অনলাইন ডেস্ক
এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ দেশে কমার পরিবর্তে বাড়ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে সাতজনের মৃত্যু হয়েছে এবং ৫৬৭ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) প্রকাশিত প্রতিবেদনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম জানিয়েছে, চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মোট ৩৭৭ জনের মৃত্যু রেকর্ড করা হয়েছে। এ বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৯২ হাজার ৭৮৪ জন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, এই বছর অক্টোবর মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সর্বাধিক ৮০ জনের মৃত্যু হয়েছিল। তবে নভেম্বর মাসে মৃত্যুর সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পেয়ে এ পর্যন্ত ৯৯ জনের মৃত্যু ঘটেছে, যা অক্টোবরের চেয়ে বেশি। এই তথ্য থেকে বোঝা যায়, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ডেঙ্গুর সংক্রমণ এখনও নিয়ন্ত্রণের বাইরে রয়েছে।
ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর নিয়মিতভাবে সরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোর প্রস্তুতি বৃদ্ধি করছে। হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় মেডিক্যাল ব্যবস্থা ও বেডের চাপ বেড়ে গেছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, রোগ নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় জনগণকে কৃত্রিম জলাশয় ও ফ্ল্যাটের পানির ট্যাংক পরিষ্কার রাখা, মশার বংশবৃদ্ধি রোধে সাবধানতা অবলম্বন করা এবং সময়মতো চিকিৎসা নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
পূর্ববর্তী বছরের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায়, ২০২৩ সালে ডেঙ্গুতে সর্বাধিক ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। সেই বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সর্বাধিক ১ হাজার ৭০৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল। চলতি বছরের পরিস্থিতি পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় কিছুটা কম হলেও, নভেম্বর মাসের মৃত্যুর হারের বৃদ্ধির কারণে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সতর্কতার প্রয়োজনীয়তা জোর দিয়েছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, ডেঙ্গু প্রতিরোধে দেশের সকল হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোর প্রস্তুতি জোরদার করা হচ্ছে। এছাড়া রোগীর অবস্থার উপর নির্ভর করে হাসপাতালে ভর্তি ও চিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য পর্যাপ্ত চিকিৎসা সরঞ্জাম, ওষুধ এবং জনবল রাখা হচ্ছে।
ডেঙ্গুর প্রকোপ কমাতে বিশেষজ্ঞরা জনগণকে নির্দেশ দিয়েছেন, নিজ নিজ বাসস্থানে মশার বংশবৃদ্ধি রোধ করা, প্রয়োজন হলে কীটনাশক ব্যবহার করা এবং জ্বর, র্যাশ বা অন্যান্য ডেঙ্গু-সংক্রান্ত উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে সতর্কতা অত্যন্ত জরুরি বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
চলতি বছরের এই পরিস্থিতি থেকে বোঝা যায় যে, ডেঙ্গু এখনও দেশের জন্য একটি বড় স্বাস্থ্যঝুঁকি হিসেবে রয়ে গেছে এবং সরকারের পাশাপাশি সাধারণ জনগণের সচেতনতা ও সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া রোগ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়।


