ইমন চক্রবর্তীর রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন ঘিরে বিতর্ক

ইমন চক্রবর্তীর রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন ঘিরে বিতর্ক

 

বিনোদন ডেস্ক

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমন্ত্রণে নবান্নের সভাঘরে তৃণমূল সরকারের ১৫ বছরের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড নিয়ে একটি বিশেষ গান পরিবেশন করার পর শিল্পী ইমন চক্রবর্তীর নামকে ঘিরে সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা তৈরি হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে নিজেকে রাজনীতির বাইরে রাখার কথা বললেও প্রথমবার সরাসরি একটি রাজনৈতিক মঞ্চে গান গাওয়ায় তাকে নিয়ে শুরু হয়েছে তীব্র সমালোচনা ও বিতর্ক।

ইমন চক্রবর্তীকে নিয়ে বিতর্কের সূত্রপাত ঘটে যখন নবান্নে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি দলের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরে রচিত একটি গান পরিবেশন করেন। মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতেই অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয় এবং পরবর্তীতে এর ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিও প্রকাশের পর বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে বহু ব্যক্তি তার অংশগ্রহণের সমালোচনা করেন। অনেকে মন্তব্য করেন যে, একজন জনপ্রিয় শিল্পীর রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন তার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মন্তব্যগুলোর মধ্যে একাংশ তাকে রাজনৈতিক স্বার্থে কাজ করার অভিযোগও তোলেন।

ইমন চক্রবর্তী অতীতে একাধিকবার জানিয়েছেন যে তিনি রাজনীতির সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করতে চান না এবং শিল্পী পরিচয়ই তার একমাত্র পরিচিতি। তিনি বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক কর্মসূচি ও মঞ্চ থেকে দূরত্ব বজায় রেখেছেন। এমনকি নির্বাচনে টিকিট পাওয়ার সম্ভাবনা সম্পর্কে তাকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি তা সরাসরি নাকচ করেছিলেন। এ কারণে তার সাম্প্রতিক উপস্থিতি অনেকের কাছে অপ্রত্যাশিত বলে মনে হয়েছে। রাজনৈতিক মঞ্চে গান গাওয়াকে কেন্দ্র করে জনমনে যে প্রশ্ন উঠেছে, তা মূলত তার পূর্বের অবস্থানের বিপরীত চিত্র হিসেবেই দেখা হচ্ছে।

সমালোচনা বাড়তে থাকায় ইমন চক্রবর্তী সম্প্রতি ভারতীয় গণমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বিষয়টি সম্পর্কে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেন। তিনি বলেন, তাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল, এবং একজন শিল্পী হিসেবে সে আমন্ত্রণ রক্ষা করাই তার দায়িত্ব বলে মনে করেছেন। সাক্ষাৎকারে তিনি উল্লেখ করেন যে গানের কথা ও সুর আগে থেকেই তাকে পাঠানো হয়েছিল এবং তিনি শুধু নির্দেশনা অনুযায়ী গানটি পরিবেশন করেছেন। তার দাবি, এ আয়োজনকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হিসেবে দেখার কোনো কারণ নেই, বরং তিনি পেশাদার শিল্পী হিসেবেই এতে অংশ নিয়েছেন।

ইমন আরও জানান যে গান পরিবেশনের পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাকে উঠে দাঁড়িয়ে সম্মান জানিয়েছেন, যা তিনি একজন সংগীতশিল্পীর প্রতি সৌজন্য হিসেবেই দেখেছেন। তিনি বলেন, অনুষ্ঠানে রাজনীতি নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। বরং মুখ্যমন্ত্রী ব্যক্তিগতভাবে তার পরিবারের সংগীত পরিবেশনা, বাবা-মায়ের গল্পসহ নানা ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন। ইমন চক্রবর্তীর বক্তব্যে বোঝা যায়, তিনি অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক আলোচনার বদলে সাংস্কৃতিক প্রাসঙ্গিকতাই বেশি পেয়েছেন।

সমালোচনার বিষয়ে ইমন জানান যে, যদি কেউ মনে করেন তিনি কোনো পক্ষ নিয়েছেন বা রাজনৈতিকভাবে নিজেকে যুক্ত করেছেন, তবে সে বিষয়ে তার বলার কিছু নেই। তিনি বলেন, একজন শিল্পী হিসেবে তার কাজ হচ্ছে গান গাওয়া, এবং সেই দায়িত্বই তিনি পালন করেছেন। বিতর্ক নিয়ে তিনি অতিরিক্ত মন্তব্য করতে চান না বলেও জানিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি পাওয়া সম্মান ও ভালোবাসার কথাও কৃতজ্ঞতার সঙ্গে উল্লেখ করেছেন শিল্পী।

এ ধরনের ঘটনা ভারতীয় উপমহাদেশের শিল্প জগতের জন্য নতুন নয়। বহু সময় শিল্পীরা রাজনৈতিক মঞ্চে পারফর্ম করলে তাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়ে থাকে। কেউ কেউ মনে করেন, শিল্পীদের অংশগ্রহণ রাজনৈতিক প্রচারণার অংশ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে, আবার কেউ কেউ সাংস্কৃতিক বিনিময় হিসেবে এসবকে দেখতে চান। ইমন চক্রবর্তীর ক্ষেত্রেও সেই একই বিতর্ক সামনে এসেছে, যা শিল্পী-রাজনীতি সম্পর্ক নিয়ে নতুন করে আলোচনা তৈরি করেছে।

ইমন চক্রবর্তী সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলা গানের জগতে উল্লেখযোগ্য অবস্থান তৈরি করেছেন। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত এই শিল্পী মূলত চলচ্চিত্র, আধুনিক গান ও কনসার্টে নিয়মিত কাজ করে আসছেন। তাই রাজনৈতিক মঞ্চে তার উপস্থিতি ভক্ত-অনুরাগীদের জন্যও ছিল বিস্ময়কর। বিতর্ক বাড়তে থাকলেও শিল্পী তার অবস্থানে অনড় রয়েছেন এবং বিষয়টিকে শুধুমাত্র একটি পেশাগত দায়িত্ব হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন।

এই ঘটনার পরবর্তী প্রতিক্রিয়া এখনো চলমান। বিশেষজ্ঞদের মতে, জনপ্রিয় শিল্পীদের রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ ভবিষ্যতে আরও বেশি আলোচনার জন্ম দিতে পারে, কারণ জনমনে শিল্পী পরিচয়ের পাশাপাশি নিরপেক্ষতার প্রত্যাশা থাকে। ইমন চক্রবর্তীর অভিজ্ঞতা সেই বৃহত্তর আলোচনাকেই আবার সামনে নিয়ে এসেছে।

বিনোদন শীর্ষ সংবাদ