সচিবালয় ও যমুনা ভবন এলাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা

সচিবালয় ও যমুনা ভবন এলাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা

জাতীয় ডেস্ক

বাংলাদেশ সচিবালয়, প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনা এবং সংলগ্ন এলাকায় সব ধরনের সভা-সমাবেশ ও গণজমায়েত নিষিদ্ধ করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। আগামী শনিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৫ থেকে অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত এই নির্দেশনা কার্যকর থাকবে। জনশৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং প্রধান উপদেষ্টার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

ডিএমপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অর্ডিন্যান্স, ১৯৭৬–এর ২৯ ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। নির্দেশনায় স্পষ্ট করা হয়েছে যে, বাংলাদেশ সচিবালয় এলাকা ও প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার চারপাশের নির্দিষ্ট এলাকায় কোনো ধরনের সভা, সমাবেশ, শোভাযাত্রা, মানববন্ধন, ধর্মঘট, মিছিল বা গণজমায়েত আয়োজন করা যাবে না। নিষিদ্ধ ঘোষিত সুনির্দিষ্ট অঞ্চলগুলোর মধ্যে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল ক্রসিং, কাকরাইল মসজিদ ক্রসিং, অফিসার্স ক্লাব ক্রসিং ও মিন্টু রোড ক্রসিং-এর মধ্যবর্তী স্থানসমূহ অন্তর্ভুক্ত।

নিষেধাজ্ঞা জারির ফলে এসব এলাকায় রাজনৈতিক দল, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন বা ব্যক্তিগত পর্যায়ে আয়োজন করা যে কোনও ধরনের গণসমাবেশ কার্যত বন্ধ থাকবে। সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার ও জনসমাগম নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর মধ্যে আলোচনা বাড়ছিল। এরই ধারাবাহিকতায় এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

বাংলাদেশ সচিবালয় দেশের প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু হওয়ায় এলাকায় অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেওয়া হয়। প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনা সংলগ্ন অঞ্চলও ভিআইপি জোন হিসেবে বিবেচিত, যেখানে নিরাপত্তাজনিত সীমাবদ্ধতা দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত। সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ভিড় ও যানজটের সমস্যা দেখা দিচ্ছিল। এসব কারণে নিরাপত্তা ঝুঁকি ও জনদুর্ভোগ—উভয়ের সম্ভাবনা বেড়ে উঠেছিল। নতুন নিষেধাজ্ঞা সেই পরিস্থিতি মোকাবিলার একটি প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে।

প্রশাসনিক ভবনকেন্দ্রিক এলাকাগুলোতে জনসমাগম নিয়ন্ত্রণ কেবল নিরাপত্তার কারণেই নয়, দৈনন্দিন সরকারি কার্যক্রম নির্বিঘ্ন রাখতে গুরুত্বপূর্ণ। অতীতে সচিবালয় সংলগ্ন এলাকায় কর্মসূচি বা বিক্ষোভের কারণে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়েছিল। একই সঙ্গে এসব ঘটনায় সাধারণ নাগরিকদের ভোগান্তি বাড়ে এবং ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় চাপ পড়ে। ডিএমপির এই নির্দেশনা কার্যকর হলে এসব সমস্যা কিছুটা লাঘব হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এ নিষেধাজ্ঞা রাজধানীর রাজনৈতিক কার্যক্রমেও প্রভাব ফেলতে পারে। অনেক দল এবং সংগঠন সচিবালয়ের কাছে কর্মসূচি আয়োজন করে তাদের দাবি-দাওয়া তুলে ধরতে চাইত। নতুন নির্দেশনার ফলে এসব কর্মসূচি অন্যত্র সরিয়ে নিতে হতে পারে। ফলে রাজনৈতিক কার্যক্রমের কেন্দ্র পরিবর্তনের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। নিরাপত্তা সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, সুনির্দিষ্ট এলাকায় জনসমাগম সীমিত হলে পুরো শহরের নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা আরও সহজ হবে।

প্রধান উপদেষ্টার নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে সরকার দীর্ঘদিন ধরে কঠোর অবস্থান পালন করে আসছে। যমুনা ভবন রাষ্ট্রের শীর্ষ নির্বাহী কর্মকর্তার সরকারি আবাস হিসেবে সংবেদনশীল এলাকা হিসেবে বিবেচিত হয়। সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর মতে, সমাবেশ বা মিছিলের মতো গণজমায়েত নিরাপত্তার হুমকি বাড়াতে পারে, বিশেষ করে যখন রাজনৈতিক অস্থিরতা বা উত্তেজনার সম্ভাবনা থাকে। নতুন নির্দেশনায় এই ঝুঁকি কমানোর লক্ষ্য অনুধাবন করা যায়।

নিষেধাজ্ঞার ফলে নগরীর নির্দিষ্ট অঞ্চলে চলমান নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী হবে। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, পরিস্থিতি বিবেচনা করে পরবর্তীতে এই নিষেধাজ্ঞা শিথিল বা বাতিল করা হতে পারে। তবে কখন সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, সে বিষয়ে এখনো কোনো সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়নি।

রাজধানীতে চলমান নিরাপত্তা পরিস্থিতি, রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রক্ষার প্রয়োজনীয়তা এবং জনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের চাহিদা বিবেচনায় এই পদক্ষেপ দ্রুত কার্যকর হতে যাচ্ছে। নির্দেশনার ফলে নিষিদ্ধ এলাকায় সরাসরি রাজনৈতিক বা সামাজিক কর্মসূচি আয়োজন থেকে বিরত থাকতে হবে সংশ্লিষ্ট পক্ষকে। কর্তৃপক্ষ আশা করছে, নতুন এই ব্যবস্থা রাজধানীর প্রশাসনিক স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরও সুসংগঠিত করবে।

জাতীয় শীর্ষ সংবাদ