খেলাধুলা ডেস্ক
আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের পর আসন্ন বিপিএল শুরুর আগে কয়েক দিনের বিশ্রাম পেয়েছেন জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে শুরু হতে যাওয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ পর্যন্ত বাংলাদেশ দলের আর কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ নির্ধারিত নেই। এই বিরতির মধ্যেই জাতীয় দলের কোচিং স্টাফদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা ও গুঞ্জন উঠে আসে। বিশেষ করে সিনিয়র সহকারী কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন এবং ব্যাটিং কোচ হিসেবে সাম্প্রতিক সিরিজে যুক্ত হওয়া মোহাম্মদ আশরাফুলকে বিশ্বকাপ দলে রাখা হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছিল।
লিড অনুচ্ছেদ
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান নাজমুল আবেদিন ফাহিম জানিয়েছেন, আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে কোচিং স্টাফে কোনো পরিবর্তন আনা হচ্ছে না এবং সিনিয়র সহকারী কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন ও ব্যাটিং কোচ মোহাম্মদ আশরাফুলসহ পুরো কোচিং দলই বিশ্বকাপে দলের সঙ্গে থাকবেন।
মূল প্রতিবেদন
গেল মাসে মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার খবর প্রকাশ্যে এলে ক্রিকেট অঙ্গনে আলোচনা তৈরি হয়। অনেকে মনে করেছিলেন, আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ শেষেই পদত্যাগ কার্যকর হতে পারে। তবে ক্রিকেট বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, সালাউদ্দিনের পদত্যাগ বোর্ড গ্রহণ করেনি এবং তিনি দায়িত্ব চালিয়ে যাবেন। সবকিছু ঠিক থাকলে তিনি ২০২৭ সাল পর্যন্ত চুক্তির মেয়াদের পুরো সময়ই জাতীয় দলের সঙ্গে থাকবেন।
সালাউদ্দিন ঘরোয়া ক্রিকেটে দীর্ঘ সময় ধরে কোচ হিসেবে অত্যন্ত পরিচিত মুখ। ২০২৪ সালের নভেম্বরে তিনি জাতীয় দলের সিনিয়র সহকারী কোচ হিসেবে দায়িত্ব পান, যা মূলত তার দ্বিতীয়বার জাতীয় দলে কাজের সুযোগ। এর আগে ২০০৬ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত তিনি জাতীয় দলের সহকারী কোচ ও ফিল্ডিং কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তী সময়ে ২০১০–১১ সালে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের ন্যাশনাল ক্রিকেট একাডেমিতে বিশেষজ্ঞ কোচ হিসেবে কাজ করেন। তার অভিজ্ঞতা এবং ঘরোয়া ক্রিকেটে দীর্ঘদিনের সম্পৃক্ততা তাকে জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের কাছে গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
অন্যদিকে, সাবেক অধিনায়ক ও অভিজ্ঞ ব্যাটার মোহাম্মদ আশরাফুলকে সাম্প্রতিক আয়ারল্যান্ড সিরিজে ব্যাটিং কোচ হিসেবে যুক্ত করা হয়। তার ভবিষ্যৎ ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও বোর্ড নিশ্চিত করেছে যে তিনি বিশ্বকাপেও দলের সঙ্গে থাকবেন। ব্যাটিং পরামর্শক হিসেবে তার উপস্থিতি তরুণ ক্রিকেটারদের জন্য উপকারী হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, বিশেষ করে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে যেখানে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং মানসিক দৃঢ়তা গুরুত্বপূর্ণ।
জাতীয় দলের কোচিং স্টাফে স্থিতিশীলতা বজায় রাখার এই সিদ্ধান্তকে বোর্ড আসন্ন বিশ্বকাপের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে দেখছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিভিন্ন সময়ে কোচিং স্টাফে পরিবর্তন হওয়ায় দলকে নতুন পরিকল্পনায় মানিয়ে নিতে সময় নিতে হয়েছে। তাই বিশ্বকাপের মতো বড় টুর্নামেন্টের আগে একই কোচিং সেটআপ রাখাকে ধারাবাহিকতা বজায় রাখার প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে বাংলাদেশ দল সাম্প্রতিক সিরিজে কিছু ইতিবাচক পারফরম্যান্স দেখাতে সক্ষম হয়েছে। বিশেষ করে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ জয় দলের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে। যদিও বিশ্বকাপে প্রতিপক্ষ দলগুলো অনেক শক্তিশালী, তবে কোচিং স্টাফের ধারাবাহিকতা খেলোয়াড়দের প্রস্তুতিতে সহায়ক হতে পারে। কোচদের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়নেরও সুযোগ তৈরি হবে।
বিশ্বকাপকে সামনে রেখে এখন দলের প্রস্তুতির মূল অংশ হিসেবে কাজ করবে বিপিএল। ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টে জাতীয় দলের অধিকাংশ ক্রিকেটার অংশ নেবেন, যা ম্যাচ প্র্যাকটিসের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। কোচিং স্টাফও বিপিএলের পারফরম্যান্স নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করবেন, যাতে বিশ্বকাপের জন্য চূড়ান্ত স্কোয়াড এবং কৌশল নির্ধারণে সহায়তা পাওয়া যায়।
এদিকে বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দল একই মাঠে একাধিক ম্যাচ খেলবে বলে জানা গেছে, যা খেলোয়াড়দের কন্ডিশন ও পিচ সম্পর্কে পরিচিত হওয়ার সুযোগ দেবে। কোচিং স্টাফ মনে করছেন, মাঠ ও আবহাওয়ার সঙ্গে দ্রুত মানিয়ে নেওয়া দলের পারফরম্যান্সে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
সব মিলিয়ে, কোচিং স্টাফ অপরিবর্তিত রেখে দলকে বিশ্বকাপের দিকে এগিয়ে নেওয়ার প্রস্তুতি শুরু করেছে বিসিবি। আগামী কয়েক মাসের প্রস্তুতি, বিপিএলে পারফরম্যান্স এবং কোচিং স্টাফের পরিকল্পনা মিলিয়ে বাংলাদেশ দল বিশ্বকাপে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ক্রিকেট উপহার দিতে চায়।


