বাংলাদেশকে বন্ধু হিসেবে দেখতে চান ভারতের নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল দিনেশ কে ত্রিপাঠি

বাংলাদেশকে বন্ধু হিসেবে দেখতে চান ভারতের নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল দিনেশ কে ত্রিপাঠি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ভারতের নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল দিনেশ কে ত্রিপাঠি বলেছেন, তিনি বাংলাদেশকে বন্ধু হিসেবে দেখতে চান এবং সম্পর্ককে অন্য কোনো দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করতে চান না। তবে তিনি উল্লেখ করেছেন যে, বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে কিছুটা ভারত বিরোধী মনোভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যা আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের আগে পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।

ত্রিপাঠি এই মন্তব্য করেন রবিবার (৩০ নভেম্বর) পুনের ন্যাশনাল ডিফেন্স অ্যাকাডেমির ১৪৯তম কোর্সের পাসিং আউট প্যারেডে। তিনি বলেন, “আমি বাংলাদেশকে এখনো বন্ধু ছাড়া অন্য কিছু হিসেবে বিবেচনা করব না। এটি একটি অস্থায়ী এবং ক্ষণস্থায়ী পরিস্থিতি হতে পারে। আমাদের ধৈর্য ধরতে হবে এবং নির্বাচন পর্যন্ত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে হবে। এরপর সম্পর্কের দিক পরিবর্তিত হতে পারে।”

অ্যাডমিরাল ত্রিপাঠি আরও জানান, নৌবাহিনীর প্রধান হিসেবে তার প্রথম বিদেশ সফর বাংলাদেশে হওয়া তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, “নৌ প্রধান হওয়ার পর প্রথমে আমার যাওয়ার কথা ছিল বড় কোনো শহরে। তবে আমি বলেছি, ‘আমার অবশ্যই প্রথমে বাংলাদেশে যেতে হবে’। সেখানে পাওয়া উষ্ণ অভ্যর্থনা এবং আন্তরিকতা অসাধারণ ছিল। বাংলাদেশ সম্পর্কিত ভারতের পদক্ষেপগুলোতে একটি নস্টালজিক অনুভূতি তৈরি হয়েছে, যা আমি দীর্ঘমেয়াদি আশাবাদে দেখছি।”

বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও ভারত–বাংলাদেশ সম্পর্কের প্রেক্ষাপট উল্লেখযোগ্য। গত বছরের আগস্টে গণঅভ্যুত্থানের পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নেন। এরপর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়। হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়ার কারণে কিছু অংশের সাধারণ মানুষের মধ্যে ভারতের প্রতি ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে ত্রিপাঠি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি অস্থায়ী এবং নির্বাচনের পর পরিস্থিতি পরিবর্তিত হতে পারে।

দুই দেশের নৌবাহিনীর মধ্যে সম্প্রতি বর্ধিত সহযোগিতা ও কৌশলগত সম্পর্ক গঠনের প্রচেষ্টা লক্ষ্য করা গেছে। বিশেষ করে নৌ নিরাপত্তা, জলপথে সহযোগিতা এবং সামরিক মহড়ায় পারস্পরিক অংশগ্রহণে উভয় দেশের আগ্রহ রয়েছে। অ্যাডমিরাল ত্রিপাঠির মন্তব্য এ অঞ্চলে সামরিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করার ইঙ্গিত বহন করে।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক উত্তেজনা থাকা সত্ত্বেও নৌবাহিনী প্রধানের এই মন্তব্য দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ককে পুনরায় সঠিক পথে স্থির করার সংকেত দিতে পারে। নির্বাচনপরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক দৃশ্যপট পরিবর্তিত হলে দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও জোরদার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

নৌবাহিনী প্রধানের এই সফর এবং মন্তব্য কেবল সামরিক ক্ষেত্রে নয়, কূটনৈতিক এবং রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও দুই দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষভাবে নৌ নিরাপত্তা, বন্দর ব্যবস্থাপনা, এবং জলপথে বাণিজ্যিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে নতুন কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের সুযোগ তৈরি হতে পারে।

সম্ভাব্যভাবে, এই সফর এবং ভবিষ্যৎ নির্বাচনের ফলাফলের উপর ভিত্তি করে ভারত–বাংলাদেশ সম্পর্কের দিকনির্দেশনা নির্ধারিত হতে পারে। অ্যাডমিরাল ত্রিপাঠির আশা, ধৈর্য্য ধরে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করলে দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে।

আন্তর্জাতিক শীর্ষ সংবাদ