জাতীয় ডেস্ক
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে ফেরার জন্য এখনো লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনের কাছে ‘ট্রাভেল পাস’ আবেদন করেননি বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তারেক রহমানের পক্ষ থেকে এ ধরনের কোনো আবেদন পাওয়া যায়নি বলে তিনি জানান। এ অবস্থায় খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার বিষয়ে মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্তই তারেক রহমানের দেশে ফেরা ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরবর্তী ধাপ নির্ধারণে প্রভাব ফেলতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো ধারণা করছে।
বিএনপির শীর্ষ একটি সূত্র জানায়, বর্তমানে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অগ্রগতি ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এবং গঠিত মেডিকেল বোর্ড পর্যালোচনা করছে। তাদের আনুষ্ঠানিক মতামত পাওয়ার পরই নির্ধারিত হবে খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে কি না। এই সিদ্ধান্তের ওপরই আংশিকভাবে নির্ভর করছে তারেক রহমানের দেশে ফেরার সময়সূচি।
সূত্রটি আরও জানায়, চিকিৎসকরা যদি মত দেন যে খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়া জরুরি, তাহলে সম্ভাব্য গন্তব্য হিসেবে লন্ডনকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য লন্ডনে গেলে তারেক রহমানও সেখানেই অবস্থান করবেন বলে দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে আলোচনা চলছে। তবে দীর্ঘ সময়ের আকাশযাত্রা চিকিৎসার স্বার্থে ঝুঁকিপূর্ণ হলে তুলনামূলকভাবে স্বল্প দূরত্বের কারণে সিঙ্গাপুরকেও সম্ভাব্য বিকল্প হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য জানান, তারেক রহমান ইতিমধ্যে দেশে ফেরার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। তবে তিনি তার মায়ের শারীরিক পরিস্থিতি ও চিকিৎসাবিষয়ক সিদ্ধান্তের ওপরই চূড়ান্তভাবে নির্ভর করছেন। দলের ওই নেতা উল্লেখ করেন, চিকিৎসক দল ও মেডিকেল বোর্ড খালেদা জিয়ার ভবিষ্যৎ চিকিৎসা কোথায় হবে, সে বিষয়ে চূড়ান্ত মত দেওয়ার পরই তারেক রহমান তার যাত্রা-সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে দলীয় ও চিকিৎসাসংশ্লিষ্ট মহলে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে উদ্বেগ বেড়েছে। এর আগে ২৩ নভেম্বর রাতে তাকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ভর্তি হওয়ার পর থেকে ১১ দিন ধরে তিনি সেখানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। চিকিৎসকরা নিয়মিত তার শারীরিক উন্নতি, জটিলতা ও সম্ভাব্য চিকিৎসার বিকল্পগুলো পর্যালোচনা করছেন।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে এই অনিশ্চয়তা দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনেও তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব ফেলছে। তারেক রহমানের দেশে ফিরে দলের নেতৃত্বে সরাসরি যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা বিভিন্ন মহলে গুরুত্বসহকারে আলোচিত হলেও, চিকিৎসা সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে স্পষ্টতা আসছে না। দলীয় নেতারা মনে করছেন, বিএনপির বর্তমান রাজনৈতিক কর্মসূচি, সাংগঠনিক কার্যক্রম এবং ভবিষ্যৎ কৌশল নির্ধারণে তারেক রহমানের দেশে ফেরা একটি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হতে পারে। তবে এর সময়কাল ও প্রেক্ষাপট নির্ভর করবে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার পরবর্তী ধাপের ওপর।
এদিকে, খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা-সংক্রান্ত সিদ্ধান্তে সরকারের অনুমোদন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সুপারিশ—এসব বিষয়ও গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় আসছে। চিকিৎসক দলের পর্যবেক্ষণ ও সরকারের সিদ্ধান্তের সমন্বয়ে খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়া সম্ভব হবে কি না, তা এখনও অনিশ্চিত রয়েছে।
এই প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হলে তারেক রহমানের দেশে ফেরাও আরও পিছিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যগত অবস্থা এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সিদ্ধান্তগুলো শুধু বিএনপির অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেই নয়, সামগ্রিক জাতীয় রাজনৈতিক পরিবেশেও প্রভাব ফেলতে পারে। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সবকিছুই শেষ পর্যন্ত চিকিৎসক দলের সিদ্ধান্ত ও সরকারি অনুমোদনের ওপর নির্ভর করছে।
বর্তমানে চিকিৎসকের পরবর্তী নির্দেশনার অপেক্ষায় রয়েছেন বিএনপির নেতারা, আর তারেক রহমানও অপেক্ষা করছেন মায়ের চিকিৎসা-সংক্রান্ত আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্তের জন্য।


