অর্থনীতি ডেস্ক
রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর জানান, লেনদেনে স্বচ্ছতা বৃদ্ধি ও কার্যকারিতা নিশ্চিত করার জন্য ডিজিটালীকরণ অপরিহার্য। তিনি বলেন, “আন্তঃলেনদেন ব্যবস্থা বর্তমান আর্থিক ব্যবস্থায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এবং আগামীতে এর বিকল্প নেই। এটি লেনদেনে স্বচ্ছতা বৃদ্ধি করবে, দুর্নীতি হ্রাস করবে এবং রাজস্ব আদায়কে আরও কার্যকর করবে।”
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও গেটস ফাউন্ডেশনের মোজোলুপের মধ্যে আন্তঃলেনদেন প্ল্যাটফর্ম প্রতিষ্ঠার বিষয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। নিরাপত্তাজনিত কারণে চুক্তিটি ভার্চুয়ালি সম্পন্ন করা হয়। চুক্তির আওতায় মোজোলুপের প্ল্যাটফর্মের নাম নির্ধারণ করা হয়েছে “ইনক্লুসিভ ইনস্ট্যান্ট পেমেন্ট সিস্টেম (আইআইএসপি)”।
গভর্নর বলেন, নতুন ক্যাশলেস ব্যবস্থায় গ্রাহক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে লেনদেন সম্পূর্ণ ডিজিটাল হবে। ব্যাংক ও এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলো এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে রিয়েল-টাইমে অর্থ স্থানান্তর করতে পারবে। এর ফলে আর্থিক লেনদেনে সময় ও খরচ কমবে এবং অর্থনৈতিক কার্যক্রম আরও দ্রুত এবং স্বচ্ছ হবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ধরনের ডিজিটাল আন্তঃলেনদেন ব্যবস্থা দেশের আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকে বৃদ্ধি করবে। বর্তমানে গ্রামীণ ও শহরাঞ্চলের বহু মানুষ ব্যাংকিং সেবার বাইরে থাকলেও, ক্যাশলেস প্ল্যাটফর্ম চালু হলে তারা সহজে আর্থিক লেনদেনে যুক্ত হতে পারবে। একই সঙ্গে এটি বীমা ও অন্যান্য আর্থিক পরিষেবার সম্প্রসারণে সহায়ক হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিকল্পনা অনুযায়ী, আইআইএসপি প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ব্যাংক ও এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে লেনদেন স্বয়ংক্রিয় ও নিরাপদভাবে পরিচালিত হবে। এতে ব্যাংক ও ফিনটেক খাতের তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ আরও সহজ হবে। দেশের রাজস্ব ব্যবস্থাপনা ও সরকারি অনুদান ও ভর্তুকি বিতরণেও নতুন সিস্টেমটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, এই উদ্যোগ দেশের নগদ নির্ভরতা কমিয়ে ডিজিটাল অর্থনীতির প্রসার ঘটাবে। রাজস্ব সংগ্রহ বৃদ্ধি, ব্যয় কার্যকারিতা উন্নয়ন এবং লেনদেনে স্বচ্ছতা বৃদ্ধির মাধ্যমে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাকে আরও শক্তিশালী করার সম্ভাবনা তৈরি হবে। এছাড়া, ব্যাংকিং খাতে প্রতারণা ও অনিয়ম কমানোও নতুন ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য।
বাংলাদেশ ব্যাংক এবং গেটস ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে বাস্তবায়িত এই প্ল্যাটফর্ম দেশের ডিজিটাল অর্থনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। আগামী জুলাই থেকে সব আর্থিক প্রতিষ্ঠানে এর কার্যক্রম শুরু হলে দেশের অর্থনৈতিক লেনদেনের ধারা পরিবর্তনের পাশাপাশি গ্রাহক সুবিধাও উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে।


