মহাসচিবের পদে কোনো নারী অধিষ্ঠিত হননি। নারী ও পুরুষদের জন্য উর্ধ্বতন সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী পদে সমান সুযোগ নিশ্চিত করার গুরুত্ব তুলে ধরে সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে নারী প্রার্থীদের মনোনয়নের জন্য বিশেষভাবে উৎসাহিত করা হয়েছে। পাশাপাশি, জাতিসংঘের বিভিন্ন অঞ্চলের বৈচিত্র্য রক্ষার গুরুত্বও চিহ্নিত করা হয়েছে।

বর্তমান মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের স্থলাভিষিক্ত নির্বাচিত হবেন আগামী বছর, এবং নতুন মহাসচিবের পাঁচ বছরের মেয়াদ শুরু হবে ১ জানুয়ারি, ২০২৭ থেকে। জাতিসংঘ সংবিধানের ৯৭ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী মহাসচিবের নিয়োগ সাধারণ পরিষদের মাধ্যমে নিরাপত্তা পরিষদের সুপারিশের ভিত্তিতে সম্পন্ন হয়।

এখন পর্যন্ত নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়ার জন্য কয়েকজন প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছেন। এর মধ্যে চিলির প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি মিশেল বাসেলেট, কস্তারিকার প্রাক্তন সহ-রাষ্ট্রপতি রেবেকা গ্রিনস্প্যান এবং আর্জেন্টিনার কূটনীতিক রাফায়েল গ্রসী অন্তর্ভুক্ত, যিনি বর্তমানে আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (IAEA)-এর মহাপরিচালক পদে নিয়োজিত আছেন।

নির্বাচনী প্রক্রিয়ার পরবর্তী ধাপগুলোতে প্রার্থীদের যোগ্যতা মূল্যায়ন, নিরাপত্তা পরিষদের সুপারিশ, এবং সাধারণ পরিষদের অনুমোদন অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এই ধাপে প্রতিটি সদস্য রাষ্ট্রের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচটি স্থায়ী সদস্যের সমর্থন ছাড়া প্রার্থীর সুপারিশ কার্যকর করা সম্ভব নয়।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই নির্বাচনের মাধ্যমে জাতিসংঘের নেতৃত্বে নতুন দিকনির্দেশনা নির্ধারিত হবে এবং আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে অংশগ্রহণ ও সমতার নতুন অধ্যায় সূচিত হবে। মহাসচিবের পদে নারী প্রার্থীর অংশগ্রহণ বাড়ানো হলে বৈশ্বিক নেতৃত্বে লিঙ্গ সমতার প্রসার ঘটতে পারে এবং এটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে সমন্বয় ও অন্তর্ভুক্তির দৃষ্টিকোণ থেকে গুরুত্বপূর্ণ একটি উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হবে।

আগামী কয়েক মাসে প্রার্থীদের মনোনয়ন, প্রাথমিক নির্বাচন ও নিরাপত্তা পরিষদের সুপারিশ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর সাধারণ পরিষদ তাদের সমর্থন জানাবে। নতুন মহাসচিবের দায়িত্ব গ্রহণের ফলে জাতিসংঘের নীতি নির্ধারণ, আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় নতুন প্রভাব এবং বৈশ্বিক কূটনীতিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা রয়েছে।

নির্বাচনের ফলাফলের ভিত্তিতে ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক সংঘাত সমাধান, মানবাধিকার রক্ষা, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর কল্যাণ নিশ্চিতকরণে জাতিসংঘের কার্যক্রমে নতুন প্রভাব পরিলক্ষিত হতে পারে। এই প্রক্রিয়া আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে সহযোগিতা ও অংশগ্রহণ বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

আন্তর্জাতিক