রাজনীতি ডেস্ক
ঠাকুরগাঁও থেকে সৈয়দপুরের উদ্দেশে যাত্রাপথে দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার রানীরবন্দর এলাকার সুইহারীবাজারে অনুষ্ঠিত এক পথসভায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলের বিভিন্ন অবস্থান তুলে ধরেছেন। বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় অনুষ্ঠিত ওই পথসভায় তিনি দলীয় প্রার্থীদের সমর্থনে ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানান এবং বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে বক্তব্য উপস্থাপন করেন।
পথসভায় মির্জা ফখরুল বলেন, দলটি শান্তিপূর্ণ উপায়ে রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনার নীতি অনুসরণ করে এবং নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বজায় রাখতে চায়। তিনি দাবি করেন, বিএনপি নির্বাচনে ব্যাপক ভোটে বিজয় অর্জনের লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নেমেছে এবং দলীয় প্রতীকের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখতে হবে। এতে স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে ভবিষ্যৎ উন্নয়ন কার্যক্রম ত্বরান্বিত হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি জানান, বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দিনাজপুর-৪ আসন থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন এবং তিনি এই অঞ্চলে ব্যাপক জনসমর্থন পাচ্ছেন বলে দলের পক্ষ থেকে আশা করা হচ্ছে। পথসভায় দেওয়া বক্তব্যে মির্জা ফখরুল দলীয় নেত্রীর শারীরিক সুস্থতা ও রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে সমর্থকদের দোয়া ও সমর্থন কামনা করেন। পাশাপাশি তিনি উল্লেখ করেন, উত্তরাঞ্চলে উন্নয়ন পরিকল্পনা কার্যকর করতে নির্বাচনে বিজয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখা জরুরি। এ সময় তিনি দাবি করেন, একটি রাজনৈতিক দল বিভিন্ন মন্তব্য ও অবস্থানের মাধ্যমে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। এক দিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট অনুষ্ঠিত হলে দেশজুড়ে সহিংসতা ঘটবে—এ ধরনের মন্তব্যের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দেশে বর্তমানে এমন পরিস্থিতির কোনো পরিবেশ নেই। তিনি ১৯৭১ সালের ঘটনাবলীর প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বলেন, অতীতের রাজনৈতিক সহিংসতার অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এখন দেশের রাজনৈতিক পরিবেশকে শান্তিপূর্ণ রাখতে সব দলেরই দায়িত্ব রয়েছে।
দিনাজপুর-৪ আসনের ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মো. আখতারুজ্জামান মিয়ার প্রতি সমর্থন জানাতে মির্জা ফখরুল স্থানীয় ভোটারদের আহ্বান জানান। তিনি মনে করেন, এই আসনে দলীয় প্রার্থী নির্বাচিত হলে এলাকার অবকাঠামো, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষিখাতসহ বিভিন্ন উন্নয়নমুখী কার্যক্রম দ্রুত বাস্তবায়নের সুযোগ তৈরি হবে। উত্তরাঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে চলমান বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা জরুরি বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ দিনাজপুর-৪ আসনটি বহুদিন ধরে বিভিন্ন দলের প্রতিদ্বন্দ্বিতার কেন্দ্রস্থল। স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করেন, এবারও এই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে ঘনিষ্ঠ ও প্রতিযোগিতামূলক। এলাকার অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিবেশ নির্বাচনের ফলাফল দ্বারা সরাসরি প্রভাবিত হতে পারে। কৃষিনির্ভর এই অঞ্চলে ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন, পানি ব্যবস্থাপনা, স্থানীয় বাজারের আধুনিকীকরণ এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মানোন্নয়ন—এসব বিষয় ভোটারদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
এ ছাড়া পথসভায় বিভিন্ন সাংগঠনিক নেতারা উপস্থিত ছিলেন এবং দলের স্থানীয় কাঠামোর নেতারা দলীয় প্রার্থীর পক্ষে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান। নির্বাচনে সংগঠনের সক্রিয় ভূমিকা নিশ্চিত করতে স্থানীয় পর্যায় থেকে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সমন্বয়ের বিষয়টিও তারা গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরেন।
আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দিনাজপুরসহ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় রাজনৈতিক তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। মাঠপর্যায়ের কর্মীরা নির্বাচনী প্রচারণা জোরদার করতে বিভিন্ন কর্মসূচি পরিচালনা করছে। নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত সময়সূচি অনুযায়ী, নির্বাচন সামনে রেখে প্রার্থীরা এখন প্রচারণার শেষ পর্যায়ে আছেন। সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে স্থানীয় প্রশাসন নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে।
মির্জা ফখরুলের পথসভায় দেওয়া বক্তব্য উত্তরাঞ্চলে বিএনপির নির্বাচনী তৎপরতার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এবারের নির্বাচনে দিনাজপুরসহ পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোর রাজনৈতিক পরিস্থিতি জাতীয় রাজনীতিতেও প্রভাব ফেলতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। নির্বাচনী প্রচারণা আরও তীব্র হওয়ায় আগামী দিনে রাজনৈতিক পরিস্থিতি কোনদিকে অগ্রসর হবে, তা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন বিশ্লেষকেরা।


