অনলাইন ডেস্ক
শ্রীলঙ্কায় ঘূর্ণিঝড় ‘ডিটওয়ার’–এর প্রভাবে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যা ও ভূমিধ্বসে ব্যাপক প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির পর দেশটিতে মানবিক সহায়তা পাঠিয়েছে বাংলাদেশ। সাম্প্রতিক দুর্যোগে এখন পর্যন্ত ৩৩৪ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে এবং কমপক্ষে দুই শতাধিক মানুষ নিখোঁজ রয়েছে। পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় বাংলাদেশ সরকার জরুরি ভিত্তিতে ত্রাণসামগ্রী পাঠানোর উদ্যোগ গ্রহণ করে এবং সশস্ত্র বাহিনীর তত্ত্বাবধানে তা বাস্তবায়িত হয়।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, প্রাকৃতিক দুর্যোগে শ্রীলঙ্কায় ২০ হাজারের বেশি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দেশটির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বন্যা ও ভূমিধ্বসের কারণে ১ লাখ ২৩ হাজারের বেশি মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে প্রশাসন। ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলগুলোতে এখনও উদ্ধার অভিযান চলছে এবং নিখোঁজ ব্যক্তিদের সন্ধানে কাজ করছে স্থানীয় উদ্ধারকারী দলগুলো।
দুর্যোগের পর শ্রীলঙ্কা সরকার দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করে এবং আন্তর্জাতিক সহায়তা কামনা করে। এ প্রেক্ষাপটে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কলম্বোতে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশনের কাছে জরুরি ভিত্তিতে খাদ্য, বিভিন্ন চিকিৎসাসামগ্রী এবং অন্যান্য ত্রাণসামগ্রী পাঠানোর অনুরোধ জানায়। বিষয়টি বাংলাদেশ সরকার পর্যালোচনা করে দ্রুত মানবিক সহায়তা পাঠানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
সরকারি সিদ্ধান্তের পর সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের সার্বিক সমন্বয়ে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি সি-১৩০জে পরিবহন বিমান আজ সকালে কলম্বোর উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। বিমানে বিমান বাহিনীর ১৫ সদস্যের একটি দলসহ সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের একজন প্রতিনিধি এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন প্রতিনিধি ত্রাণ কার্যক্রমে অংশ নিতে যান। মিশনের দায়িত্বে ছিলেন এয়ার কমডোর মোহাম্মদ সহিদুল ইসলাম। ত্রাণ বহনকারী এই বিমানে প্রায় ১০ টন মানবিক সহায়তা প্রেরণ করা হয়, যার মধ্যে ছিল তাঁবু, শুকনো খাবার, মশারি, টর্চলাইট, গামবুট, ভেস্ট, হ্যান্ড গ্লাভস, উদ্ধার অভিযানের জন্য ব্যবহৃত হেলমেট এবং উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ওষুধ।
ত্রাণ সামগ্রী পাঠানোর এই উদ্যোগকে দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ধারাবাহিকতা হিসেবে দেখা হচ্ছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়ে পারস্পরিক সহযোগিতা দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক মানবিক ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হিসেবে বিবেচিত হয়। শ্রীলঙ্কার ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলে বাংলাদেশ থেকে পাঠানো সরঞ্জামগুলো বিশেষভাবে সহায়ক হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশেষ করে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে তাঁবু, শুকনো খাবার ও চিকিৎসাসামগ্রীর প্রয়োজনীয়তা অত্যন্ত বেশি বলে জানিয়েছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ।
মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর পর সেখানে স্থানীয় প্রশাসন ও আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনার পরিকল্পনা রয়েছে। দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে তাৎক্ষণিক সহায়তা প্রদানের পাশাপাশি আক্রান্ত এলাকা পুনর্বাসনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়ে শ্রীলঙ্কা প্রশাসন ইতোমধ্যে আলোচনা শুরু করেছে।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পাঠানো বিমানটি মানবিক সহায়তা হস্তান্তর শেষে একই দিনে দেশে ফিরে আসার কথা রয়েছে। এর পাশাপাশি ভবিষ্যতে প্রয়োজন হলে আরও সহায়তা পাঠানোর বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় তথ্য আদান–প্রদান অব্যাহত রয়েছে।
দুর্যোগের পর আন্তর্জাতিক মহল থেকে সহায়তার আহ্বান শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতির ভয়াবহতা তুলে ধরে। ঘূর্ণিঝড়-পরবর্তী এই বন্যা ও ভূমিধ্বস দেশটির অবকাঠামো, যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং জনজীবনে গভীর সংকট তৈরি করেছে। দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পুনর্গঠনের জন্য উল্লেখযোগ্য আন্তর্জাতিক সহায়তার প্রয়োজন হবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। মানবিক সহায়তার পাশাপাশি পুনর্বাসন, স্বাস্থ্যসেবা এবং খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করা শ্রীলঙ্কার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পরিস্থিতির উন্নয়ন না হওয়া পর্যন্ত শ্রীলঙ্কায় জরুরি ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের সহায়তা ক্ষতিগ্রস্ত জনগণের তাৎক্ষণিক সংকট মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।


