করাইল বস্তির অগ্নিকাণ্ড পরিদর্শনে জামায়াত আমিরের তদন্ত আহ্বান

করাইল বস্তির অগ্নিকাণ্ড পরিদর্শনে জামায়াত আমিরের তদন্ত আহ্বান

রাজনীতি ডেস্ক

রাজধানীর মহাখালীর করাইল বস্তিতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন ও ত্রাণ বিতরণ শেষে একের পর এক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় গভীরভাবে অনুসন্ধানের প্রয়োজনীয়তার কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীের আমির ডা. শফিকুর রহমান। মঙ্গলবার দিবাগত রাতে ত্রাণ সহায়তা কার্যক্রম শেষে তিনি এ আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে বারবার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। এসব ঘটনার প্রকৃত কারণ নির্ণয় করা জরুরি বলে তিনি মনে করেন। তার মতে, প্রাথমিকভাবে এসব দুর্ঘটনা আগুন লাগা কিংবা বিদ্যুত্‌-সম্পর্কিত ত্রুটির কারণে ঘটলেও ঘটনাগুলোর ঘনঘন পুনরাবৃত্তি সম্ভাব্য অন্যান্য কারণও পরীক্ষা করার প্রয়োজনীয়তা তৈরি করেছে। তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি প্রতিটি অগ্নিকাণ্ডের উৎস, ক্ষয়ক্ষতির ধরন এবং সম্ভাব্য ঝুঁকির বিষয়গুলো সুস্পষ্টভাবে যাচাই করার আহ্বান জানান।

করাইল বস্তি রাজধানীর বৃহত্তম বসতি এলাকাগুলোর একটি, যেখানে নিম্নআয়ের বিপুল সংখ্যক মানুষ বসবাস করেন। ঘনবসতিপূর্ণ কাঠামো, সরু গলি এবং অপর্যাপ্ত অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থার কারণে অতীতেও এ এলাকায় একাধিক অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। এসব ঘটনার ফলে বাস্তুহারা মানুষের সংখ্যা বাড়ে এবং মৌলিক প্রয়োজন মেটাতে নতুন করে সামর্থ্যহীনতা সৃষ্টি হয়। মঙ্গলবার রাতের অগ্নিকাণ্ডেও বহু পরিবার ঘরবাড়ি, আসবাবপত্র, পোশাক এবং প্রয়োজনীয় নথিপত্র হারিয়েছে।

ত্রাণ বিতরণ শেষে বক্তব্যে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য করতে তাদের সংগঠন সাধ্যমতো চেষ্টা করবে। তিনি জানান, অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তাৎক্ষণিক খাদ্য, পোশাক, বিশুদ্ধ পানি ও অস্থায়ী আশ্রয়ের প্রয়োজন রয়েছে। তিনি ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে সরকারি সহযোগিতা, সংস্থাগুলোর সমন্বিত উদ্যোগ এবং জরুরি ত্রাণ কার্যক্রমের প্রসারের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

রাজধানীর বস্তিগুলোতে অগ্নিকাণ্ডের পুনরাবৃত্তির বিষয়টি বিশেষজ্ঞদের কাছেও উদ্বেগের। নগর পরিকল্পনাবিদদের মতে, বস্তিগুলোতে সুনির্দিষ্ট নির্মাণবিধি না থাকা, বৈদ্যুতিক সংযোগে অনিয়ম, গ্যাস সংযোগের দুর্বলতা এবং অগ্নিনিরাপত্তা সরঞ্জামের অভাব বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি করে। এসব বিষয় সমাধান না হলে ভবিষ্যতেও এমন দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে তারা মনে করেন। ফলে প্রতিটি অগ্নিকাণ্ডের পর তাৎক্ষণিক ত্রাণ সহায়তার পাশাপাশি ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশ দূরীকরণ এবং দীর্ঘমেয়াদি প্রতিরোধমূলক পরিকল্পনা গ্রহণ করা জরুরি।

এ ছাড়া সামাজিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকেও বস্তিবাসীদের জন্য এমন অগ্নিকাণ্ড দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলে। অনেকে নিত্যদিনের উপার্জনের যন্ত্রপাতি হারান, শিশুরা শিক্ষা উপকরণ হারানোর ফলে পড়াশোনায় বিঘ্ন ঘটে, নারীরা নিরাপত্তাহীনতার মুখে পড়েন এবং পুরো পরিবারকে অস্থায়ী আশ্রয়ে থাকতে হয়। এসব কারণে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো নতুন করে দারিদ্র্যের চক্রে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর মতে, এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় জরুরি সহায়তার পাশাপাশি ভবিষ্যতের জন্য স্থায়ী পুনর্বাসন ব্যবস্থা প্রয়োজন।

করাইল বস্তির অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তদন্ত করে স্পষ্ট কারণ উদ্‌ঘাটনের দাবি বিভিন্ন সময় থেকেই উঠে আসছে। অতীতে বেশ কিছু ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশে বিলম্ব এবং সুপারিশ বাস্তবায়নের অগ্রগতি সীমিত থাকায় সমালোচনা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, প্রতিটি ঘটনায় সমন্বিত তদন্ত, দায় নির্ধারণ এবং সুপারিশ বাস্তবায়নের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করলে অগ্নিকাণ্ডের সংখ্যা ও ক্ষয়ক্ষতি কমানো সম্ভব।

ডা. শফিকুর রহমান চলমান পরিস্থিতিতে মানবিক সহায়তার গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে দ্রুত স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে সরকারি-বেসরকারি সব পক্ষের সমন্বিত উদ্যোগ দরকার। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধান এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা জোরদারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।

দেশের শহরাঞ্চলে বস্তিবাসীর সংখ্যা ক্রমবর্ধমান হওয়ায় অগ্নিকাণ্ডসহ বিভিন্ন দুর্যোগের ঝুঁকি বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এসব এলাকাকে নিরাপদ আবাসিক পরিবেশে রূপান্তরের জন্য জরুরি ভিত্তিতে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়ন প্রয়োজন।

করাইল বস্তির সর্বশেষ অগ্নিকাণ্ডের পর ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন, ক্ষয়ক্ষতির সঠিক হিসাব, এবং আগুন লাগার প্রকৃত কারণ নির্ণয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কার্যক্রম এখন নজরদারির মধ্যে রয়েছে।

রাজনীতি