জেলা প্রতিনিধি
ট্রান্সফরমারের জরুরি মেরামত, রক্ষণাবেক্ষণ এবং গাছপালা কাটাসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রমের কারণে সিলেট নগরীর কিছু গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় আজ সোমবার (১ ডিসেম্বর) টানা ১০ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকবে। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট বিভাগ জানিয়েছে, সকাল ৭টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত নির্ধারিত এই সময়সূচিতে ১১ কেভি স্প্রিং টাওয়ার ফিডারের সম্পূর্ণ লাইন মেরামতজনিত কাজে বন্ধ রাখা হবে।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো) বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ–২ সিলেট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নগরীর উপশহর ডি ব্লক মেইন রোড, ই ব্লক পয়েন্ট এবং আশপাশের বেশ কয়েকটি এলাকায় বিদ্যুৎবিহীন পরিস্থিতি দেখা দিতে পারে। এসব এলাকায় নিয়মিত সরবরাহ নিশ্চিতকারী লাইনের কিছু অংশ দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার প্রয়োজনীয় অবস্থায় থাকায় জরুরি ভিত্তিতে কাজগুলো হাতে নেওয়া হয়েছে। এতে বিদ্যুৎ ব্যবস্থার নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা বৃদ্ধি পাবে বলে সংশ্লিষ্ট বিভাগ জানিয়েছে।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা জানান, জরুরি মেরামত কার্যক্রমের আওতায় ক্ষতিগ্রস্ত ট্রান্সফরমার পরীক্ষা ও সারাই, ঝুঁকিপূর্ণ তার পরিবর্তন, লাইনের সংযোগ দৃঢ়করণ, প্রয়োজনীয় উপকরণ প্রতিস্থাপন এবং গাছের ডালপালা ছাঁটাইয়ের মতো কাজ করা হবে। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুম শেষে ঝড়ো হাওয়া ও আকস্মিক আবহাওয়ার কারণে গাছপালা বৈদ্যুতিক লাইনের উপর ঝুঁকি সৃষ্টি করায় এগুলো দ্রুত পরিষ্কার করা প্রয়োজন হয়েছে। এসব রক্ষণাবেক্ষণ কার্যক্রম সম্পন্ন হলে এলাকাগুলোর বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থায় ত্রুটি কমবে এবং গ্রাহকভোগান্তি হ্রাস পাবে।
এ ধরনের পরিকল্পিত বিদ্যুৎ বন্ধকে বিউবো প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণের অংশ হিসেবে দেখে থাকে। কর্তৃপক্ষের মতে, নির্দিষ্ট সময়ে রক্ষণাবেক্ষণ না করা হলে লাইনের আকস্মিক বিপর্যয়, বড় ধরনের ক্ষতি এবং দীর্ঘমেয়াদি বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নতার ঝুঁকি বেড়ে যায়। সিলেট নগরীর বিভিন্ন এলাকায় সাম্প্রতিক সময়ে বিদ্যুৎ সরবরাহের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। এসব প্রকল্পে নতুন লাইন স্থাপন, পুরোনো লাইন সংস্কার এবং সাবস্টেশন আধুনিকায়নের মতো কাজ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। চলমান এসব কাজে সামঞ্জস্য বজায় রাখতে আজকের নির্ধারিত বিদ্যুৎ বিভ্রাট প্রয়োজন বলে কর্মকর্তারা জানান।
প্রকৌশলীরা আরও জানান, নির্ধারিত সময়ের আগেই মেরামত কাজ শেষ হলে বিদ্যুৎ সরবরাহ পুনরায় চালু করা হবে। তবে এসব কাজ সম্পন্ন করতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে ধাপে ধাপে অগ্রসর হতে হয়, ফলে সময়সূচি পুরোটা ব্যবহার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্য গ্রাহকদের আগাম প্রস্তুতি নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে। বিশেষ করে গৃহস্থালি ব্যবহারকারী, অফিস–আদালত, দোকানপাট, হাসপাতাল এবং ক্ষুদ্র শিল্পকারখানায় প্রয়োজনীয় ব্যাকআপ ব্যবস্থার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।
সিলেট নগরীতে বিদ্যুৎ বিতরণ সংক্রান্ত কাজে সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু নতুন প্রকল্প যুক্ত হয়েছে, যার লক্ষ্য হচ্ছে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সেবা নিশ্চিত করা। বিদ্যুৎ বোর্ড কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শহরের জনসংখ্যা বৃদ্ধি, ব্যবসা–বাণিজ্যের সম্প্রসারণ এবং লোড বাড়ার কারণে বিদ্যুৎ ব্যবস্থাকে আধুনিকায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এসব কাজের পর মূলত ট্রিপিং কমবে, সচলতা বাড়বে এবং পরিষেবা আরও সুষ্ঠু হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ–২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, সাময়িক এই অসুবিধা নাগরিকদের জন্য কিছুটা ভোগান্তির কারণ হতে পারে, তবে দীর্ঘমেয়াদে এটি বিদ্যুৎ ব্যবস্থার স্থায়িত্ব ও নির্ভরযোগ্যতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তিনি আরও বলেন, নাগরিকদের সহযোগিতা পাওয়া গেলে নির্ধারিত কাজগুলো দ্রুত সম্পন্ন করা সম্ভব হবে এবং পরবর্তী সময়ে এসব এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ আরও স্থিতিশীল হবে।
আজকের এই পরিকল্পিত বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নতা সামগ্রিকভাবে সিলেট নগরীর বিদ্যুৎ অবকাঠামো সংস্কার কার্যক্রমের অংশ। কর্তৃপক্ষ আশা করছে, নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে কাজ সম্পন্ন হলে ভবিষ্যতে এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত বিভ্রাটের পরিমাণ কমে আসবে এবং গ্রাহক সেবার গুণগত মান আরও উন্নত হবে।


