জাতীয় ডেস্ক
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে স্থানান্তরের প্রস্তুতি দ্রুততার সঙ্গে এগিয়ে চলেছে। চিকিৎসকদের সর্বশেষ পর্যালোচনায় তাকে অত্যাধুনিক চিকিৎসা সুবিধা সম্পন্ন হাসপাতালে নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করা হলে পরিবারের পক্ষ থেকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। লন্ডনে তার চিকিৎসা-প্রক্রিয়ার সার্বিক সমন্বয়ে যুক্ত রয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান, যিনি শুক্রবার সকালে ঢাকায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে।
বৃহস্পতিবার লন্ডন থেকে তার ঢাকা যাত্রার প্রস্তুতি নেওয়া হলেও, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার ওপর নির্ভর করে এর আগেই চিকিৎসা-উদ্দেশ্যে তাকে এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সে নেওয়ার সম্ভাবনাও বিবেচনায় রাখা হচ্ছে। যদি তার আগেই প্রয়োজনীয় ফ্লাইট ব্যবস্থা সম্পন্ন হয়, তবে খালেদা জিয়াকে বহনকারী চিকিৎসক দল জোবাইদা রহমান ঢাকায় পৌঁছার আগেই লন্ডনের উদ্দেশে যাত্রা করতে পারে।
চিকিৎসা-সংক্রান্ত এই ব্যবস্থাপনায় যুক্ত দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানিয়েছে, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করতে বিদেশি বিশেষজ্ঞদের অংশগ্রহণ ক্রমেই গুরুত্ব পাচ্ছে। ইতোমধ্যে লন্ডনের চিকিৎসক রিচার্ড বিল ঢাকায় এসে পৌঁছেছেন। চিকিৎসা-যাত্রায় তার সঙ্গে থাকবেন খালেদা জিয়ার পুত্রবধূ শর্মিলা রহমান, কয়েকজন চিকিৎসক এবং সহায়ক কর্মীরা। সার্বিক প্রক্রিয়াটি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সরাসরি নজরদারি করছেন বলে জানা গেছে।
২৩ নভেম্বর ফুসফুস ও হৃদযন্ত্রের গুরুতর সংক্রমণের কারণে খালেদা জিয়া অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ভর্তি হওয়ার সময় তার শারীরিক পরিস্থিতি ‘সংকটাপন্ন’ হিসেবে বিবেচিত ছিল। পরবর্তীতে চিকিৎসকরা জানান, তার শ্বাসযন্ত্রের জটিলতা ছাড়াও দীর্ঘদিন ধরে থাকা কিডনির সমস্যার অবনতি ঘটেছে এবং নতুন করে নিউমোনিয়ার সংক্রমণ ধরা পড়েছে।
এই বহুমাত্রিক জটিলতার কারণে চিকিৎসা-ব্যবস্থায় বিভিন্ন বিভাগীয় বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়। অধ্যাপক ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে গঠিত এই বোর্ডে যুক্ত রয়েছেন দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞরা। লন্ডনে অবস্থান করেও চিকিৎসা পরিকল্পনায় পরামর্শ দিয়ে আসছেন বোর্ডের সদস্য ডা. জোবাইদা রহমান। বোর্ডের সুপারিশ অনুযায়ী, রোগীর দীর্ঘমেয়াদি জটিলতা, বয়সজনিত ঝুঁকি এবং উন্নত লাইফ সাপোর্ট সুবিধার প্রয়োজনীয়তা পর্যালোচনা করে লন্ডনে চিকিৎসার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়।
চিকিৎসা-প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, খালেদা জিয়ার ফুসফুসের সংক্রমণ ও হৃদরোগ—দুটি জটিলতা একযোগে তার শারীরিক স্থিতিশীলতায় বড় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। এ ধরনের রোগীর উন্নত নিবিড় পরিচর্যা, বহুমুখী পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং উচ্চঝুঁকিপূর্ণ চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার জন্য আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন হাসপাতালে স্থানান্তর প্রয়োজন হয়ে পড়ে। লন্ডনের হাসপাতালগুলোতে শ্বাসযন্ত্র, কিডনি এবং হৃদরোগের সমন্বিত চিকিৎসায় বিশেষায়িত ইউনিট থাকায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এদিকে বিদেশে চিকিৎসার প্রস্তুতির পাশাপাশি তার বর্তমান শারীরিক অবস্থার দৈনিক অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করছে মেডিকেল বোর্ড। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বোর্ড সদস্যরা রোগীর শারীরিক সূচক, সংক্রমণের মাত্রা ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গের কার্যকারিতা মূল্যায়ন করছেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার ক্ষেত্রে রোগীর ভ্রমণক্ষমতাও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয়, যা নিশ্চিত করতে চিকিৎসকদের বিশেষ প্রস্তুতি রয়েছে।
চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘমেয়াদে জটিল রোগ বহনকারী রোগীদের ক্ষেত্রে চিকিৎসা স্থানান্তর একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত, যার জন্য পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি, বিশেষজ্ঞদের সমন্বিত পরামর্শ এবং জরুরি সাপোর্ট নিশ্চিত করাই মূল লক্ষ্য। খালেদা জিয়ার জন্য পরিকল্পিত এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সে বিশেষ শ্বাসযন্ত্র সাপোর্ট, নিবিড় পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম থাকবে। এই যাত্রায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও সহকারী কর্মীরা সর্বক্ষণ তার শারীরিক অবস্থার ওপর নজর রাখবেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো ধারণা করছে, প্রয়োজনীয় চিকিৎসা-ব্যবস্থা নিশ্চিত হওয়ার পর লন্ডনে স্থানান্তর সম্পন্ন হলে তার চিকিৎসা পর্যায়ে আরও বিস্তারিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে। চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের মতে, রোগীর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল হলে এবং ধাপে ধাপে উন্নতি ঘটলে উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ সম্ভব হবে।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসা-প্রক্রিয়াকে ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গন, কূটনৈতিক মহল এবং চিকিৎসা পর্যবেক্ষকদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়েছে। চিকিৎসকদের রিপোর্ট ও পরিবারের সিদ্ধান্ত ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, তার দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হিসেবে আন্তর্জাতিক হাসপাতালে স্থানান্তরই এখন মূল অগ্রাধিকার।


