১৪ ডিসেম্বর বিদায়ী অভিভাষণ দেবেন প্রধান বিচারপতি

১৪ ডিসেম্বর বিদায়ী অভিভাষণ দেবেন প্রধান বিচারপতি

আইন আদালত ডেস্ক

বিচার বিভাগ সংস্কার, চলমান উন্নয়ন কার্যক্রম এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা নিয়ে অধস্তন আদালতের বিচারকদের উদ্দেশে আগামী ১৪ ডিসেম্বর বিদায়ী অভিভাষণ দেবেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃপক্ষের এক সরকারি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানা গেছে। সংবিধানের ৯৬(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কোনো বিচারক ৬৭ বছর পূর্ণ করার পর আর দায়িত্বে থাকতে পারেন না। চলতি বছরের ২৭ ডিসেম্বর প্রধান বিচারপতির ৬৭ বছর পূর্ণ হচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে তার অবসরের আগেই বিদায়ী বক্তব্যের জন্য বিশেষ অধিবেশনের আয়োজন করা হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ১৪ ডিসেম্বর বিকাল ৩টায় সুপ্রিম কোর্ট মিলনায়তনে দেশের অধস্তন আদালতের শীর্ষ পর্যায়ের বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। এতে জেলা জজ, মহানগর দায়রা জজ, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এবং চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটরা উপস্থিত থাকবেন। এই অধিবেশনেই প্রধান বিচারপতি বিচার বিভাগ সংস্কার নিয়ে তার ঘোষিত রোডম্যাপ, তার বাস্তবায়ন অগ্রগতি এবং আরও উন্নয়নের সম্ভাবনা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ প্রদান করবেন।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, দায়িত্ব গ্রহণের পর গত দেড় বছরে বিচার বিভাগে নানা কাঠামোগত, প্রশাসনিক ও প্রযুক্তিনির্ভর পরিবর্তন আনতে যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সেই কার্যক্রমগুলোর সারাংশ এবং তাদের প্রভাব বিদায়ী অভিভাষণে তুলে ধরা হবে। বিশেষভাবে প্রযুক্তিনির্ভর বিচারিক সেবা সম্প্রসারণ, মামলার কার্যক্রমে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা, অধস্তন আদালতের বিচারকদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি, বিচারপ্রার্থী জনগণের সেবাপ্রাপ্তি উন্নয়ন এবং মামলাজট কমানোর লক্ষ্যে প্রণীত পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি দিকনির্দেশনা দেবেন।

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ ২০২৩ সালের ১০ আগস্ট দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এর আগে জুলাই মাসে রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর দায়িত্ব পালনরত সরকারের পতনের পর রাষ্ট্রপতি তাকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেন। দায়িত্ব গ্রহণের পরই তিনি ‘প্রকৃত স্বাধীন বিচার বিভাগ’ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য সামনে রেখে সংস্কার প্রক্রিয়া শুরু করেন। একই বছরের ২১ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টের ইনার গার্ডেনে অধস্তন আদালতের বিচারকদের উদ্দেশে প্রথম অভিভাষণে তিনি বিচার বিভাগ সংস্কারের একটি বিস্তৃত রোডম্যাপ ঘোষণা করেন। এই রোডম্যাপের প্রধান উপাদানগুলোর মধ্যে রয়েছে স্বাধীন সচিবালয় প্রতিষ্ঠা, পর্যাপ্ত ও স্বতন্ত্র বাজেট নিশ্চিত করা, কাঠামোগত সংস্কার, বিচারকদের পদায়ন ও বদলি সংক্রান্ত আচরণবিধি প্রণয়ন এবং উচ্চ আদালতে বিচারপতি নিয়োগের জন্য আইন প্রণয়নের উদ্যোগ।

এরপর থেকে গত দেড় বছরে বিচার বিভাগের প্রশাসনিক কাঠামো ও কর্মপদ্ধতিতে বিভিন্ন পরিবর্তন আনা হয়েছে। বিচারিক কার্যক্রমে ডিজিটাল ব্যবস্থার বিস্তার, আদালতের নথিপত্র ব্যবস্থাপনায় স্বয়ংক্রিয়তা বৃদ্ধি, মামলা ব্যবস্থাপনায় সময়সাশ্রয়ী পদ্ধতি চালু এবং বিচারকদের প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচি এ সময়ের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, এসব উদ্যোগে অধস্তন আদালতে বিচারপ্রার্থীদের সেবাপ্রাপ্তি সহজতর হয়েছে এবং ভবিষ্যৎ সংস্কার কার্যক্রমের জন্য একটি ভিত্তি তৈরি হয়েছে।

আগামী ১৪ ডিসেম্বরের অধিবেশনকে বিচার বিভাগের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্ব হিসেবে দেখা হচ্ছে। কারণ এতে প্রধান বিচারপতি শুধু বিদায়ী বক্তব্য প্রদান করবেন না, বরং তার নেতৃত্বে শুরু হওয়া সংস্কার কার্যক্রমগুলোর ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে ভবিষ্যৎ করণীয় সম্পর্কেও দিকনির্দেশনা দেবেন। বিচার বিভাগীয় কার্যক্রমে প্রযুক্তির আরও বিস্তার, দক্ষ জনবল উন্নয়ন এবং মামলাজট কমাতে দীর্ঘমেয়াদি কৌশল গ্রহণের সম্ভাবনা নিয়েও তিনি আলোচনায় আসবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট মহল মনে করছে, বিদায়ী অভিভাষণে ঘোষিত দিকনির্দেশনা বিচার বিভাগের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বিশেষত অধস্তন আদালতের বিচারকদের কাজের গতি, স্বচ্ছতা এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিতের সার্বিক প্রক্রিয়ায় এর প্রভাব পড়বে। এছাড়া সামগ্রিক বিচার ব্যবস্থাকে আরও কার্যকর করতে যে সব বড় ধরনের কাঠামোগত পরিবর্তন প্রয়োজন, সেগুলোর বাস্তবায়নে ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের জন্যও এটি একটি রূপরেখা হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।

আগামী অধিবেশনটি প্রধান বিচারপতির দায়িত্বকালীন অর্জন ও অভিজ্ঞতার আনুষ্ঠানিক উপস্থাপন এবং বিচার বিভাগের উন্নয়নে আগামীর দিকনির্দেশনার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হবে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মনে করছেন।

আইন আদালত শীর্ষ সংবাদ