আন্তর্জাতিক ডেস্ক
সোমবার ভোর থেকে ইসরায়েলি সশস্ত্র বাহিনী পশ্চিম তীরের তুবাস শহর এবং সংলগ্ন আকাবা এলাকায় নতুন করে অভিযান চালায়, যা সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোর ধারাবাহিক উত্তেজনার পর আরও অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। স্থানীয় সূত্র এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, অভিযানের সময় দুটি এলাকার প্রবেশপথ বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং কারফিউ জারি করে সামরিক নিয়ন্ত্রণ জোরদার করা হয়।
ইসরায়েলের এই নতুন অভিযান চলমান সংঘাতের প্রেক্ষাপটে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসেবে দেখা হচ্ছে। গত সপ্তাহেই তুবাস ও আকাবায় টানা চার দিন অভিযান চালানো হয়েছিল। সে ধারাবাহিকতার মধ্যেই সোমবারের এই অভিযান দ্বিতীয় দফা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বিশেষ করে উত্তর-পশ্চিম তীরজুড়ে ইসরায়েলি বাহিনীর ঘন ঘন অভিযান সাম্প্রতিক মাসগুলোতে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ওই অঞ্চলের পরিস্থিতিকে আরও নাজুক করে তুলেছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের বরাত দিয়ে জানা যায়, সোমবারের অভ্যন্তরীণ টহল ও অভিযান শুরু হয় ভোররাতেই। সেনারা শহরের প্রধান সড়কগুলো অবরুদ্ধ করে এবং যোগাযোগ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে পুরো এলাকা কার্যত বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। বিভিন্ন স্থানে স্থাপন করা হয় অতিরিক্ত চেকপোস্ট; ফলে সাধারণ মানুষের চলাচল সীমিত হয়ে পড়ে। এলাকাবাসীর দৈনন্দিন জীবনযাত্রা, কর্মস্থলে যাতায়াত এবং জরুরি সেবার ওপর এর প্রভাব পড়ে।
অভিযানের সময় তুবাসের একটি পরিবারের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে ২২ বছর বয়সী এক যুবককে আটক করে ইসরায়েলি বাহিনী। স্থানীয় প্রিজনার্স সোসাইটির প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, ওই যুবককে মাত্র দুই দিন আগেও আটক ও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। পরে তাকে ছেড়ে দেওয়া হলেও পুনরায় গ্রেপ্তারের বিষয়টি স্থানীয়দের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। একই সূত্রে জানা যায়, অভিযানের সময় আরও ছয়জনকে আটক করা হলেও পরে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
ফিলিস্তিনি বন্দী বিষয়ক মানবাধিকার সংগঠনগুলো দীর্ঘদিন ধরে বলছে, পশ্চিম তীরে সামরিক অভিযানের সময় ঘন ঘন আটক অভিযান স্থানীয় জনজীবনের ওপর গভীর প্রভাব ফেলছে। এ ধরনের অভিযান প্রায়ই রাতের বা ভোরের দিকে পরিচালিত হওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বাড়ছে। বিশেষ করে তরুণদের বিরুদ্ধে বারবার একই ধরনের তল্লাশি ও আটক কার্যক্রম বাড়তি উত্তেজনার জন্ম দিচ্ছে।
বিশ্লেষকদের মতে, পশ্চিম তীরের বর্তমান পরিস্থিতি ইতোমধ্যেই উত্তপ্ত, এবং সাম্প্রতিক ঘটনার ধারাবাহিকতা তা আরও জটিল করে তুলছে। গত কয়েক মাসে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন উত্তেজনা কূটনৈতিকভাবে সমাধানের কোনো সুযোগ তৈরি না হওয়ায় পশ্চিম তীরজুড়ে সামরিক অভিযান বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ ধরনের অভিযানে সাধারণ মানুষের ক্ষয়ক্ষতি, আটক তরুণদের সংখ্যা এবং সামাজিক অস্থিরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে স্থানীয় মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে।
এদিকে, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন যে, বারবার কারফিউ ও অবরোধ জারি হওয়ায় প্রয়োজনীয় খাদ্য ও ওষুধ সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে। স্থানীয় ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়েছে এবং কর্মসংস্থান সংকট দেখা দিচ্ছে। এ ধরনের পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হলে মানুষের জীবনমান আরও অবনতির আশঙ্কা রয়েছে।
তুবাস ও আকাবা এলাকা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইসরায়েলি অভিযানের ঘনঘন লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে। নিরাপত্তাজনিত অজুহাতে পরিচালিত এই অভিযানের ফলে ওই এলাকার রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল হয়ে উঠছে। স্থানীয় প্রশাসন, মানবাধিকার সংস্থা ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, এই ধারাবাহিক অভিযান পরিস্থিতিকে আরও অস্থির করতে পারে এবং ভবিষ্যতে বৃহত্তর অস্থিতিশীলতার ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
সাম্প্রতিক এই ঘটনাগুলো এটাই নির্দেশ করে যে, পশ্চিম তীরের নিরাপত্তা পরিস্থিতি আরও কঠিন সময়ের দিকে এগোচ্ছে। অভিযানের পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে এলাকায় অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা বজায় থাকতে পারে। ফলে স্থানীয়দের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা পুনরুদ্ধার শিগগিরই সম্ভব হবে বলে মনে করা যাচ্ছে না।


