ভূমিকম্প পরবর্তী আফটার শকের সময়কাল ও ঝুঁকি নিয়ে বিশদ তথ্য

ভূমিকম্প পরবর্তী আফটার শকের সময়কাল ও ঝুঁকি নিয়ে বিশদ তথ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক

সম্প্রতি দেশে রিখটার স্কেলে ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্পের পর আফটার শক বা পরাঘাতের সম্ভাবনা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আফটার শক মূল ভূমিকম্পের পর একই অঞ্চল বা আশপাশে সৃষ্ট ছোট কিন্তু অনুভূতিযোগ্য কম্পন, যা মূল কম্পনের ফলে ভূ-ত্বকে সৃষ্ট অতিরিক্ত চাপকে ধীরে ধীরে মুক্ত করে অঞ্চলটিকে স্থিতিশীল অবস্থায় ফিরিয়ে আনে। তবে দুর্বল বা ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের জন্য সামান্য পরাঘাতও ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।

আফটার শকের সময়কাল ও প্রকৃতি মূল ভূমিকম্পের মাত্রা ও ভূ-ত্বকের কাঠিন্যের ওপর নির্ভর করে। সাধারণভাবে এসব পরাঘাত কয়েক ঘণ্টা থেকে কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা জানান, প্রাথমিক ৭২ ঘণ্টার মধ্যে পরাঘাতের সংখ্যা ও তীব্রতা সবচেয়ে বেশি থাকে। প্রধান ভূমিকম্প যদি ৭ দশমিক শূন্য বা তার বেশি মাত্রার হয়, তবে আফটার শক কয়েক মাস বা কখনও–কখনও কয়েক বছর পর্যন্ত চলতে পারে। এলাকার কম্পন স্বাভাবিক পর্যায়ে ফিরে আসার পরই আফটার শক শেষ হিসেবে ধরা হয়।

প্রথমিক তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে নরসিংদীকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়। এতে নরসিংদীর পাঁচজন, ঢাকার চারজন এবং গাজীপুরের একজনসহ মোট ১০ জনের প্রাণহানি ঘটে। বিভিন্ন এলাকায় ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতি লক্ষ্য করা গেছে।

ভূমিকম্প ও পরাঘাতের ঝুঁকি মোকাবেলায় বিশেষজ্ঞরা ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা, দুর্বল ভবন এবং দুর্ঘটনাপ্রবণ স্থানগুলোতে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিচ্ছেন। জরুরি সরঞ্জাম ও প্রাথমিক চিকিৎসা সরবরাহ নিশ্চিত করা, নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্র নির্ধারণ এবং স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় বাড়ানো আফটার শকের সময়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা আরও বলেন, ভূমিকম্পের পর জনগণকে অজানা স্থানে ঘোরাফেরা এড়িয়ে চলা, দুর্বল কাঠামোর কাছাকাছি না যাওয়া এবং সরকারি নিরাপত্তা নির্দেশনা মেনে চলা জরুরি। দীর্ঘমেয়াদি আফটার শকের সম্ভাবনা থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পুনর্গঠন ও জরুরি অবকাঠামো মেরামতের পরিকল্পনা ত্বরান্বিত করতে হবে।

আফটার শকের প্রকৃতি ও সময়কাল সম্পর্কে সর্বশেষ তথ্য পাওয়ার জন্য প্রযুক্তি ভিত্তিক বিশ্লেষণ এবং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের মতো আধুনিক সরঞ্জাম ব্যবহৃত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, এগুলো ভূমিকম্পের পরবর্তী ঝুঁকি মূল্যায়নে সহায়ক ভূমিকা রাখে এবং যথাযথ প্রস্তুতি গ্রহণে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরবরাহ করে।

এ ধরনের সতর্কতা ও পরিকল্পনা না নেওয়া হলে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পুনরায় প্রাণহানি ও অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। তাই স্থানীয় প্রশাসন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা এবং জনগণকে একসাথে কাজ করে প্রাথমিক সতর্কতা ও পুনর্বাসন কার্যক্রম ত্বরান্বিত করতে হবে।

ভূমিকম্প ও আফটার শকের বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি, জরুরি সরঞ্জামের প্রস্তুতি এবং নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্র ব্যবস্থাপনাই বর্তমানে দেশের প্রাথমিক প্রতিরোধ কৌশল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

পরিবেশ