আন্তর্জাতিক ডেস্ক
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল অসীম মুনিরের বিরুদ্ধে একাধিক গুরুতর অভিযোগ উত্থাপন করেছেন। রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে নিজের বোন ড. উজমা খানের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে তিনি এই অভিযোগগুলো তুলে ধরেন। পরবর্তী সময়ে তার বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত হলে তা ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়।
ইমরান খানের বোনের সঙ্গে মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত সাক্ষাতের সময় তিনি সেনাপ্রধানের নীতি ও সিদ্ধান্তকে পাকিস্তানের জন্য ক্ষতিকর বলে দাবি করেন। তার বক্তব্য বুধবার সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। এতে তিনি অভিযোগ করেন যে অসীম মুনিরের নীতিগত সিদ্ধান্তের কারণে দেশ নিরাপত্তা সংকটের মুখে পড়েছে এবং সন্ত্রাসবাদ পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করেছে।
ইমরান খান সাক্ষাৎকালে বলেন, সেনাপ্রধানের নীতি পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে আরও ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। তার দাবি অনুযায়ী, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বিভিন্ন অঞ্চলে সন্ত্রাসী হামলার মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশজুড়ে নতুন উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। তিনি মনে করেন, নিরাপত্তা নীতির দুর্বলতা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে সংগঠিত হওয়ার সুযোগ দিয়েছে, যা ভবিষ্যতে পাকিস্তানের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও জননিরাপত্তার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী আরও অভিযোগ করেন যে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি ইচ্ছাকৃতভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। তার বক্তব্য অনুযায়ী, আফগান সীমান্তে সামরিক কঠোরতার ফলে দুই দেশের সম্পর্ক দুর্বল হয়ে পড়েছে। আফগানিস্তানের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যমান সীমান্ত সমস্যা, মানবিক সহযোগিতা, বাণিজ্যিক যোগাযোগ এবং নিরাপত্তা সমন্বয়ের বিষয়গুলো এই উত্তেজনার কারণে আরও জটিল হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।
ইমরান খান উল্লেখ করেন, আফগান শরণার্থীদের পাকিস্তান থেকে ফেরত পাঠানো এবং সীমান্ত এলাকায় সামরিক অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত দেশের ভেতরে নতুন সামাজিক ও নিরাপত্তাজনিত চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করতে পারে। পাকিস্তানে অবস্থানরত বিপুল সংখ্যক আফগান শরণার্থী দীর্ঘদিন ধরে শ্রমবাজার ও মানবিক ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখলেও সাম্প্রতিক নীতির কারণে তাদের অনিশ্চয়তার মুখে পড়তে হচ্ছে। এর ফলে সীমান্ত অঞ্চলে উত্তেজনা বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি মানবিক পরিস্থিতিরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
তিনি আরও দাবি করেন, সামরিক নেতৃত্বের সিদ্ধান্তগুলো আন্তর্জাতিক অঙ্গনের প্রতিক্রিয়া বিবেচনা করে নেওয়া হচ্ছে, যা দেশের স্বার্থের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তার মতে, আঞ্চলিক কূটনীতি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনায় সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তগুলো পাকিস্তানের ভূরাজনৈতিক অবস্থানকে আরও দুর্বল করে দিতে পারে। বিশেষ করে প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্কের ক্ষেত্রে একতরফা সামরিক দৃষ্টিভঙ্গি ভবিষ্যতের আঞ্চলিক সহযোগিতা ব্যাহত করতে পারে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
ইমরান খান সাক্ষাতে ব্যক্তিগত অভিযোগও উত্থাপন করেন। তার দাবি অনুযায়ী, তাকে এবং তার স্ত্রীকে কারাগারে পাঠানোর সিদ্ধান্ত সামরিক নেতৃত্বের নির্দেশে নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, এসব পদক্ষেপ রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে এবং দেশে সাংবিধানিক শাসনব্যবস্থার কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হতে পারে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পাকিস্তানের রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিচারিক কার্যক্রম ও ক্ষমতার কেন্দ্রগুলোর পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ে নানা বিতর্ক দেখা দিয়েছে, যা দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিবেশকে অনিশ্চিত করে তুলেছে।
ইমরান খানের এই অভিযোগগুলো পাকিস্তানের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। তার বক্তব্য দেশে ক্ষমতা কাঠামো এবং সামরিক–বেসামরিক সম্পর্ক নিয়ে বহুমাত্রিক বিতর্ককে আরও তীব্র করতে পারে। পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা থাকলেও সাম্প্রতিক মন্তব্য পরিস্থিতিকে আবারও নতুন করে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে।
তার অভিযোগগুলো সম্পর্কে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে বিশ্লেষকদের মতে, এমন মন্তব্য রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়াতে পারে এবং দেশটির চলমান রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, আঞ্চলিক কূটনীতি, মানবাধিকার পরিস্থিতি এবং বিচারিক ব্যবস্থার ওপর এর প্রতিফলন ভবিষ্যতে আরও স্পষ্ট হয়ে উঠতে পারে।
ইমরান খানের বিরুদ্ধে চলমান মামলা, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং সামরিক নেতৃত্বের সঙ্গে তার সম্পর্কের টানাপোড়েন বর্তমান পাকিস্তান পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। তার সাম্প্রতিক অভিযোগগুলো এই জটিলতার নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে বলে মনে করা হচ্ছে, যা দেশের আগামী রাজনৈতিক গতিপ্রকৃতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।


