‘নতুনভাবে স্বাধীনতা’ পেলেও এখনো দেশমাতৃকার বিরুদ্ধে দেশি-বিদেশি চক্রান্ত থেমে নেই : তারেক রহমান

‘নতুনভাবে স্বাধীনতা’ পেলেও এখনো দেশমাতৃকার বিরুদ্ধে দেশি-বিদেশি চক্রান্ত থেমে নেই : তারেক রহমান

জাতীয় ডেস্ক

শহীদ ডা. শামসুল আলম মিলন দিবস উপলক্ষে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এক বাণীতে বলেছেন, গণতান্ত্রিক অধিকার ও রাজনৈতিক স্বাধীনতার প্রশ্নে দেশে এখনো নানা চ্যালেঞ্জ ও জটিলতা রয়ে গেছে। তিনি দাবি করেন, জনগণ ঐক্যবদ্ধ থাকলে যে কোনো প্রকার চক্রান্ত মোকাবিলা করা সম্ভব। গতকাল বুধবার, ২৭ নভেম্বর, দিবসটি উপলক্ষে দেওয়া লিখিত বার্তায় তিনি এসব বক্তব্য তুলে ধরেন।

তারেক রহমান বাণীতে উল্লেখ করেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ দেশকে নতুন বাস্তবতার দিকে নিয়ে এসেছে। তাঁর ভাষ্য অনুযায়ী, এই অংশগ্রহণকে তিনি ‘নতুনভাবে স্বাধীনতা অর্জন’ হিসেবে চিহ্নিত করলেও দেশি-বিদেশি বিভিন্ন অস্থিরতা ও রাজনৈতিক চাপ এখনো বিদ্যমান বলে মনে করেন। তিনি বলেন, জনগণের ঐক্য ও গণতান্ত্রিক চেতনাই এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার প্রধান শক্তি।

শহীদ ডা. মিলনের স্মৃতি স্মরণ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ১৯৯০ সালের আন্দোলনে মিলনের নিহত হওয়ার ঘটনা গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় ঘুরিয়ে দেয়। তাঁর মতে, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে মিলনের মৃত্যু দেশব্যাপী রাজনৈতিক অস্থিরতা, গণবিক্ষোভ ও নেতৃবৃন্দের সমন্বিত উদ্যোগকে আরও তীব্র করে তোলে। বাণীতে তিনি ডা. মিলনের প্রতি শ্রদ্ধা জানান এবং তাঁর আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন।

বাণীতে তিনি আরও বলেন, ৯০–এর দশকের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন দীর্ঘ নয় বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে চলছিল। ওই সময়কার ছাত্রসমাজ, পেশাজীবী, রাজনৈতিক দল ও সাধারণ মানুষ বিভিন্নভাবে আন্দোলনে সম্পৃক্ত ছিল। তাঁর দাবিতে, শহীদ ডা. মিলনের আত্মাহুতি এই আন্দোলনকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যায় এবং পরবর্তীতে রাজনৈতিক পরিবর্তনকে ত্বরান্বিত করে। তিনি উল্লেখ করেন যে, ডা. মিলনের হত্যাকাণ্ডের পর দেশজুড়ে গণআন্দোলন আরও বেগবান হয় এবং শেষ পর্যন্ত ক্ষমতাসীন শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটে।

বৈতরণী পাড়ি দেওয়া সেই রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট সম্পর্কে তারেক রহমান বলেন, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের ধারাবাহিকতার মধ্য দিয়ে দেশের রাজনৈতিক কাঠামো পুনর্গঠনের সুযোগ সৃষ্টি হয়। তিনি দাবি করেন, পরবর্তী সময়ে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া পুনঃপ্রতিষ্ঠায় রাজনৈতিক নেতৃত্ব, বিশেষ করে বিএনপির তৎকালীন নেতৃত্ব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাঁর বর্ণনায়, এই সময় থেকেই দেশের গণতন্ত্র নতুনভাবে বিকাশ লাভের সুযোগ পায় এবং নির্বাচনসহ রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণে জনগণের অংশগ্রহণ পুনর্ব্যক্ত হয়।

বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নিয়ে বাণীতে তিনি উল্লেখ করেন, রাষ্ট্র পরিচালনার বিভিন্ন ক্ষেত্রে পুনর্গঠন ও শাসনব্যবস্থার ওপর আস্থা পুনরুদ্ধার এখন একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে সামনে এসেছে। তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী, পূর্ববর্তী শাসনামলে বহু নাগরিক অধিকার সীমিত হয়ে পড়েছিল এবং রাজনৈতিক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হওয়ার অভিযোগ ছিল। তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে পুনরুজ্জীবিত করতে রাজনৈতিক দলগুলোর গঠনমূলক ভূমিকা প্রয়োজন।

বাণীতে তিনি আরও বলেন, জনগণের অংশগ্রহণ, শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ও সাংবিধানিক প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করা ছাড়া গণতন্ত্র স্থায়ী হতে পারে না। তিনি দাবি করেন, জাতির বিভিন্ন সংকট মোকাবিলায় সব পক্ষকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে এবং রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকলেও গণতান্ত্রিক কাঠামোর প্রতি সম্মান বজায় রাখতে হবে। তাঁর মতে, দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য এটাই প্রধান ভিত্তি।

ডা. মিলন দিবস উপলক্ষে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও পৃথক এক বাণী প্রদান করেন। সেখানে তিনি শহীদ ডা. মিলনের আত্মত্যাগকে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে উল্লেখ করেন এবং দিবসটির তাৎপর্য স্মরণ করে দলের নেতা–কর্মীসহ জনগণের প্রতি গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ রক্ষার আহ্বান জানান।

শহীদ ডা. মিলন দিবসটি প্রতি বছর বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন, নাগরিক সমাজ, চিকিৎসক ও পেশাজীবী সংগঠনের উদ্যোগে পালিত হয়। দিবস উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন স্থানে আলোচনা সভা, শ্রদ্ধা নিবেদন এবং গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ইতিহাস তুলে ধরার বিভিন্ন আয়োজন হয়ে থাকে। এসব আয়োজনে বক্তারা সাধারণত গণতান্ত্রিক পরিবেশ সুদৃঢ় করা, নাগরিক অধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং রাজনৈতিক সহিংসতা পরিহারের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

শহীদ ডা. শামসুল আলম মিলন ১৯৯০ সালের ২৭ নভেম্বর ঢাকায় স্বৈরাচারবিরোধী গণআন্দোলনের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। তাঁর মৃত্যু সে সময়কার আন্দোলনকে নতুন মাত্রায় নিয়ে যায় এবং দেশের রাজনৈতিক পরিবর্তনে তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব ফেলে। দেশব্যাপী প্রতিবাদ, বিক্ষোভ ও রাজনৈতিক চাপ বৃদ্ধি পেয়ে আন্দোলন আরও সংঘবদ্ধ হয়। পরবর্তী সময়ে পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতি দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামো পুনর্গঠনে ভূমিকা রাখে।

ডা. মিলনকে স্মরণ করে রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা প্রায়ই উল্লেখ করেন যে, তাঁর মৃত্যু গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে জনগণের অংশগ্রহণ বাড়িয়ে দিয়েছিল। প্রতি বছর তাঁর শাহাদাতবার্ষিকীতে রাজনৈতিক সহিষ্ণুতা, গণতান্ত্রিক চর্চা ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের গুরুত্ব নিয়ে নানা আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়, যা দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসকে স্মরণ করিয়ে দেয়।

রাজনীতি