সুনামগঞ্জ-২ আসনে জামায়াতপ্রার্থী শিশির মনিরের সরকারি সুবিধা না নেওয়ার ঘোষণা

সুনামগঞ্জ-২ আসনে জামায়াতপ্রার্থী শিশির মনিরের সরকারি সুবিধা না নেওয়ার ঘোষণা

বিশেষ প্রতিনিধি

সুনামগঞ্জ-২ আসনে জামায়াতে ইসলামী মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী ও সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত হতে পারলে কোনো ধরনের সরকারি সুবিধা গ্রহণ করবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি ২৫ নভেম্বর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে এ প্রতিশ্রুতি দেন। তার এই ঘোষণা স্থানীয় নির্বাচন পরিস্থিতিতে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে, কারণ সরকারি ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা প্রত্যাখ্যানের অঙ্গীকার সাধারণত রাজনৈতিক অঙ্গনে বিরল।

শিশির মনির তার বার্তায় ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারলে তিনি সংসদ সদস্য হিসেবে প্রাপ্ত যেকোনো বেনিফিট সম্পূর্ণভাবে জনগণের কল্যাণে ব্যবহার করবেন। তিনি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন, সরকার কর্তৃক প্রদত্ত ভাতা, অ্যালাউন্স, অনারিয়াম বা অন্য কোনো সুযোগ-সুবিধা তিনি ব্যক্তিগত বা পারিবারিক প্রয়োজনে ব্যবহার করবেন না। তার ভাষ্য অনুযায়ী, সরকারি বেনিফিট গ্রহণের পরিবর্তে সেই অর্থ তিনি সুনামগঞ্জ-২ আসনের উন্নয়ন, স্থানীয় মানুষের সেবামূলক কার্যক্রম এবং সামাজিক উদ্যোগে ব্যয় করতে চান।

আইনজীবী শিশির মনির তার দীর্ঘ পেশাগত জীবনের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে বলেন, জনস্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়ার মৌলিক নীতি থেকেই তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি বিশ্বাস করেন, নির্বাচিত প্রতিনিধিদের প্রতিটি সুবিধা জনগণের অর্থ থেকে আসে এবং সেই অর্থ জনগণের কাছেই ফিরে যাওয়া উচিত। তার এই অবস্থান ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক দায়বদ্ধতার একটি কাঠামো উপস্থাপন করে, যা তিনি নির্বাচিত হলে অনুসরণ করবেন বলে আশ্বাস দেন।

তার বিবৃতিতে তিনি আরও জানান, সংসদ সদস্যদের জন্য নির্ধারিত ট্যাক্স ফ্রি গাড়ির সুবিধাও ব্যবহার করবেন না। সাধারণত এ সুবিধা আইনপ্রণেতাদের জন্য নির্ধারিত হলেও, শিশির মনির মনে করেন জনসম্পৃক্ততা ও জবাবদিহিতা বজায় রাখার জন্য ব্যক্তিগত সুবিধা গ্রহণ থেকে বিরত থাকা জরুরি। তিনি বলেন, ব্যক্তিগত স্বার্থে কিংবা পারিবারিক প্রয়োজনে কোনো ধরনের সরকারি সুযোগ নেবেন না এবং প্রশাসনিক কাঠামোকে ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করবেন না।

এ ছাড়া তিনি প্রটোকল ব্যবহারের ক্ষেত্রেও কঠোর সীমাবদ্ধতার প্রতিশ্রুতি দেন। শিশির মনির জানান, সরকারি কাজ ছাড়া কোনো ধরনের প্রটোকল তিনি গ্রহণ করবেন না। এতে জনগণের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ বজায় থাকবে এবং সাধারণ নাগরিক হিসেবে তার অবস্থান জোরালো হবে বলে তিনি মনে করেন। তিনি আরও বলেন, নির্বাচিত হলে ঢাকায় বা সুনামগঞ্জে তার কর্মস্থল সব সময় সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।

তার বার্তায় পারিবারিক ও আত্মীয়স্বজনের বিষয়ে বিশেষ সতর্কতার কথাও উল্লেখ রয়েছে। তিনি প্রতিশ্রুতি দেন, পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয়দের কোনো প্রকার অবৈধ প্রভাব বিস্তার বা অপব্যবহার থেকে সম্পূর্ণভাবে বিরত রাখবেন। নির্বাচিত প্রতিনিধিদের পরিবারকে ঘিরে প্রভাব খাটানোর প্রবণতা প্রায়ই জনমনে উদ্বেগ সৃষ্টি করে; এ কারণে তিনি আগেভাগেই এ বিষয়ে সুস্পষ্ট প্রাতিষ্ঠানিক অবস্থান ঘোষণা করেছেন।

শিশির মনির বলেন, জনগণের প্রতি তার প্রতিশ্রুতি অটুট থাকবে এবং তিনি তার ঘোষণা থেকে বিচ্যুত হলে জবাবদিহিতা গ্রহণ করতে প্রস্তুত। নির্বাচনের আগে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তিনি ভোটারদের প্রতি আস্থা রাখার আহ্বান জানান। একই সঙ্গে তিনি সরকারি তহবিল ব্যবহারের ক্ষেত্রে কঠোর জবাবদিহিতার আশ্বাস দেন। তার ভাষ্য অনুযায়ী, সরকারি ফান্ডের প্রতিটি ব্যয়ের হিসাব জনগণের কাছে প্রকাশ করা হবে এবং যেকোনো অনিয়মের ক্ষেত্রে তিনি নিজেকে দায়বদ্ধ মনে করবেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত তার এ বিবৃতি নির্বাচনী প্রচারণার অংশ হলেও এতে নৈতিকতা ও স্বচ্ছতার ওপর যে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে, তা স্থানীয় ভোটারদের মধ্যে আলোচনা সৃষ্টি করেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এমন প্রতিশ্রুতি প্রার্থীদের মধ্যে প্রতিযোগিতামূলক নৈতিক অবস্থান তৈরি করতে পারে এবং নির্বাচনী আচরণবিধির বাস্তব প্রয়োগে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে।

সুনামগঞ্জ-২ আসনে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সক্রিয় রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে শিশির মনিরের ঘোষণা ভোটারদের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। ভবিষ্যতে তিনি নির্বাচিত হলে তার এই অঙ্গীকারগুলো বাস্তবে কতটুকু প্রতিফলিত হবে সে বিষয়ে স্থানীয়দের আগ্রহ তৈরি হয়েছে। তার বার্তায় যে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার কথা বলা হয়েছে, তা বাস্তবায়িত হলে স্থানীয় প্রশাসন, উন্নয়ন কার্যক্রম এবং জনগণের অংশগ্রহণমূলক প্রক্রিয়ায় উল্লেখযোগ্য ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

রাজনীতি