পঞ্চদশ সংশোধনী রায়ের আপিল: বিএনপি মহাসচিব পক্ষভুক্ত

পঞ্চদশ সংশোধনী রায়ের আপিল: বিএনপি মহাসচিব পক্ষভুক্ত

আইন আদালত ডেস্ক

বহুল আলোচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলসহ সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে আনা কয়েকটি ধারা অবৈধ ঘোষণার বিরুদ্ধে হাইকোর্টের রায়ের আপিলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পক্ষভুক্ত হয়েছেন। মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) সকালে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ বিএনপি মহাসচিবের আবেদন মঞ্জুর করেন। আদালতে বিএনপির পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।

এর আগে গত ১৩ নভেম্বর হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি প্রদান করেন সর্বোচ্চ আদালত। তৎকালীন শুনানিতে আদালতে আইনজীবী ড. শরীফ ভূঁইয়া বিএনপি ও রিটকারী প্রতিষ্ঠান সুজনের পক্ষ থেকে যুক্তি উপস্থাপন করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার অনীক আর হক। গত ৩ নভেম্বর লিভ টু আপিল দায়েরের মাধ্যমে পঞ্চদশ সংশোধনীর পুরো বাতিল চাওয়া হয়।

গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর হাইকোর্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলসহ সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে আনা কয়েকটি ধারা অবৈধ ঘোষণা করেন। একই রায়ে সংবিধানে গণভোটের বিধান পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হয়। বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রায় প্রদান করেন। আদালত রায়ে উল্লেখ করেছেন, গণতন্ত্র সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর অংশ এবং এটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বিকশিত হয়। তবে দলীয় সরকারের অধীনে পূর্ববর্তী তিনটি সংসদ নির্বাচনে জনগণের ইচ্ছার যথাযথ প্রতিফলন হয়নি।

হাইকোর্টের রায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্তি–সংক্রান্ত পঞ্চদশ সংশোধনী আইন ২০ ও ২১ অনুচ্ছেদ সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও বাতিল ঘোষণা করা হয়। আদালত বলেন, অনুচ্ছেদ দুটি সংবিধানের মৌলিক কাঠামোকে ধ্বংস করেছে। পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে যুক্ত ৭ক, ৭খ ও ৪৪(২) অনুচ্ছেদও বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। পঞ্চদশ সংশোধনীতে মোট ৫৪টি ক্ষেত্রে সংযোজন, পরিবর্তন ও পরিমার্জন আনা হয়েছিল। তবে আইন পুরো বাতিল করা হয়নি; বাকি বিধান সংশোধন বা পরিবর্তনের জন্য জাতীয় সংসদ আইন অনুসারে জনগণের মতামত নিতে পারবে।

গণভোট সংক্রান্ত বিধানও হাইকোর্ট বাতিল ঘোষণা করেছেন। সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদের অংশ হিসেবে গণভোটের বিধান পঞ্চদশ সংশোধনীর ৪৭ ধারার সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ায় এটি বাতিল করা হয়েছে। এর ফলে দ্বাদশ সংশোধনীর ১৪২ অনুচ্ছেদ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। হাইকোর্টের রায়ে ৭ক, ৭খ ও ৪৪(২) অনুচ্ছেদও বাতিল করা হয়েছে। ৭ক অনুচ্ছেদে সংবিধান বাতিল, স্থগিতকরণ সংক্রান্ত অপরাধ উল্লেখ ছিল, ৭খ অনুচ্ছেদে সংবিধানের মৌলিক বিধানাবলি সংশোধন অযোগ্য করার কথা বলা হয়েছিল। ৪৪(২) অনুচ্ছেদে মৌলিক অধিকার বলবৎকরণের বিধান ও হাইকোর্ট বিভাগের ক্ষমতার প্রভাব সীমাবদ্ধকরণ সংক্রান্ত ধারা বাতিল ঘোষণা করা হয়।

রায় ঘোষণার সময় আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদ উদ্দিন। রিটকারী সুজনের পক্ষ থেকে ছিলেন ড. শরিফ ভূঁইয়া, বিএনপি পক্ষ থেকে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল এবং অ্যাডভোকেট ফারজানা শারমিন পুতুল। এছাড়া জামায়াতে ইসলামী, ইনসানিয়াত বিপ্লব, গণফোরাম ও চার ইন্টারভেনরসহ অন্যান্য আবেদনকারীর পক্ষেও আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।

২০১১ সালের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে পঞ্চদশ সংশোধনী পাস হয়। সংশোধনীর মাধ্যমে শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির জনক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয় এবং জাতীয় সংসদে নারীর সংরক্ষিত আসন সংখ্যা ৪৫ থেকে ৫০ করা হয়। এছাড়া সংবিধানের বিভিন্ন ধারা পরিমার্জন ও পরিবর্তনের মাধ্যমে জাতীয় আইন ও প্রশাসনিক কাঠামোর সঙ্গে সামঞ্জস্য আনা হয়।

আইন আদালত