রাজনীতি ডেস্ক
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) সতর্ক করেছে যে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তড়িঘড়ি করে সংশোধিত পুলিশ কমিশন আইন ও এনজিও সংক্রান্ত আইন পাস করতে চাইছে, যা সমীচীন হবে না। শুক্রবার (২৮ নভেম্বর) সন্ধ্যায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক বিবৃতিতে এই মন্তব্য করেন।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “বিশ্বস্ত সূত্রে আমরা জানতে পেরেছি যে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নির্বাচনের পূর্বে দুইটি আইন—সংশোধিত পুলিশ কমিশন আইন ও এনজিও সংক্রান্ত আইন—পাস করাতে তাড়াহুড়ো করছে। আমরা মনে করি, এই আইনগুলো দ্রুত পাস করানোর পেছনে সরকারের ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য কাজ করতে পারে, যা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করবে।”
বিএনপির বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, জনগণের সরাসরি ম্যান্ডেট ছাড়াই গুরুত্বপূর্ণ আইন দ্রুত পাস করানো সমীচীন নয়। দলটি মনে করছে, উক্ত আইনগুলো পরবর্তী জাতীয় সংসদে যথাযথ যুক্তিতর্কের মাধ্যমে প্রণয়ন করা উচিত।
আইন প্রণয়নের এই পরিস্থিতি নিয়ে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, নির্বাচনের আগে গুরুত্বপূর্ণ আইন দ্রুত পাস করানো রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা বিষয়ে প্রশ্ন তোলে। বিশেষ করে পুলিশ কমিশন আইন ও এনজিও সংক্রান্ত আইন জনগণের অধিকার, তদারকি ও রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা সম্পর্কিত হওয়ায় এগুলোর দ্রুত প্রণয়ন প্রক্রিয়া ব্যাপক রাজনৈতিক আলোচনার জন্ম দিতে পারে।
পুলিশ কমিশন আইন সংশোধন মূলত আইনশৃঙ্খলা সংস্থার স্বায়ত্তশাসন, নিয়োগ প্রক্রিয়া ও তদারকি ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করে। আইনটি নির্বাচনকালীন সময়ে প্রণয়ন হলে পুলিশ সংস্থার স্বায়ত্তশাসন ও নির্বাচনের নিরপেক্ষতা নিয়ে বিতর্কের সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যদিকে, এনজিও সংক্রান্ত আইন দেশের অ-সরকারি সংস্থাগুলোর কার্যক্রম, তহবিল গ্রহণ ও নিয়মিত তদারকি প্রক্রিয়া সংক্রান্ত বিধান নির্ধারণ করে। আইন দ্রুত প্রণয়ন করলে সেক্ষেত্রে এনজিও কার্যক্রমের স্বচ্ছতা ও নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত বিষয়গুলো রাজনৈতিক প্রভাবের অধীনে চলে যেতে পারে।
বিএনপি সরকারের কাছে আহ্বান জানিয়েছে, এই ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ থেকে বিরত থাকার এবং আইনগুলো যথাযথ রাজনৈতিক ও পার্লামেন্টারি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রণয়ন করার জন্য। দলটি মনে করছে, নির্বাচনের পূর্বে দ্রুত আইন প্রণয়ন করলে তা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার স্বাভাবিক চলাচল ও ভবিষ্যৎ নির্বাচন প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন প্রণয়ন কর্মকাণ্ড সরকারের স্বার্থ ও নির্বাচনের আগে ক্ষমতা কায়েম রাখার প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা যেতে পারে। আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে সংলাপ ও রাজনৈতিক সমঝোতার অভাব জনগণের আস্থা ও দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার উপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে।
বর্তমানে বিএনপি দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এই দুই আইনের দ্রুত প্রণয়ন নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং সরকারকে পদক্ষেপ থেকে বিরত থাকার জন্য সুস্পষ্ট আহ্বান জানিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, জাতীয় সংসদে বিস্তারিত আলোচনা ও সমঝোতার মাধ্যমে আইন প্রণয়নই দেশের স্থিতিশীলতা ও গণতান্ত্রিক মান নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে।
বিএনপির এই বিবৃতি রাজনৈতিক দলের মধ্যে সমন্বয়, ভোটের আগে সংলাপ ও আইন প্রণয়নের স্বচ্ছতা বিষয়ক আলোচনার নতুন মাত্রা যোগ করেছে। আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়া এবং নির্বাচনের নিরপেক্ষতা নিয়ে এই বিতর্ক আগামী সপ্তাহে রাজনৈতিক ও সামাজিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে।


