রাজনীতি ডেস্ক
রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামী দেশের শাসনব্যবস্থা, সমাজগঠন ও নীতিনির্ধারণে জনগণের অংশগ্রহণকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়ার অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছে। দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, জনগণকে সম্পূর্ণভাবে অবগত রেখে এবং তাদের মতামতকে প্রাধান্য দিয়েই ভবিষ্যতে রাষ্ট্র পরিচালনার নীতি গ্রহণ করতে চায় দলটি। গতকাল রাজধানীর মিরপুরে ওষুধ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এ বক্তব্য দেন।
সভায় ডা. শফিকুর রহমান বলেন, দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা, ন্যায়বিচার এবং জবাবদিহি নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের প্রতি নাগরিক আস্থার অন্যতম ভিত্তি। তিনি দাবি করেন, আগামী দিনের রাষ্ট্রীয় কাঠামো গঠনে ইসলামী মূল্যবোধ ও ন্যায়-নীতিকে গুরুত্ব দিতে চায় জামায়াত। তার বক্তব্যে তিনি সমাজের বিভিন্ন অংশের মর্যাদা, অধিকার এবং নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, সমাজের প্রতিটি নাগরিককে সমান মর্যাদা দেওয়ার পরিবেশ তৈরি হলে সামাজিক বিভাজন কমে আসে এবং স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি পায়। তার ভাষ্যমতে, একটি মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দলটি দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করতে চায়। দুর্নীতি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে দুর্বল করে এবং জনস্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত করে—এ কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দুর্নীতিমুক্ত পরিবেশ গড়ে উঠলে সামাজিক শান্তি ও নিরাপত্তা আরও সুদৃঢ় হবে।
মতবিনিময় সভায় দেশের স্বাস্থ্যখাতের নৈতিক সংকট নিয়েও কথা বলেন জামায়াত আমির। তিনি দাবি করেন, কিছু চিকিৎসক ওষুধ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা গ্রহণের মাধ্যমে রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা করছেন, যা স্বাস্থ্যসেবার মান ও জনগণের আস্থা—উভয়কেই ক্ষতিগ্রস্ত করছে। তার মতে, চিকিৎসকদের জন্য ন্যায়সঙ্গত ও পেশাগত মানদণ্ড বজায় রেখে কাজ করার পর্যাপ্ত সুযোগ দেশে রয়েছে এবং সেসব মানদণ্ড অনুসরণ করা হলে স্বাস্থ্যসেবা আরও উন্নত হতে পারে।
ডা. শফিকুর রহমান দেশের ওষুধশিল্পের অগ্রগতির প্রসঙ্গও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, একসময় বাংলাদেশের ওষুধশিল্প বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল ছিল। দীর্ঘ সময় ধরে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ, নীতিগত সহায়তা এবং স্থানীয় উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগ বৃদ্ধির ফলে বর্তমানে বাংলাদেশ নিজস্ব উৎপাদন সক্ষমতা অর্জন করেছে। দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন মান নিয়ন্ত্রণ সংস্থার অনুমোদন নিয়ে বহু দেশে ওষুধ রপ্তানি করছে, যা এ খাতকে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানে নিয়ে গেছে।
তিনি আরও বলেন, ওষুধশিল্পের উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে উৎপাদন মান, গবেষণা ও উন্নয়ন (আরঅ্যান্ডডি) সক্ষমতা এবং রপ্তানি সম্ভাবনা বাড়ানোর বিষয়েও জাতীয় পর্যায়ে পরিকল্পনা গ্রহণ প্রয়োজন। এ খাতে দক্ষ জনবল তৈরি, প্রযুক্তি হালনাগাদ এবং বৈশ্বিক চাহিদা অনুযায়ী উদ্ভাবনী উদ্যোগ নেওয়ার ওপরও তিনি গুরুত্বারোপ করেন।
মতবিনিময় সভায় ব্যবসায়ীরা স্বাস্থ্যসেবায় স্বচ্ছতা, ওষুধবাজারে প্রতিযোগিতা, নকল ও নিম্নমানের ওষুধ নিয়ন্ত্রণ এবং ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নয়নের বিভিন্ন দিক নিয়ে মতামত তুলে ধরেন। তারা বলেন, বাংলাদেশে ওষুধশিল্প একটি সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে বিকশিত হয়েছে, তবে মান নিয়ন্ত্রণ, বাজার ব্যবস্থাপনা ও নীতিনির্ধারণে আরও আধুনিকায়ন প্রয়োজন।
সভায় জামায়াত আমির বলেন, জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ ও দেশের সামগ্রিক উন্নয়নকে ভিত্তি করে একটি সুবিচারভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা গ্রহণ করা উচিত। তার দাবি, ন্যায়নিষ্ঠ রাষ্ট্রীয় কাঠামো গড়ে উঠলে প্রশাসন, অর্থনীতি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য—সব খাতেই উন্নয়ন দ্রুততর হবে। নাগরিকের মত প্রকাশের অধিকার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং সামাজিক সম্প্রীতি জোরদারের মাধ্যমে দেশের সামগ্রিক অগ্রগতি তরান্বিত হতে পারে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
সভায় উপস্থিত ব্যবসায়ীরা স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধশিল্পের কিছু চ্যালেঞ্জ এবং সম্ভাবনার বিষয় তুলে ধরলেও এগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার সুযোগ সীমিত ছিল। তবে আলোচনায় সামগ্রিকভাবে দেশের সামাজিক কাঠামো, জনস্বাস্থ্য, ওষুধশিল্প এবং রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি—এসব বিষয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
মতবিনিময় সভা শেষে আয়োজকরা জানান, স্বাস্থ্যখাত এবং ব্যবসায়িক পরিবেশের উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর মধ্যে নিয়মিত আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে। তাদের মতে, সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনের মতামত প্রতিফলিত হলে ওষুধশিল্প ও স্বাস্থ্যসেবা আরও শৃঙ্খলিত, ন্যায়সঙ্গত এবং টেকসই হতে পারে।


