জাতীয় ডেস্ক
বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় সহায়তা দিতে যুক্তরাজ্য থেকে আগত চার সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ মেডিকেল টিম ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা কার্যক্রমে যুক্ত হয়েছে। বুধবার সকালে দলটি হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) পৌঁছে তার বর্তমান শারীরিক অবস্থা পর্যালোচনা করে স্থানীয় মেডিকেল টিমের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নেয়।
হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, খালেদা জিয়া সিসিইউতে নিবিড় চিকিৎসা পর্যবেক্ষণে আছেন। দীর্ঘদিন ধরে তার একাধিক জটিল শারীরিক সমস্যা থাকায় চিকিৎসা কার্যক্রম বর্তমানে বহুমাত্রিক পর্যবেক্ষণের ওপর নির্ভর করছে। যুক্তরাজ্যের এই বিশেষজ্ঞ দলের নেতৃত্বে রয়েছেন চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা ও জটিল রোগ তত্ত্বাবধানে অভিজ্ঞ ড. রিচার্ড বিউল। আগমনের পরপরই তারা তার ক্লিনিক্যাল নোট, সাম্প্রতিক পরীক্ষার ফলাফল ও সাপোর্ট সিস্টেম সংক্রান্ত নথি পর্যালোচনা করেন।
সূত্র জানায়, বিশেষজ্ঞ দলটি মূলত দীর্ঘমেয়াদি রোগ ব্যবস্থাপনা, ঝুঁকি মূল্যায়ন, অঙ্গ-সমর্থন ব্যবস্থা এবং চিকিৎসার পরবর্তী ধাপ নির্ধারণে উন্নত পরিকল্পনা প্রণয়নে কাজ করছে। স্থানীয় মেডিকেল টিমের সঙ্গে তারা প্রতিটি পর্যায়ে সমন্বয় করে অগ্রগতি মূল্যায়ন করছেন। নিয়মিত পর্যবেক্ষণ, পরীক্ষার আপডেট ও ক্লিনিক্যাল মূল্যায়নের ওপর ভিত্তি করে চিকিৎসার প্রয়োজনীয় সংশোধন বা নতুন নির্দেশনা প্রদান করা হবে।
চিকিৎসক দলটি প্রথম দিনেই খালেদা জিয়ার একাধিক জটিলতার পর্যালোচনা করে চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করে। হাসপাতালের নিয়মিত টিমের সঙ্গে সমন্বিত এ কার্যক্রমের লক্ষ্য হলো চিকিৎসার সিদ্ধান্তগুলোকে আরও বৈজ্ঞানিক, আধুনিক এবং রোগীর বর্তমান অবস্থা অনুযায়ী যথাযথভাবে সাজানো। চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার প্রতিটি ধাপে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের মতামত সংযোজন করা হলে জটিল রোগ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আরও সুচিন্তিত ও কার্যকর পরিকল্পনা তৈরি সম্ভব বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
গত ২৩ নভেম্বর রাতে হঠাৎ শারীরিক পরীক্ষার প্রয়োজন দেখা দিলে গুলশানের বাসা ফিরোজা থেকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয় খালেদা জিয়াকে। পরে মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ভর্তি হওয়ার পর থেকে তার শারীরিক অবস্থার মাঝে ওঠানামা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তিনি বহুদিন ধরে আর্থরাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি রোগ, ফুসফুসের জটিলতা ও চোখের দীর্ঘমেয়াদি সমস্যাসহ বিভিন্ন শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছেন। এসব দীর্ঘমেয়াদি রোগের পারস্পরিক প্রভাব তার বর্তমান শারীরিক পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলেছে, ফলে চিকিৎসায় বহুমাত্রিক নজরদারি অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।
চিকিৎসা পরিকল্পনায় বিদেশি বিশেষজ্ঞদের যুক্ত হওয়া চিকিৎসা ব্যবস্থাপনাকে আরও সমন্বিত কাঠামোতে আনতে সাহায্য করবে বলে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসা টিমের সদস্যরা মনে করছেন। আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতার আলোকে দীর্ঘমেয়াদি রোগ ব্যবস্থাপনা, অঙ্গ-সমর্থন কার্যক্রম ও জটিলতা নিয়ন্ত্রণ—এই তিনটি বিষয়কে অগ্রাধিকার দিয়ে চিকিৎসার পরবর্তী ধাপ সাজানো হচ্ছে। চিকিৎসকদের মতে, বিভিন্ন অঙ্গের কার্যক্ষমতার ওপর নিয়মিত নজরদারি এবং দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানানোর সক্ষমতা এ ধরনের জটিল রোগীর ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় প্রতিদিনই তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা, ল্যাব রিপোর্ট বিশ্লেষণ ও সিসিইউ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে তার অবস্থা মূল্যায়ন করা হচ্ছে। যুক্তরাজ্যের বিশেষজ্ঞরা স্থানীয় মেডিকেল টিমের সঙ্গে পর্যবেক্ষণের প্রতিটি ধাপে যুক্ত থাকবেন বলে জানা গেছে। এ সহযোগিতা সামগ্রিক চিকিৎসার মান উন্নত করতে সক্ষম হতে পারে বলে চিকিৎসকরা মনে করছেন।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মতে, বিদেশি বিশেষজ্ঞ দলের অংশগ্রহণ চিকিৎসা প্রক্রিয়ায় একটি সমন্বিত সিদ্ধান্তগ্রহণ ব্যবস্থা তৈরি করবে, যা দীর্ঘমেয়াদি জটিলতা নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। খালেদা জিয়ার বিভিন্ন অঙ্গের কার্যকারিতা স্থিতিশীল রাখা এবং সম্ভাব্য ঝুঁকি কমিয়ে আনার ওপর চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার মূল জোর দেওয়া হচ্ছে। আন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসা পরিকল্পনা যুক্ত হওয়ায় সার্বিক ব্যবস্থাপনা আরও সুসংগঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বর্তমানে তিনি নিবিড় পর্যবেক্ষণে থাকায় চিকিৎসকরা নিয়মিত মূল্যায়নের ভিত্তিতে অবস্থার পরিবর্তন অনুযায়ী চিকিৎসা নির্দেশনা নির্ধারণ করছেন। উন্নত পর্যবেক্ষণ ও আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা সমন্বিত এই চিকিৎসা প্রক্রিয়া তার সার্বিক অবস্থার ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন।


