অর্থ বাণিজ্য ডেস্ক
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, সরকার দেশীয় প্রজাতির প্রাণীসম্পদ সংরক্ষণ, উন্নয়ন এবং উৎপাদনের মাধ্যমে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের লক্ষ্য নিয়েছে। তিনি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন, সরকার অনিরাপদ বা অবৈজ্ঞানিকভাবে বিদেশ থেকে প্রাণিজ সম্পদ আমদানির পক্ষে নয়।
আজ (বৃহস্পতিবার) সকালে রাজধানীতে অনুষ্ঠিত জাতীয় প্রাণিসম্পদ সপ্তাহ ২০২৫-এর র্যালির পর এবং ‘প্রাণিসম্পদ খাতের সমস্যা, সম্ভাবনা ও করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপদেষ্টা এই মন্তব্য করেন।
ফরিদা আখতার বলেন, দেশীয় প্রাণিজ সম্পদ উৎপাদনের মাধ্যমে কেবল দেশের চাহিদা পূরণ করা নয়, বরং বিদেশে এর বাজার সম্প্রসারণের লক্ষ্য নিয়েও সরকার অগ্রসর হচ্ছে। তিনি পোল্ট্রি সেক্টরের আমদানি নির্ভরতা কমানোর ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন। উপদেষ্টা উল্লেখ করেন, পোল্ট্রি শিল্পের জন্য ভুট্টা ও সয়াবিনের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে হলে এই দুটি ফসলকে কৃষি খাতের সঙ্গে সমন্বিতভাবে উন্নয়ন করতে হবে। এছাড়া, পোল্ট্রি ফিড সংকট মোকাবিলা করা ক্ষুদ্র খামারিদের টিকিয়ে রাখার জন্য জরুরি বলে তিনি মনে করেন।
এলডিসি থেকে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক গ্রাজুয়েশন প্রসঙ্গে ফরিদা আখতার বলেন, ২০২৬ সালে এলডিসি থেকে বের হওয়া একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ছিল। তবে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করার জন্য প্রয়োজনীয় সক্ষমতা এখনও পুরোপুরি তৈরি হয়নি। তিনি বলেন, ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও দেশের অর্থনৈতিক এবং প্রাণিসম্পদ খাতের দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য পূরণের জন্য এ ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ।
সেমিনারের সভাপতিত্ব করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের। তিনি বলেন, প্রাণিসম্পদ সপ্তাহের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি এই খাতে নতুন উদ্যোক্তাদের উদ্ভাবনী উদ্যোগে উৎসাহিত করা হচ্ছে। তিনি জানান, দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষাজীবন সমাপ্ত শিক্ষার্থীদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলার জন্য এসএমই ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।
সেমিনারে বক্তারা দ্রুত পরিবর্তনশীল কৃষি–প্রযুক্তি, খাদ্য মান নিয়ন্ত্রণ, রোগ প্রতিরোধ, চাহিদা–সরবরাহ ভারসাম্য রক্ষা এবং রপ্তানি সম্ভাবনা বাস্তবায়নে সমন্বিত উদ্যোগের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। তারা বলেন, প্রাণিসম্পদ খাতে সমন্বিত পরিকল্পনা এবং উৎপাদন বাড়াতে প্রযুক্তিগত সমাধান গ্রহণ, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং স্থানীয় বাজারের পাশাপাশি রপ্তানির সুযোগ বৃদ্ধি গুরুত্বপূর্ণ।
উপদেষ্টা ও সচিব উভয়েই উল্লেখ করেন, দেশীয় প্রাণিজ সম্পদের উন্নয়ন ও নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতকরণ দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এছাড়া, পোল্ট্রি এবং অন্যান্য প্রাণিসম্পদ খাতের উৎপাদন বাড়ানো, স্থানীয় চাহিদা মেটানো এবং আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে সক্ষম হবে।
সেমিনার শেষে উপস্থিতরা সমন্বিত নীতি প্রণয়ন, গবেষণা–উন্নয়ন, প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে প্রাণিসম্পদ খাতকে আরও বেশি উৎপাদনশীল ও টেকসই করার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।


