খেলাধূলা ডেস্ক
ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস আশঙ্কা করছে, তাদের শীর্ষ নেতাদের লক্ষ্য করে অ-আরব দেশেও ইসরায়েল হামলা চালাতে পারে। সম্প্রতি সংগঠনের একাধিক গোপন সূত্রের বরাতে জানা গেছে, বিদেশে অবস্থানরত নেতাদের নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সম্ভাব্য হুমকির প্রেক্ষাপটে হামাস তাদের নেতাদের জন্য নতুন দিকনির্দেশনা জারি করেছে, যাতে লক্ষ্যভিত্তিক হামলা এড়ানো যায়।
হামাসের হিসেবে, গত সেপ্টেম্বরে কাতারের রাজধানী দোহায় তাদের শীর্ষ নেতাদের বৈঠকস্থলে যে হামলা হয়েছিল, তা বিদেশে অবস্থানরত ফিলিস্তিনি রাজনৈতিক নেতৃত্বকে লক্ষ্য করে ইসরায়েলের সম্ভাব্য কৌশল সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত দেয়। ওই ঘটনায় দোহা শহরের এক স্থাপনায় হামলা করা হয়, যেখানে হামাসের একাধিক নেতা বৈঠকে অংশ নিচ্ছিলেন। হামলায় ভবনটি আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও নেতারা নিরাপদে ছিলেন। এই ঘটনার পরই হামাস মনে করছে যে, একই ধরনের লক্ষ্যভিত্তিক হামলা ভবিষ্যতে অ-আরব দেশেও চালানো হতে পারে।
সূত্রগুলো জানিয়েছে, সম্ভাব্য হুমকি বিশ্লেষণে দেখা গেছে যে আধুনিক নজরদারি পদ্ধতি, অবস্থান শনাক্তকরণ প্রযুক্তি এবং দূরপাল্লার হামলায় ইসরায়েলের সক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। বিশেষ করে শহুরে স্থাপনা, আবাসিক এলাকা কিংবা কূটনৈতিক অঞ্চলগুলোর ভেতরে লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণ করে দ্রুত আঘাত হানার সক্ষমতা নিয়ে শঙ্কা আরও জোরদার হয়েছে। হামাসের দৃষ্টিতে, নিকট ভবিষ্যতে যেকোনো অ-আরব দেশে গোপন বৈঠক, পরামর্শসভা বা রাজনৈতিক আলোচনাও ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে।
সম্ভাব্য ঝুঁকি মোকাবিলায় হামাসের পক্ষ থেকে নেতাদের জন্য কয়েকটি কঠোর নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, বিদেশে যেকোনো বৈঠক এক স্থানে একাধিকবার করা যাবে না। প্রতিটি বৈঠকই ভিন্ন স্থানে আয়োজন করতে হবে, যাতে পুনরাবৃত্ত অবস্থানের মাধ্যমে নজরদারি বা হামলার সুযোগ তৈরি না হয়। এছাড়া বৈঠকে অংশগ্রহণকারীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, বৈঠকের স্থান থেকে কমপক্ষে ৭০ মিটার দূরে মোবাইল ফোন রাখতে হবে। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে অবস্থান শনাক্ত বা যোগাযোগের তথ্য সংগ্রহের ঝুঁকির কথা বিবেচনায় নিয়ে এই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।
এছাড়া বৈঠকস্থল নির্বাচনের ক্ষেত্রে আরও কিছু সীমাবদ্ধতা দেওয়া হয়েছে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ভবন, ইন্টারনেট রাউটার, টেলিভিশন বা ইন্টারকমযুক্ত স্থানে বৈঠক না করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। হামাসের ধারণা, এসব যন্ত্রপাতি গুপ্ত নজরদারির জটিল সরঞ্জাম হিসেবে ব্যবহার করা সম্ভব, যা দ্বারা বৈঠকের অংশগ্রহণকারীদের চলাচল, কথোপকথন বা উপস্থিতি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা যেতে পারে। ফলে প্রযুক্তিগত ঝুঁকি এড়াতে এসব ডিভাইসযুক্ত স্থাপনা পরিহার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
হামাস নেতাদের এই সতর্কতা মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান ভূরাজনৈতিক সংকটের প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ নতুন মাত্রা তৈরি করেছে। ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের বিস্তৃত প্রভাব আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ক্রমেই জটিল আকার ধারণ করছে। হামাসের রাজনৈতিক ও সামরিক নেতৃত্ব মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করলেও সাম্প্রতিক ঘটনার পর তাদের বিদেশে অবস্থানও নিরাপত্তাগতভাবে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকেরা। দোহা হামলার ঘটনার পর আন্তর্জাতিক মহলেও প্রশ্ন উঠেছে—ভবিষ্যতে তৃতীয় দেশগুলোতে সশস্ত্র হামলা বা লক্ষ্যভিত্তিক আঘাত আঞ্চলিক উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তুলবে কি না।
হামাসের জারি করা নতুন নিরাপত্তা নির্দেশনা থেকে স্পষ্ট যে, বিদেশে অবস্থানরত নেতাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সংগঠনটি অতিরিক্ত সতর্কতা গ্রহণ করছে। সম্ভাব্য হামলা ও নজরদারি এড়াতে চলাফেরা, বৈঠকের ধরন এবং যোগাযোগব্যবস্থায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে এই নির্দেশনা কার্যকর করা হয়েছে।
বিশ্লেষণে আরও উঠে এসেছে যে, সম্ভাব্য হামলা যদি অ-আরব দেশে ঘটে, তবে তা আঞ্চলিক রাজনীতির পরিধি ছাড়িয়ে বৈশ্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতিকেও প্রভাবিত করতে পারে। কারণ তৃতীয় দেশে রাজনৈতিক বা সশস্ত্র গোষ্ঠীর নেতাদের লক্ষ্য করে হামলা আন্তর্জাতিক আইন, সার্বভৌমত্ব এবং কূটনৈতিক সম্পর্কের ওপর প্রশ্ন তৈরি করে। ফলে এই পরিস্থিতির জটিলতা ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।
হামাসের সূত্রগুলো জানিয়েছে, সম্ভাব্য ঝুঁকির দেশগুলোর নাম নির্দিষ্ট না করলেও সংগঠনের শীর্ষস্তরে বিষয়টি নিয়ে উচ্চমাত্রার সতর্কতা বজায় রয়েছে। নতুন নিরাপত্তা প্রটোকল অনুসরণ করে সামনের মাসগুলোতে সংগঠনের বিদেশি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড সীমিত করা অথবা পুনর্বিন্যাসের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না।


