জুলাই আন্দোলন নিয়ে রাজনৈতিক পরিবর্তনের অভাবের অভিযোগ জাহিদুল ইসলামের

জুলাই আন্দোলন নিয়ে রাজনৈতিক পরিবর্তনের অভাবের অভিযোগ জাহিদুল ইসলামের

জাতীয় ডেস্ক

ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. জাহিদুল ইসলাম বলেছেন, জুলাই আন্দোলনের পর দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন দেখা না গেলেও নির্দিষ্ট কয়েকটি মহলে অনিয়ম ও দুর্নীতির চর্চা অব্যাহত রয়েছে। বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) রাতে পাবনার সাঁথিয়ার ফুটবল মাঠে আয়োজিত ছাত্র ও যুব সম্মেলনে তিনি প্রধান অতিথির বক্তব্যে এই অভিযোগ করেন। তার দাবি, জুলাই আন্দোলনের মূল চেতনা ও এর লক্ষ্য সাম্প্রতিক সময়ের রাজনৈতিক ব্যবহারে ক্ষুণ্ন হচ্ছে।

সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্যে তিনি বলেন, আন্দোলনের পর রাজনৈতিক দলগুলোর আচরণে মৌলিক পরিবর্তনের প্রত্যাশা ছিল, কিন্তু বাস্তবে কিছু মহলে পূর্বের অনিয়ম ও দুর্নীতির ধারা অব্যাহত রয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, আন্দোলনের নাম ব্যবহার করে কিছু ব্যক্তি বিভিন্ন সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করছেন, যা আন্দোলনের উদ্দেশ্যকে বিভ্রান্ত করছে। তার ভাষ্য অনুযায়ী, দেশের প্রশাসনিক কাঠামোর বিভিন্ন জায়গায় দুর্নীতির চর্চা এখনও রোধ করা সম্ভব হয়নি, যা জনগণের প্রত্যাশার পরিপন্থী।

জাহিদুল ইসলাম বলেন, আন্দোলনের সময় দেশের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ যেসব লক্ষ্য সামনে রেখে অংশগ্রহণ করেছিলেন, সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নের পথে বাধা হিসেবে দুর্নীতি, সন্ত্রাসবাদ, চাঁদাবাজি ও রাজনৈতিক সহিংসতা রয়ে গেছে। তিনি দাবি করেন, জনগণের অংশগ্রহণে গড়ে ওঠা কোনো আন্দোলনের পর এসব অনিয়ম চলমান থাকলে গণআকাঙ্ক্ষা ব্যাহত হয়। তিনি প্রশাসন এবং রাজনৈতিক নেতৃত্বকে অনিয়ম রোধের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান।

বক্তৃতায় তিনি দেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ইতিহাসের বিভিন্ন ঘটনার উল্লেখ করেন এবং সেগুলোর প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন। বিভিন্ন সময় ঘটে যাওয়া রাজনৈতিক সহিংসতা, প্রশাসনিক অস্থিরতা ও সামাজিক উত্তেজনার উদাহরণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এসব ঘটনাই প্রমাণ করে যে দেশের রাজনৈতিক কাঠামোতে শুদ্ধাচার প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা দীর্ঘদিন ধরেই অনুভূত হচ্ছে। তার বক্তব্য অনুযায়ী, জনগণের প্রত্যাশা পূরণে রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর দায়িত্ব বাড়ছে এবং সেই দায়িত্ব পালনে সৎ, দায়িত্বশীল ও নীতি-নিষ্ঠ নেতৃত্ব অপরিহার্য।

তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকে ব্যক্তিগত বা গোষ্ঠীগত স্বার্থ থেকে মুক্ত করে জনস্বার্থকে প্রাধান্য দিলে দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া শক্তিশালী হবে। তিনি রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজেদের এজেন্ডা পরিষ্কারভাবে জনগণের সামনে উপস্থাপন করার আহ্বান জানান এবং দেশের উন্নয়ন, সুশাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার পরামর্শ দেন। তার মতে, বর্তমান প্রজন্ম এমন একটি রাজনৈতিক ধারার প্রত্যাশা করে যা সহিষ্ণুতা, সুশৃঙ্খল নেতৃত্ব এবং শুদ্ধাচারের চর্চাকে সামনে নিয়ে আসবে।

সম্মেলনে তিনি তরুণ নেতৃত্ব প্রসঙ্গে বক্তব্য রাখেন এবং ন্যায়বিচার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় যোগ্য নেতৃত্বের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন। দেশের ভবিষ্যৎ নেতৃত্বকে আদর্শ, দক্ষতা ও দূরদর্শিতার ভিত্তিতে গড়ে উঠতে হবে বলে তিনি মত প্রকাশ করেন। তরুণদের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পেলে নীতি-নিষ্ঠ ও জবাবদিহিমূলক নেতৃত্বের বিকাশ ঘটবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

অনুষ্ঠানে সাঁথিয়া উপজেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা মোখলেছুর রহমানের সভাপতিত্বে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন এবং স্থানীয় প্রার্থীদের পরিচিতি ও বক্তব্য উপস্থাপন করা হয়। বক্তারা দেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবেশ, সামাজিক স্থিতিশীলতা এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা নিয়ে বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেন। তারা দাবি করেন, শান্তি ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় জনগণের প্রত্যাশা পূরণে দায়িত্বশীল রাজনৈতিক আচরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

সম্মেলনে আলোচনার সার্বিক বিষয়বস্তুতে উঠে আসে যে, দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে সংস্কার ও শুদ্ধাচার প্রতিষ্ঠার দাবি দীর্ঘদিনের। জনগণের অংশগ্রহণ, গণতান্ত্রিক চর্চা এবং আইনের শাসনকে সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কার্যকর সহযোগিতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তা বক্তাদের বক্তব্যে গুরুত্বের সঙ্গে আলোচিত হয়। বক্তৃতায় উল্লেখ করা হয়, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও সুশাসনের উন্নয়ন দেশের সামগ্রিক অগ্রগতির জন্য অপরিহার্য এবং এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে সমাজের প্রতিটি স্তরের সক্রিয় ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।

রাজনীতি শীর্ষ সংবাদ