অর্থনীতি ডেস্ক
সিলেট–ঢাকা আকাশপথের উচ্চ ভাড়া নিয়ে যাত্রীদের ব্যাপক অসন্তোষ ও সমালোচনার পর অবশেষে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস রুটটিতে ভাড়া কমানোর ঘোষণা দিয়েছে। শুক্রবার সিলেট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের মিডিয়া সেলের মাধ্যমে জনানো সরকারি তথ্যে নতুন ভাড়া কাঠামো প্রকাশ করা হয়। বিমান কর্তৃপক্ষ বাজার পরিস্থিতি, যাত্রীসেবা উন্নয়ন এবং সামগ্রিক পরিবহন ব্যয় পুনর্বিবেচনা করে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
সরকারি তথ্যে উল্লেখ করা হয়, সিলেট–ঢাকা রুটে সর্বনিম্ন ভাড়া নতুনভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে ২ হাজার ২৪ টাকা, যা ট্যাক্সসহ মোট ৩ হাজার ১৯৯ টাকা হবে। একই রুটে সর্বোচ্চ ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ হাজার ২৪ টাকা, ট্যাক্সসহ মোট ৮ হাজার ১৯৯ টাকা। নতুন কাঠামো কার্যকর হওয়ার পর যাত্রীরা রুটটিতে আগের তুলনায় তুলনামূলক কম খরচে ভ্রমণ করার সুযোগ পাবেন। এই পরিবর্তন যাত্রীদের দীর্ঘদিনের দাবি ও ক্ষোভের প্রতিফলন হিসেবে দেখা হচ্ছে।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সিলেট–ঢাকা রুটে বিমান ভাড়া ব্যাপক বেড়ে যায়। ভাড়া বৃদ্ধি পাওয়ায় সাধারণ যাত্রী, ব্যবসায়ী, চিকিৎসাসেবা নিতে রাজধানীতে যাওয়া রোগী, প্রবাসীদের পরিবার এবং বিভিন্ন শ্রেণির যাত্রীদের ভোগান্তি বাড়ে। নিত্যপ্রয়োজনীয় ভ্রমণেও উচ্চ ভাড়া অনেককে বাধ্য করেছিল বিকল্প পরিবহনের দিকে ঝুঁকতে। সড়কপথে দীর্ঘ সময় লাগে এবং রেলপথে সীমিত সেবা থাকায় আকাশপথ ব্যবহারকারীরা আরও চাপের মধ্যে পড়েন। ভাড়া বৃদ্ধির পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, গণমাধ্যম এবং স্থানীয় বিভিন্ন মহলে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়। অনেকেই ভাড়া পুনর্নির্ধারণের জন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
বাজার পরিস্থিতি ও যাত্রী চাহিদা পুনর্মূল্যায়নের পর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস রুটটিতে ভাড়া পর্যালোচনা করে। সেবার মান বজায় রেখে এবং পরিচালন ব্যয় বিবেচনায় রেখে নতুন ভাড়া কাঠামো নির্ধারণ করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। নতুন ভাড়া নির্ধারণে অঞ্চলটির যাত্রী প্রবাহ, আন্তর্জাতিক ফ্লাইট সংযোগ, প্রবাসী নির্ভর সিলেটের যাত্রীচাহিদা ও পর্যটন খাতের সম্ভাবনাকেও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
সিলেট দেশের অন্যতম প্রবাসী অধ্যুষিত অঞ্চল। মধ্যপ্রাচ্য ও যুক্তরাজ্যগামী প্রচুর যাত্রী এ রুটটি ব্যবহার করেন। এছাড়া চিকিৎসা, ব্যবসা, শিক্ষা, প্রশাসনিক কাজসহ বিভিন্ন কারণে ঢাকায় প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক যাত্রী সিলেট–ঢাকা রুটে যাতায়াত করেন। বিশেষ করে প্রবাসী যাত্রীদের পরিবার ও বিদেশফেরতদের জন্য অভ্যন্তরীণ সংযোগ হিসেবে এ রুটটির গুরুত্ব অত্যন্ত বেশি। ভাড়া কমানোর ফলে যাত্রীদের আর্থিক চাপ হ্রাস পাওয়ার পাশাপাশি রুটটির ব্যবহার বাড়তে পারে বলে সংশ্লিষ্ট মহল মনে করছে।
অন্যদিকে, পর্যটন শিল্পের জন্যও এই ভাড়া পুনর্নির্ধারণ সুফল বয়ে আনতে পারে। সিলেট দেশের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য; যেখানে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্তের পর্যটক আগমন ঘটে। ঢাকা থেকে কম ভাড়ায় দ্রুত সিলেটে যাতায়াতের সুযোগ সৃষ্টি হলে অভ্যন্তরীণ পর্যটনে ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। একই সঙ্গে হোটেল, রিসোর্ট, পরিবহন এবং পর্যটনসংশ্লিষ্ট খাতগুলোতেও অর্থনৈতিক গতিশীলতা বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বিমান ভাড়া পুনর্নির্ধারণের বিষয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মতে, যাত্রীবান্ধব ভাড়া কাঠামো অভ্যন্তরীণ রুটগুলোয় বিমান সংস্থার প্রতি যাত্রীদের আস্থা বাড়াতে সহায়তা করে। গত কয়েক মাসের ভাড়া–বৃদ্ধির ফলে যাত্রী কমে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। নতুন কাঠামো কার্যকর হলে যাত্রী সংখ্যা বাড়তে পারে এবং আকাশপথ আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠতে পারে। এটি অভ্যন্তরীণ বিমান পরিবহনের সার্বিক প্রবৃদ্ধিতেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
নতুন ভাড়া কবে থেকে কার্যকর হবে, তা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের পক্ষ থেকে পর্যায়ক্রমে জানানো হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। একই সঙ্গে ভবিষ্যতে যাত্রী চাহিদা, জ্বালানির মূল্য, পরিচালন ব্যয়সহ অন্যান্য উপাদান বিবেচনা করে ভাড়া কাঠামো আরও সমন্বয় করা হতে পারে।
সিলেট–ঢাকা রুটে ভাড়া কমানোর সিদ্ধান্তকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যাত্রীসেবা উন্নয়নের প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে বিবেচনা করছে। যাত্রীদের স্বার্থ রক্ষায় নিয়মিতভাবে ভাড়া পর্যালোচনা এবং প্রয়োজনীয় সমন্বয় করা হবে বলেও জানানো হয়েছে। নতুন ভাড়া কাঠামোর ফলে রুটটিতে যাতায়াত আরও স্বস্তিদায়ক ও সহজলভ্য হবে বলে সাধারণ যাত্রীদের প্রত্যাশা।


