অর্থনীতি ডেস্ক
দেশের জ্বালানি খাতের বর্তমান অবস্থা, নীতি-সংস্কার, নবায়নযোগ্য জ্বালানির সম্ভাবনা ও সবুজ রূপান্তরকে কেন্দ্র করে তিন দিনব্যাপী ‘তৃতীয় বাংলাদেশ জ্বালানি সম্মেলন ২০২৫’ আগামী ৬ ডিসেম্বর রাজধানীতে শুরু হচ্ছে। বিজয় সরণিতে বাংলাদেশ সামরিক জাদুঘরে অনুষ্ঠেয় এ সম্মেলন চলবে ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত, যেখানে সরকারি নীতিনির্ধারক, বিশেষজ্ঞ, গবেষক, উন্নয়ন সংস্থা, বিশ্ববিদ্যালয় ও বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিরা অংশ নেবেন।
সম্মেলন আয়োজনকারী বাংলাদেশের প্রতিবেশ ও উন্নয়ন বিষয়ক কর্মজোট (বিডাব্লিউজিইডি) এক সংবাদ সম্মেলনে জানায়, দেশের জ্বালানি খাতের নীতি-দিকনির্দেশনা নির্ধারণ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ব্যবস্থার স্থায়িত্ব, পরিবেশগত প্রভাব হ্রাস এবং সবুজ জ্বালানি রূপান্তরে ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যেই এই আয়োজন। সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন অন্তবর্তীকালীন সরকারের পরিবেশ, বন ও জ্বালানি পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা। উদ্বোধনী দিনের সকাল ১০টায় অনুষ্ঠান শুরু হবে।
আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বিডাব্লিউজিইডির সঙ্গে আরও ১৬টি সংগঠন যৌথভাবে এবারের সম্মেলন আয়োজন করছে। দেশের বিদ্যুৎ, জ্বালানি, পরিবেশ আইন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রযুক্তি, গবেষণা খাত ও নাগরিক উদ্যোগের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এতে সম্পৃক্ত রয়েছে। সম্মেলনে নীতিগত আলোচনার পাশাপাশি জ্বালানি রূপান্তর, বিনিয়োগ, প্রযুক্তিগত দক্ষতা বৃদ্ধি ও সবুজ প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা নিয়ে কর্মশালা অনুষ্ঠিত হবে।
সম্মেলনে মোট দশটি টেকনিক্যাল সেশন অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে জ্বালানি খাতের সামগ্রিক চ্যালেঞ্জ, বিদ্যমান নীতির সীমাবদ্ধতা ও ভবিষ্যতের পরিকল্পনা তুলে ধরা হবে। আলোচ্য সেশনগুলোর মধ্যে রয়েছে— জ্বালানি খাতের বর্তমান পরিস্থিতি ও ভবিষ্যৎ পথরেখা, জ্বালানি রূপান্তরে বাণিজ্যিক ব্যাংকের ভূমিকা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের নীতিগত সামঞ্জস্য, সবুজায়নে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা, নবায়নযোগ্য জ্বালানির বাস্তবায়ন সমস্যা ও সম্ভাবনা, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের মাধ্যমে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, শিল্প খাতে কার্বন নির্গমন কমানোর করণীয়, নবায়নযোগ্য শক্তি সম্প্রসারণে যুবসমাজের ভূমিকা এবং জ্বালানি রূপান্তরের রাজনৈতিক কাঠামো।
আয়োজকদের মতে, গত কয়েক বছরে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বাংলাদেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি অর্জন করেছে। নতুন কোনো জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র অনুমোদন না দেওয়া, সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পে বৃহৎ পরিসরে নতুন দরপত্র আহ্বান, বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর জন্য কর অবকাশনীতি প্রণয়ন এবং ছাদভিত্তিক সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ—এসবকে ইতিবাচক উন্নয়ন হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২৬ সালের মধ্যে ৩ হাজার মেগাওয়াট ছাদভিত্তিক সৌরবিদ্যুৎ স্থাপন করা হবে, যা দেশের জ্বালানি রূপান্তর প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করবে।
তবে আয়োজকরা জ্বালানি খাতে কিছু উদ্বেগের বিষয়ও তুলে ধরেন। তাদের মতে, নতুন করে ২ হাজার ২২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র অনুমোদন, এলএনজি আমদানির ব্যয় বৃদ্ধি, এবং কয়লাভিত্তিক নতুন কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ দেশের জ্বালানি রূপান্তরের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। জাতীয়ভাবে নির্ধারিত অবদান (এনডিসি ৩.০) অনুযায়ী আগামী সময়ে জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ কমানোর সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া নারী, তরুণ, শ্রমজীবী এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ এখনো পর্যাপ্ত নয় বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেন বক্তারা।
সম্মেলনের ইতিহাস তুলে ধরে আয়োজকরা জানান, ২০২৩ সালে প্রথম বাংলাদেশ জ্বালানি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় এবং ২০২৪ সালে দ্বিতীয় সম্মেলনে চার শতাধিক প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন। জ্বালানি খাতের উন্নয়ন, পরিবেশগত ঝুঁকি হ্রাস এবং উন্নয়ন অংশীদারদের সঙ্গে সহযোগিতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে পূর্বের দুই সম্মেলন নীতি-সংলাপকে শক্তিশালী করেছে। এবারের সম্মেলনের লক্ষ্য হলো নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, বিদ্যুৎ বাজার সংস্কার এবং সবুজ প্রবৃদ্ধির জন্য সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ তৈরি করা।
আগামী ৬ থেকে ৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য এই সম্মেলনে দেশের জ্বালানি খাতের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও সম্ভাব্য দিকনির্দেশনা নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবিলায় বাংলাদেশকে দ্রুত ও বাস্তবভিত্তিক নীতিগত পদক্ষেপ নিতে হবে। নবায়নযোগ্য জ্বালানির সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদারের মাধ্যমে সবুজ রূপান্তর ত্বরান্বিত করা গেলে দেশের দীর্ঘমেয়াদি জ্বালানি স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।


