খেলাধুলা ডেস্ক
ক্যাম্প ন্যুতে এক গোল পিছিয়ে থেকেও আতলেতিকো মাদ্রিদকে ৩–১–এ পরাজিত করে লা লিগার পয়েন্ট তালিকায় নিজেদের অবস্থান আরও দৃঢ় করেছে বার্সেলোনা। মৌসুমের গুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচে জয় পেয়ে প্রতিযোগিতার শীর্ষে চার পয়েন্টের লিড গড়ে সাম্প্রতিক সময়ের ধারাবাহিক পারফরম্যান্সকে আরও সুসংহত করল হানসি ফ্লিকের শিষ্যরা।
অক্টোবরে এল ক্লাসিকোয় রিয়াল মাদ্রিদের কাছে পরাজয়ের পর বার্সেলোনা পাঁচ পয়েন্ট পিছিয়ে পড়েছিল। সেই ধাক্কা কাটিয়ে দলটি টানা পাঁচ ম্যাচে জয় তুলে নিয়ে তালিকায় শক্ত অবস্থান পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে অগ্রসর হয়। যদিও বার্সেলোনা এ পর্যন্ত রিয়ালের চেয়ে একটি ম্যাচ বেশি খেলেছে, তবুও সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স দলটির আত্মবিশ্বাস বেড়েছে বহুগুণ। অন্যদিকে রিয়াল মাদ্রিদ নিজেদের পরবর্তী ম্যাচে অ্যাথলেটিক বিলবাওয়ের মুখোমুখি হবে, যা পয়েন্টের ব্যবধান কমানোর সুযোগ হিসেবে গুরুত্ব পাচ্ছে।
ম্যাচের শুরু থেকেই বল দখলে এগিয়ে থাকলেও বার্সেলোনা প্রথম গোল হজম করে ১৯তম মিনিটে। প্রতিপক্ষের উচ্চ রক্ষণভাগ পেরিয়ে আসা একটি লং পাস নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এগিয়ে যান আতলেতিকোর আলেক্স বাইনা। নিখুঁত চিপ শটে তিনি পরাস্ত করেন বার্সা গোলরক্ষক জোয়ান গারসিয়াকে। সহকারী রেফারি প্রথমে অফসাইডের সংকেত দিলেও ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি পর্যালোচনার পর গোলটি বৈধ হিসেবে গণ্য হয়। ফলে অতিথিরা ১–০ গোলের লিড নেয়।
গোল খাওয়ার মাত্র সাত মিনিটের মধ্যেই সমতায় ফেরার সুযোগ সৃষ্টি করে বার্সেলোনা। পেদ্রির নিখুঁত থ্রু-বলে ডি-বক্সে প্রবেশ করেন রাফিনিয়া। গোলরক্ষক ইয়ান ওবলাককে কাটিয়ে খালি পোস্টে বল জড়িয়ে ম্যাচে সমতা ফেরান তিনি। সমতার পর ম্যাচের গতি বাড়ে এবং আক্রমণাত্মক ফুটবলে দখল প্রতিষ্ঠা করে স্বাগতিকরা।
এরপর ১–১ অবস্থায় এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ আসে বার্সেলোনার। আতলেতিকোর পাবলো বারিয়োসের ফাউলে রেফারি পেনাল্টির সিদ্ধান্ত দিলে স্পট কিকে এগিয়ে আসেন রবার্ট লেভানদোস্কি। তবে তার নেওয়া শট পোস্টের বাইরে দিয়ে চলে যায়। পেনাল্টি মিসের ফলে লিড নেওয়ার সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া হলেও দলের খেলায় প্রভাব পড়ে না।
বিরতির পর দু’দলই আক্রমণ–প্রতি-আক্রমণে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। বল দখলে এগিয়ে থাকলেও গোলের সুযোগ কাজে লাগাতে কিছুটা সময় নেয় বার্সেলোনা। শেষ পর্যন্ত ৬৫তম মিনিটে তরুণ তারকা লামিন ইয়ামালের দারুণ ড্রিবলিং এবং নিখুঁত পাসিং থেকে বল পেয়ে নিচু শটে জাল খুঁজে পান দানি অলমো। গোলটির মাধ্যমে ২–১ গোলে এগিয়ে যায় স্বাগতিক দল এবং ম্যাচের রূপ বদলে যায়।
একই সময়ে আতলেতিকোও কয়েকটি গোলের সুযোগ তৈরি করে। সবচেয়ে বড় সুযোগ আসে থিয়াগো আলমাদার সামনে। গোলরক্ষককে কাটিয়ে প্রায় খালি পোস্ট পেয়েও লক্ষ্যভ্রষ্ট করেন তিনি, যা মুহূর্তটিকে ম্যাচের মোড় ঘোরানোর অন্যতম সম্ভাবনা হিসেবে দেখা হচ্ছিল। সুযোগ হাতছাড়া হওয়ায় প্রতিপক্ষ সমতায় ফেরার সম্ভাবনা নষ্ট হয়ে যায়।
ম্যাচের ৮৭তম মিনিটে এসে ব্যবধান আরও বাড়িয়ে নেয় বার্সেলোনা। আলেহান্দ্রো বালদের বাম দিক থেকে বাড়ানো নিখুঁত ক্রস নিয়ন্ত্রণে নিয়ে কাছ থেকে বল জালে পাঠান ফেরান তোরেস। এই গোল নিশ্চিত করে স্বাগতিকদের ৩–১ ব্যবধানের জয় এবং ম্যাচের বাকি সময়েও দলটি খেলায় দাপট ধরে রাখে।
তবে জয়ের আনন্দের মাঝেও উদ্বেগ তৈরি করেছে দানি অলমোর চোট। দ্বিতীয়ার্ধে সংঘর্ষে তার কাঁধে আঘাত লাগে এবং তাকে মাঠ ছাড়তে হয়। চিকিৎসক দল তার ইনজুরির মাত্রা মূল্যায়ন করছে। দলটির সামনে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ থাকায় অলমোর সুস্থতা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সে বার্সেলোনা লিগ শিরোপা দৌড়ে নিজেদের অবস্থান দৃঢ় করেছে। মৌসুমের দ্বিতীয় ভাগে প্রবেশের আগে ধারাবাহিকতা বজায় রাখা দলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অপরদিকে রিয়াল মাদ্রিদের পরবর্তী ম্যাচের ফলাফল লিগ তালিকার চিত্রে প্রভাব ফেলতে পারে। শিরোপা লড়াই আরও উত্তেজনাপূর্ণ আকার ধারণ করার ইঙ্গিত দিচ্ছে এই ম্যাচের ফলাফল।


