জাতীয় ডেস্ক
লন্ডন থেকে ঢাকায় এসে পৌঁছেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান। শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে তাকে বহনকারী ফ্লাইট। বিমানবন্দর থেকে ভিআইপি ফটক ব্যবহার করে তিনি সরাসরি রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে যান। দলীয় সূত্র জানিয়েছে, দেশে ফিরে তিনি ব্যক্তিগত ও পারিবারিক বিভিন্ন বিষয়ে সময় দেবেন এবং চিকিৎসাজনিত কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষাও সম্পন্ন করবেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে তিনি ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি লন্ডনে অবস্থান করছিলেন। দেশে ফেরাকে কেন্দ্র করে বিমানবন্দরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয় এবং তার আগমন কার্যক্রম নির্বিঘ্ন করতে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো সমন্বিত ব্যবস্থা গ্রহণ করে। পরিবার ও ঘনিষ্ঠ সূত্র বলছে, তিনি দেশে অবস্থানকালে রাজনৈতিক পরিস্থিতি, পারিবারিক বিষয় এবং স্বাস্থ্যসংক্রান্ত কিছু পরিকল্পনা চূড়ান্ত করতে পারেন।
অন্যদিকে, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার লন্ডনে উন্নত চিকিৎসার জন্য স্থানান্তর প্রক্রিয়ায় বিলম্ব ঘটেছে। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, কাতারের আমিরের দেওয়া বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুল্যান্স শুক্রবার ঢাকায় পৌঁছানোর কথা থাকলেও কারিগরি ত্রুটির কারণে তা সম্ভব হয়নি। তিনি জানান, সবকিছু ঠিক থাকলে শনিবার এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সটি পৌঁছাতে পারে।
খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন এবং স্থানীয় মেডিক্যাল বোর্ডের পর্যবেক্ষণে রয়েছেন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তার উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় দ্রুত বিদেশে স্থানান্তরের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মির্জা ফখরুল বলেন, চিকিৎসা বোর্ড যদি অনুমতি দেয় এবং খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা ভ্রমণের উপযোগী থাকে, তবে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে রবিবার লন্ডনের উদ্দেশে তাকে পাঠানোর।
চেয়ারপারসনের চিকিৎসা ও সম্ভাব্য স্থানান্তর ইস্যুটি দলের ভেতরে ও বাইরে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। বহু মাস ধরে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকায় দলের কার্যক্রম ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় তার অনুপস্থিতি একটি বড় প্রভাব ফেলছে। নেতাকর্মীদের অনেকে মনে করেন, উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে দ্রুত তার সুস্থতা দলের নানা সিদ্ধান্ত ও ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক কৌশল নির্ধারণে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে।
এয়ার অ্যাম্বুল্যান্স বিলম্বের কারণে দলীয় নেতাদের মধ্যে নতুন করে সমন্বয় প্রয়োজন হয়েছে। চিকিৎসা বোর্ডের সঙ্গে প্রতিদিনের আলোচনার মাধ্যমে পরিস্থিতি মূল্যায়ন করা হচ্ছে। বোর্ডের সদস্যরা জানিয়েছেন, ভ্রমণের সময় স্বাস্থ্যঝুঁকি যতটা কমানো যায়, সে অনুযায়ী পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা অব্যাহত রয়েছে, যাতে বিমান যাত্রার আগে সব স্বাস্থ্য সূচক স্থিতিশীল থাকে।
এদিকে, ডা. জুবাইদা রহমানের দেশে ফেরাকে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা-সংক্রান্ত সিদ্ধান্তগুলোর সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত না করা হলেও, রাজনৈতিকভাবে এটি গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বিএনপির সিনিয়র নেতারা বলছেন, দলের দুই শীর্ষ নেতার পরিবারের সদস্যদের দেশে অবস্থান সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে দল পুনর্গঠন, পরবর্তী কর্মপন্থা এবং চলমান রাজনৈতিক পরিবেশে কৌশল নির্ধারণের সময় এসব বিষয় গুরুত্ব পাবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে বিএনপির অভ্যন্তরীণ সমন্বয় আরও শক্তিশালী করা জরুরি। দলের প্রধান নেতাদের স্বাস্থ্য ও অবস্থানজনিত অনিশ্চয়তা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে স্থবিরতা তৈরি করতে পারে, যা ভবিষ্যতের রাজনীতিতে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে। খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় এ নিয়ে সরকার, বিদেশি পক্ষ ও মেডিক্যাল টিমের সঙ্গে বহুপাক্ষিক সমন্বয় বজায় রাখতে হচ্ছে।
ডা. জুবাইদা রহমানের আগমন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসা প্রক্রিয়ার অগ্রগতি এবং দলের রাজনৈতিক অগ্রযাত্রা—সব মিলিয়ে বিএনপির সামনে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি দিন অপেক্ষা করছে। দলের সিদ্ধান্ত গ্রহণ, নেতৃত্ব কাঠামো ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা—এসব ক্ষেত্রেই আসন্ন সময়গুলোতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি বা পরিবর্তন দেখা যেতে পারে বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন।


