ঢাবির কেন্দ্রীয় মসজিদ পুনর্নির্মাণ প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়ে আইডিডিইএফ সভাপতির সঙ্গে উপাচার্যের বৈঠক

ঢাবির কেন্দ্রীয় মসজিদ পুনর্নির্মাণ প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়ে আইডিডিইএফ সভাপতির সঙ্গে উপাচার্যের বৈঠক

জাতীয় ডেস্ক

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ পুনর্নির্মাণ প্রকল্পের অগ্রগতি ও বিভিন্ন কারিগরি দিক নিয়ে তুরস্কভিত্তিক অলাভজনক ইসলামী সংস্থা আইডিডিইএফ-এর সভাপতি মেহমেত তুরান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। শুক্রবার উপাচার্যের বাসভবনস্থ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে দুই পক্ষ প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এবং প্রয়োজনীয় সমন্বয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।

বৈঠকে আইডিডিইএফ-এর আন্তর্জাতিক সমন্বয়কারী সালাহউদ্দিন সিলান উপস্থিত ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম সন্ধ্যায় এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। এতে জানানো হয়, কেন্দ্রীয় মসজিদের নকশা চূড়ান্তকরণসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজ চলমান রয়েছে এবং প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়ে দুই পক্ষ সন্তোষ প্রকাশ করেছে।

বৈঠকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. এম. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, প্রক্টর অধ্যাপক সাইফুদ্দীন আহমদ, বিশ্ব ধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মুহা. আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ, প্রকল্পের স্থপতি এবং বিশ্ববিদ্যালয় ও আইডিডিইএফ-এর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন। প্রকল্পের কারিগরি ও নকশাগত বিষয়গুলো নিয়ে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা উপাচার্যকে সর্বশেষ অগ্রগতি উপস্থাপন করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ পুনর্নির্মাণ প্রকল্পটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। নতুন মসজিদ কমপ্লেক্সে শিক্ষা ও গবেষণার সুযোগসহ আধুনিক স্থাপত্যশৈলী যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে। মসজিদটিকে শুধু ধর্মীয় উপাসনালয় নয়, বরং ইসলামী শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক জ্ঞানচর্চার একটি কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়েই নকশা প্রণীত হচ্ছে। প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত স্থপতিরা বৈঠকে জানায়, এই কমপ্লেক্সে পর্যাপ্ত পাঠস্থান, গবেষণাগার, সম্মেলনকক্ষ এবং আধুনিক ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত সহায়ক সুবিধা সংযোজনের বিষয়টি গুরুত্ব পাচ্ছে।

বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, প্রকল্পের ডিজিটাল জরিপ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। জরিপে মসজিদের বর্তমান কাঠামো, ভিত্তি, পরিবেশগত প্রভাব এবং নির্মাণযোগ্য এলাকার উপযুক্ততা যাচাই করা হয়েছে। এর ভিত্তিতে নকশা চূড়ান্ত করার কাজ চলমান আছে, যা প্রকল্পের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। সংশ্লিষ্ট স্থপতি ও প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন, নকশা পর্যায়ে নিরাপত্তা, স্থায়িত্ব, পরিবেশবান্ধব উপকরণ ব্যবহারের বিষয় এবং মুসল্লিদের সেবাপ্রাপ্তির সুবিধা নিশ্চিত করার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

বৈঠকে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্মাণকাজ শুরু করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় মসজিদ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় গুরুত্বসম্পন্ন স্থাপনা। এটি আধুনিক সুবিধাসম্পন্ন কমপ্লেক্সে রূপান্তরিত হলে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা এবং স্থানীয় মুসল্লিদের জন্য উন্নত পরিবেশ তৈরি হবে। তিনি প্রকল্প বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা, শৃঙ্খলা এবং সময়নিষ্ঠা বজায় রাখতে সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করেন।

অন্যদিকে আইডিডিইএফ সভাপতি মেহমেত তুরান প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পেরে সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি জানান, মসজিদটি পুনর্নির্মাণের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে একটি স্থায়ী, আধুনিক ও নান্দনিক স্থাপনা নির্মাণই তাদের লক্ষ্য। তিনি দুই পক্ষের সমন্বয় জোরদার হলে প্রকল্পটি নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই সম্পন্ন করা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেন। বৈঠকে দুই পক্ষ প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নিতে প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক ও কারিগরি ধাপগুলো নিয়েও আলোচনা করেন।

দুই পক্ষের মধ্যে ইতোমধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের প্রস্তুতি চলছে। স্মারকটি চূড়ান্ত হলে প্রকল্প বাস্তবায়ন আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মতে, সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের পরপরই নির্মাণ প্রস্তুতি, উপকরণ সংগ্রহ এবং সাইট ডেভেলপমেন্টের প্রাথমিক কাজ শুরু করা যাবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় স্থাপনা হিসেবে পরিচিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, নতুন কমপ্লেক্স নির্মাণের মাধ্যমে মসজিদটি শুধু আচারিক উপাসনার স্থান নয়, বরং ইসলামী শিক্ষা ও গবেষণার জন্য একটি সম্মিলিত প্ল্যাটফর্ম হিসেবে গড়ে উঠবে। শিক্ষার্থীদের ধর্মীয় জ্ঞান বিস্তারে এটি অতিরিক্ত ভূমিকা রাখবে বলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মনে করছে।

বৈঠক শেষে সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রকল্পের উন্নয়নধারা এখন সুস্পষ্ট এবং নকশা চূড়ান্ত হওয়ার পর নির্মাণকাজ শুরু হলে মসজিদটির আধুনিক রূপ দ্রুত দৃশ্যমান হবে। দুই পক্ষই প্রকল্পটির মাধ্যমে ক্যাম্পাসে একটি উন্নত, পরিবেশবান্ধব এবং বহুমুখী সুবিধাসম্পন্ন স্থাপনা নির্মাণে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।

জাতীয় শীর্ষ সংবাদ