জাতীয় ডেস্ক
জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল্লাহিল আমান আজমী পার্বত্য চট্টগ্রামের দীর্ঘমেয়াদি অস্থিরতা ও আঞ্চলিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে প্রতিবেশী ভারতের ভূমিকাকে দায়ী করে বিভিন্ন অভিযোগ উত্থাপন করেছেন। বুধবার (২ অক্টোবর) অনুষ্ঠিত ওই অনুষ্ঠানে তিনি অতীত ও বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির পেছনে বহিরাগত প্রভাব দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে আজমী দাবি করেন যে, ভারতের নীতিগত অবস্থানের কারণে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা বারবার বাধাগ্রস্ত হয়েছে। তার বক্তব্য অনুযায়ী, নয়া দিল্লি বিভিন্ন সময় এমন পরিস্থিতি তৈরি করেছে যা দেশের অভ্যন্তরে রাজনৈতিক ও নিরাপত্তাজনিত অনিশ্চয়তার জন্ম দিয়েছে। তিনি বলেন, প্রতিবেশী রাষ্ট্রের এই ভূমিকা বাংলাদেশের শান্তিপূর্ণ পরিবেশের ওপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলেছে।
তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাসের উল্লেখ করে বলেন, ১৯৭৫ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত অঞ্চলের অস্থিরতার পেছনে বহিঃসমর্থিত উপাদানের সক্রিয়তা ছিল উল্লেখযোগ্য। তার বক্তব্য অনুযায়ী, সে সময় সশস্ত্র শান্তিবাহিনী নিজ দাবিগুলো বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়ে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে। তিনি দাবি করেন, শেখ মুজিবুর রহমানের সময় ভারত বিষয়টি গুরুত্ব না দিলেও তার হত্যাকাণ্ডের পর পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটে এবং শান্তিবাহিনীকে আশ্রয়, খাদ্য, অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়।
আজমী আরও অভিযোগ করেন যে, পার্বত্য অঞ্চলের স্থিতিশীলতা রাজনৈতিক পরিবর্তনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। তার ভাষ্যমতে, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকলে সেখানে তুলনামূলক স্থিতিশীলতা থাকে, কিন্তু সরকার পরিবর্তনের পর অস্থিতিশীলতা বেড়ে যায়। এই প্রেক্ষাপটে তিনি ১৯৯৭ সালের পার্বত্য শান্তি চুক্তির সমালোচনা করেন এবং দাবি করেন, চুক্তিটি সংশ্লিষ্ট সমস্যার স্থায়ী সমাধান দিতে সক্ষম হয়নি। তিনি বলেন, খাগড়াছড়িতে জমা দেওয়া অস্ত্রের একটি অংশ কার্যত অচল ছিল, আর সক্রিয় অস্ত্রভাণ্ডার পরবর্তীতে গোপন রাখা হয়, যা পরবর্তীতে নতুন সশস্ত্র গোষ্ঠীর সংগঠনে সহায়ক ভূমিকা রাখে।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি ইউপিডিএফসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক সংগঠনের উত্থানের প্রসঙ্গও তুলে ধরেন। আজমীর বক্তব্য অনুযায়ী, প্রতিবার সরকার পরিবর্তনের পর পার্বত্য অঞ্চলে নতুন করে সশস্ত্র কার্যক্রম বেড়ে যায়, যা স্থানীয় জনগণ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে। তিনি মন্তব্য করেন, এই পুনরাবৃত্ত অস্থিরতা পার্বত্য চট্টগ্রামের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করছে।
আজমী সাম্প্রতিক নিরাপত্তা পরিস্থিতির পরিবর্তন নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তার মতে, এলাকায় সশস্ত্র গোষ্ঠীর উপস্থিতি আগের তুলনায় দৃশ্যমানভাবে বেড়েছে। তিনি দাবি করেন, বিভিন্ন সময়ে প্রায় ২০০টি সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহারের ফলে নিরাপত্তা শূন্যতা তৈরি হয়েছে, যা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে আরও সক্রিয় হওয়ার সুযোগ দিয়েছে। তিনি বলেন, অতীতে সেনা সদস্যদের ওপর আক্রমণের ঘটনা অকল্পনীয় হলেও বর্তমানে এমন ঘটনার নজির পাওয়া যাচ্ছে, যা অঞ্চলের নিরাপত্তা পরিবেশের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়।
সংবাদ সম্মেলনে উত্থাপিত এসব অভিযোগ ও পর্যবেক্ষণ পার্বত্য চট্টগ্রামের দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তা সংকটের জটিলতা নতুনভাবে সামনে নিয়ে আসে। বিশেষজ্ঞদের মতে, অঞ্চলটির ইতিহাস, ভূরাজনৈতিক অবস্থান, বহুমাত্রিক পরিচয় ও আঞ্চলিক রাজনীতির প্রভাবসহ নানা উপাদান পার্বত্য পরিস্থিতিকে প্রভাবিত করে। এ কারণে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য বহুমুখী উদ্যোগ, আস্থা গড়ে তোলা, সংলাপ এবং সমন্বিত উন্নয়ন কার্যক্রমের গুরুত্ব বহুবার উঠে এসেছে। আজমীর বক্তব্য এসব আলোচনাকে নতুন করে সামনে আনে এবং অঞ্চলের নিরাপত্তা কাঠামো ও রাজনৈতিক প্রক্রিয়া নিয়ে পুনর্বিবেচনার প্রয়োজনীয়তার ইঙ্গিত দেয়।
এ বিষয়ে সরকারি দায়িত্বশীল কোনো সংস্থা বা সংশ্লিষ্ট পক্ষের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।


