জাতীয় ডেস্ক
রাজধানীতে এক আলোচনা ও সেবামূলক কার্যক্রম উদ্বোধন উপলক্ষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, নির্বাচনকে ঘিরে বিভিন্ন দলের বক্তব্য এবং মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তির ভূমিকা নিয়ে বক্তব্য দেন। বুধবার (৩ ডিসেম্বর) ঢাকার সিদ্ধেশ্বরী বালুর মাঠে একটি মেডিকেল ক্যাম্প উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এসব মন্তব্য করেন। অনুষ্ঠানে তিনি অভিযোগ করেন যে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী এবং ১৯৭১ সালে বিভিন্ন অপকর্মে জড়িত থাকা দলগুলোর সদস্যরা এখন নির্বাচনের সময়ে আবারও ভোট চেয়ে জনগণের সামনে উপস্থিত হচ্ছে, যা দেশের রাজনৈতিক পরিবেশে নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করছে।
বক্তব্যে মির্জা আব্বাস বলেন, যারা মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনীর সহযোগী হিসেবে পরিচিত ছিল, তারা সে সময় দেশের জনগণের স্বার্থকে উপেক্ষা করে শত্রুপক্ষকে সহায়তা করেছিল। তার দাবি, সেই সব রাজনৈতিক শক্তি আবারও সক্রিয় হয়েছে এবং বিভিন্ন প্রচারণার মাধ্যমে ভোটারদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে। তিনি উল্লেখ করেন যে দেশের স্বাধীনতার ইতিহাসের নিরিখে এসব শক্তির রাজনৈতিক অংশগ্রহণ কীভাবে জনগণের উপর প্রভাব ফেলতে পারে, তা নিয়ে সতর্ক থাকা প্রয়োজন।
নির্বাচনকে সামনে রেখে ধর্মীয় আবেগকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহারের প্রবণতা নিয়েও তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তার অভিযোগ, কিছু রাজনৈতিক দল ভোটের আগে ধর্মকে ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত ও ভীতি প্রদর্শনের চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, কোথাও কোথাও এমন বক্তব্য দেওয়া হচ্ছে যে নির্দিষ্ট প্রার্থীকে ভোট না দিলে জান্নাত-জাহান্নামের প্রসঙ্গ তোলা হচ্ছে, এমনকি সহিংসতার হুমকিও দেওয়া হচ্ছে। এ ধরনের বক্তব্য নির্বাচনী পরিবেশে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে বলে তিনি মনে করেন।
মির্জা আব্বাস আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময়ে যারা সংগঠিতভাবে নারী নির্যাতন ও জনগণের ওপর নির্যাতনের অভিযোগে পরিচিত ছিল, তারা এখন বড় বড় রাজনৈতিক বয়ান করছে এবং গণতন্ত্রের কথা বলছে। তার দাবি, ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে এসব গোষ্ঠীর ভূমিকা বিবেচনা করলে বর্তমান সময়ে তাদের রাজনৈতিক অবস্থান জনগণের কাছে প্রশ্নের জন্ম দিতে পারে। তিনি বলেন, এসব গোষ্ঠীর অতীত কর্মকাণ্ড দেশ ও সমাজে ভিন্নমাত্রায় ক্ষতির কারণ হয়েছিল, যা এখনো স্মৃতিতে গেঁথে আছে।
তিনি জামায়াতের রাজনৈতিক আদর্শ নিয়েও মন্তব্য করেন। তার দাবি, দলটি বাস্তব ধর্মীয় মূল্যবোধের চেয়ে মতবাদভিত্তিক রাজনৈতিক দর্শনে বেশি বিশ্বাসী। তিনি বলেন, এসব মতাদর্শ দেশবাসীর ধর্মীয় অনুভূতিকে বিভ্রান্ত করতে পারে এবং সামাজিক বিভাজন বাড়াতে পারে। তিনি অভিযোগ করেন যে ধর্মীয় পরিচয় ব্যবহার করলেও বাস্তব প্রেক্ষাপটে এসব দল জনগণের কল্যাণে কাজ করে না।
অনুষ্ঠানে মির্জা আব্বাস সমসাময়িক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সাধারণ জনগণের ভূমিকা নিয়েও কথা বলেন। তিনি বলেন, ভোটের সময়ে প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব হচ্ছে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখা এবং সঠিক তথ্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া। তিনি দাবি করেন, কিছু গোষ্ঠীর উস্কানিমূলক বক্তব্য নির্বাচনী প্রক্রিয়ার প্রতি আস্থা নষ্ট করতে পারে, যা ভবিষ্যতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। তিনি জনগণকে অনুরোধ জানান—অতীতের ভূমিকা, বর্তমানের বক্তব্য এবং ভবিষ্যতের সম্ভাব্য প্রভাব বিবেচনা করে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের মূল্যায়ন করতে।
এ ছাড়া তিনি নির্বাচনী পরিবেশে দায়িত্বশীল আচরণের ওপর গুরুত্ব দেন। তিনি বলেন, রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকলেও সহনশীলতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং শান্তিপূর্ণ অংশগ্রহণ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তিনি দাবি করেন, অযথা উত্তেজনা বা ভুল তথ্য প্রচারের মাধ্যমে নির্বাচনী পরিস্থিতি উত্তপ্ত হওয়া দেশের রাজনীতির ওপর দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত স্থানীয় বাসিন্দা, কর্মী ও অংশগ্রহণকারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, রাজনৈতিক বক্তব্য শুনতে হবে সতর্কভাবে এবং যাচাই করে দেখতে হবে বক্তার অতীত ভূমিকা ও মতাদর্শের সঙ্গে বর্তমান বক্তব্যের মিল কতটা। দেশ ও সমাজের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সচেতন ভোটারগোষ্ঠী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলেও তিনি মত প্রকাশ করেন।
তিনি শেষে বলেন, রাজনৈতিক পরিবেশে বিভ্রান্তিকর তথ্য বা উস্কানি থেকে দূরে থাকা জরুরি। জনগণ দায়িত্বশীল হলে দেশের নির্বাচন প্রক্রিয়া আরও সুসংহত হতে পারে এবং ভবিষ্যতে গণতন্ত্রের ভিত্তি আরও শক্তিশালী হবে।


