অনলাইন ডেস্ক
‘বাংলাদেশের জুলাই বিপ্লব’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সেমিনারে অংশ নিতে বাংলাদেশের কয়েকজন তরুণ রাজনৈতিক ও শিক্ষার্থী নেতাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড ইউনিয়ন। আগামী বছরের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে অক্সফোর্ড ইউনিয়ন ও অক্সফোর্ড বাংলা সোসাইটির যৌথ উদ্যোগে এই সেমিনার আয়োজনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি অক্সফোর্ড ইউনিয়ন সোসাইটির প্রেসিডেন্ট মুসা হিরাজ স্বাক্ষরিত আমন্ত্রণপত্রগুলো বাংলাদেশে আমন্ত্রিত প্রতিনিধিদের কাছে পৌঁছায়।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, আমন্ত্রিতদের মধ্যে রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সহসভাপতি আবু সাদিক কায়েম, জাতীয় নাগরিক পার্টির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ, ইউনাইটেড পিপল’স বাংলাদেশ-এর আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ এবং ডাকসুর এজিএস মহিউদ্দিন খান। প্রত্যেককে পৃথকভাবে পাঠানো চিঠির মাধ্যমে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আমন্ত্রণপত্রে বলা হয়েছে, তারা ২০২৪ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন ও পরবর্তী সময় ক্ষমতার রূপান্তরে ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে নেতৃত্বপূর্ণ ও প্রভাবশালী ভূমিকা পালন করেছেন। ফলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তাদের অভিজ্ঞতা ও বিশ্লেষণ গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত হচ্ছে।
ডাকসুর ভিপি আবু সাদিক কায়েম জানিয়েছেন যে, প্রাথমিকভাবে তিনি নিজসহ কয়েকজনের আমন্ত্রণ প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছেন। তার মতে, আমন্ত্রিতরা একত্রে বসে বিস্তারিত আলোচনা করবেন এবং সেমিনারে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি ও সম্ভাব্য প্রতিনিধিদলের আকার সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেবেন। তিনি উল্লেখ করেন যে, আমন্ত্রণপত্রে আলোচনার ক্ষেত্র, বিষয়বস্তুর গুরুত্ব এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তরুণ নেতৃত্বের ভূমিকা তুলে ধরা হয়েছে।
অক্সফোর্ড ইউনিয়নের পাঠানো চিঠিতে জানানো হয়েছে যে, আলোচকরা মূল প্যানেল সেশনে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, গবেষক ও নীতি–বিশ্লেষকদের সঙ্গে নীতি, রাজনীতি এবং দক্ষিণ এশিয়ার সমসাময়িক প্রেক্ষাপট নিয়ে মতবিনিময়ের সুযোগ পাবেন। প্যানেল আলোচনায় বাংলাদেশে সাম্প্রতিক গণআন্দোলনের পটভূমি, ছাত্র আন্দোলনের পরিবর্তনধারা, রাজনৈতিক রূপান্তরের গতিবিধি এবং আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে এর গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সেমিনারের অন্যতম লক্ষ্য হলো, বাংলাদেশের জুলাই আন্দোলনের অভিজ্ঞতা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তুলে ধরা। বিশেষত তরুণ নেতৃত্বের সংগঠনশৈলী, প্রতিবাদ-ব্যবস্থাপনা, শান্তিপূর্ণ গণমোবিলাইজেশন এবং সামাজিক মাধ্যমে জনমত গঠনের প্রভাব—এ বিষয়গুলো আলোচনার কেন্দ্রে থাকবে বলে জানা গেছে। আমন্ত্রণপত্রে তরুণ নেতৃত্বের অংশগ্রহণকে গণতান্ত্রিক চর্চা ও বৈশ্বিক রাজনৈতিক আলাপ-আলোচনার জন্য মূল্যবান বলে অভিহিত করা হয়েছে।
অক্সফোর্ড ইউনিয়ন উল্লেখ করেছে যে, আমন্ত্রিতদের পুরো সফরসূচির সমন্বয়, স্থানীয় ব্যবস্থাপনা এবং প্যানেল কার্যক্রম আয়োজনের দায়িত্ব প্রতিষ্ঠানটিই গ্রহণ করবে। এছাড়া আন্তর্জাতিক প্রতিনিধিদের জন্য নিরাপত্তা, যোগাযোগ এবং বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রয়োজনীয় সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য আলাদা টিম নিয়োজিত থাকবে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ছাত্র-জনতার আন্দোলন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখার বিষয়টি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও আলোচনায় এসেছে। বিশেষত কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং পরবর্তী রাজনৈতিক উত্তরণ তরুণদের নেতৃত্ববোধ, নাগরিক সম্পৃক্ততা এবং গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণ নিয়ে নতুন বিতর্ক ও গবেষণার ক্ষেত্র সৃষ্টি করেছে। এসব কারণে অক্সফোর্ডের মতো আন্তর্জাতিক আলোচনামঞ্চে বাংলাদেশের তরুণ নেতাদের আমন্ত্রণকে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হিসেবে দেখা হচ্ছে।
সেমিনারের প্রস্তুতি বিষয়ে আমন্ত্রিত নেতারা শিগগিরই যৌথভাবে মতবিনিময় করবেন বলে জানা গেছে। আন্তর্জাতিক এই আয়োজনে তাদের অংশগ্রহণ বাংলাদেশের সমসাময়িক রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ও সামাজিক পরিবর্তনের ধারা বৈশ্বিক গবেষণায় নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।


