জাতীয় ডেস্ক
বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় দেশের সব মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা ও অন্যান্য উপাসনালয়ে শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) বিশেষ দোয়া ও প্রার্থনার কর্মসূচি পালন করা হবে। বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচির ঘোষণা দেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
সংবাদ সম্মেলনে রিজভী জানান, বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা আগের মতোই অপরিবর্তিত রয়েছে এবং তিনি রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে নিবিড় পর্যবেক্ষণে চিকিৎসাধীন আছেন। দলের পক্ষ থেকে সব ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মানুষকে নিজ নিজ উপাসনালয়ে তার দ্রুত আরোগ্য কামনায় প্রার্থনা করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
রিজভী বলেন, বেগম খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ হওয়ায় হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) তার চিকিৎসা চলমান রয়েছে। তিনি জানান, টানা ১২ দিন ধরে চিকিৎসাধীন এ বিএনপি নেত্রীকে দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। চিকিৎসকদের ডাকে সাড়া দিলেও তার শারীরিক অবস্থায় বিশেষ অগ্রগতি দেখা যায়নি।
সংবাদ সম্মেলনে রিজভী তার বক্তব্যে বলেন, দলের চেয়ারপারসনের সুস্থতা কামনায় দেশের সব উপাসনালয়ে দোয়া অনুষ্ঠান আয়োজন করা হবে। তিনি জানান, ধর্মীয় সম্প্রীতির ভিত্তিতে গঠিত এই কর্মসূচির উদ্দেশ্য হলো বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষকে একটি অভিন্ন প্রার্থনায় যুক্ত করা, যাতে দলের শীর্ষ নেত্রীর দ্রুত সুস্থতা নিশ্চিত হয়। দলের পক্ষ থেকে প্রত্যাশা ব্যক্ত করা হয় যে, জনগণের দোয়া-প্রার্থনায় তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হবে।
বিগত কয়েক বছর ধরে বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা বিভিন্ন জটিলতায় সমালোচনামূলক পর্যায়ে রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে লিভার, কিডনি, হৃদযন্ত্র এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যসংক্রান্ত জটিলতার কারণে চিকিৎসকরা তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখছেন। বাংলাদেশে যথাযথ চিকিৎসা সম্ভব হচ্ছে কি না—এমন প্রশ্ন রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিএনপি দীর্ঘদিন ধরে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার অনুমতি চেয়ে আসছে।
দলের নেতারা জানান, বর্তমান অবস্থায় তার চিকিৎসা অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে পরিচালিত হচ্ছে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী বিভিন্ন ধাপের মেডিকেল প্রোটোকল অনুসরণ করা হচ্ছে এবং প্রয়োজন হলে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ অব্যাহত রাখা হচ্ছে। তবে চিকিৎসা-সংক্রান্ত সিদ্ধান্তগুলো সম্পূর্ণভাবে মেডিকেল টিমের বিবেচনায় নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।
খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক জীবনে দীর্ঘ সময় দেশের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন এবং বিভিন্ন জাতীয় সংকটে ভূমিকা রাখার বিষয়টি দেশের রাজনীতিতে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। তার অসুস্থতা দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটেও প্রভাব ফেলছে। বিশেষ করে বিএনপির উচ্চপর্যায়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া এবং দলীয় কার্যক্রম তার স্বাস্থ্যগত অবস্থার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
দোয়া ও প্রার্থনার এই কর্মসূচি রাজনৈতিক পরিস্থিতিতেও গুরুত্ব বহন করছে। বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে দলের পক্ষ থেকে ঐক্য ও সংহতির বার্তা তুলে ধরার প্রয়াসও দেখা যাচ্ছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করেন, এ ধরনের কর্মসূচি দলীয় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের মধ্যেও সচেতনতা তৈরি করতে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক জটিলতায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসায় ধারাবাহিক পর্যবেক্ষণ ও সমন্বিত চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রয়োজন হয়। বেগম খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রে তা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তার বেশ কয়েকটি অঙ্গ-সংক্রান্ত জটিলতা একসঙ্গে বিদ্যমান। চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকলেও উন্নতির সম্ভাবনা নির্ভর করছে বিভিন্ন চিকিৎসা-প্রক্রিয়ার সফলতার ওপর।
বিএনপির আয়োজিত কর্মসূচির মাধ্যমে দলীয়ভাবে তার আরোগ্য কামনায় যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তা নেতৃত্ব ও কর্মীদের মধ্যে মনোবল ধরে রাখতে ভূমিকা রাখবে বলে মনে করা হচ্ছে। এদিকে হাসপাতালের চিকিৎসক দল জানিয়েছেন যে, তার চিকিৎসা অব্যাহত থাকবে এবং পরবর্তী সিদ্ধান্তগুলো শারীরিক অবস্থার মূল্যায়নের ভিত্তিতে নেওয়া হবে।
দলের নেতারা জানান, বর্তমান পরিস্থিতিতে সবার শারীরিক অসুস্থতার বিষয়ে মানবিক বিবেচনায় প্রার্থনা ও দোয়ার গুরুত্ব রয়েছে। বিএনপি আশা করছে, দেশবাসীসহ সব ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মানুষের প্রার্থনা তার শারীরিক অবস্থার উন্নতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।


