জাতীয় ডেস্ক
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে নেওয়ার প্রস্তুতি কয়েক দফায় পরিবর্তনের পর আবারও অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। চিকিৎসকদের পরামর্শ ও তার বর্তমান শারীরিক অবস্থার অগ্রগতির অভাবের কারণে নির্ধারিত সময় পিছিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
শুক্রবার সকালে বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, খালেদা জিয়াকে ৭ ডিসেম্বর লন্ডনে নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। তবে একই দিন রাতেই দলের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলরা জানান, সম্ভাব্য যাত্রার তারিখ পরিবর্তন করে ৯ ডিসেম্বর বিবেচনা করা হচ্ছে। পরে চিকিৎসা–সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, এ তারিখও চূড়ান্ত নয় এবং পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে তা আরও পিছিয়ে যেতে পারে।
চিকিৎসকদের মূল্যায়নে বলা হয়েছে, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থায় উল্লেখযোগ্য কোনো উন্নতি না হওয়ায় আন্তর্জাতিক যাত্রার মতো দীর্ঘ ভ্রমণের সিদ্ধান্ত নিতে আরও সময় প্রয়োজন। সর্বশেষ পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, তার স্বাস্থ্য পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকলেও উন্নতির লক্ষণ স্পষ্ট নয়। চিকিৎসকেরা মনে করছেন, নিরাপদ ভ্রমণের জন্য শারীরিক সক্ষমতা কিছুটা বাড়া জরুরি।
এদিকে তার লন্ডন যাত্রার জন্য যে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করা হয়েছে, সেটির সময়সূচিও নতুন করে সাজাতে হয়েছে। প্রাথমিক পরিকল্পনায় ৬ ডিসেম্বর অ্যাম্বুলেন্সটি ঢাকায় অবতরণের কথা ছিল। কিন্তু সময় পরিবর্তনের কারণে নতুন সময়সূচি অনুযায়ী বিমানটি ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় নামবে। নির্ধারিত যাত্রা যদি আরও পিছিয়ে যায়, তবে এ সময়সূচিও পুনর্বিন্যাসের প্রয়োজন হতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের বন্দোবস্ত নিয়ে সাম্প্রতিক পরিবর্তনও যাত্রা বিলম্বের একটি কারণ। জানা গেছে, কাতার সরকারের সহযোগিতায় খালেদা জিয়ার চিকিৎসার উদ্দেশ্যে প্রথমে একটি বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্স পাঠানোর সিদ্ধান্ত ছিল। তবে ওই বিমানে কারিগরি ত্রুটি ধরা পড়ায় তা পাঠানো সম্ভব হয়নি। বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে জার্মানির এফএআই রেন্ট-এ-জেট প্রতিষ্ঠানের একটি আধুনিক এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে কাতার সরকার পুনর্বিন্যাস করেছে। নতুন এয়ারক্রাফটের প্রস্তুতি, সময়সূচি এবং প্রয়োজনীয় সমন্বয়ের কারণে প্রক্রিয়াটি আরও সময় নিয়েছে।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসা–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, লন্ডনে নেওয়ার আগে তার স্বাস্থ্যের ঝুঁকি সর্বনিম্ন পর্যায়ে আছে কি না, তা নিশ্চিত করতে চিকিৎসকেরা সতর্কভাবে মূল্যায়ন করছেন। দীর্ঘ ফ্লাইট, জলবায়ুর পরিবর্তন, যাত্রাপথের ঝুঁকি এবং পরবর্তী চিকিৎসা ব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের মতে, যাত্রার আগে রোগীর শারীরিক অবস্থা নিয়ে নিশ্চিত সিদ্ধান্ত না নিলে ভ্রমণকালে জটিলতা বাড়ার আশঙ্কা থাকে।
এর পাশাপাশি যাত্রার সময়ে ব্যবহৃত চিকিৎসা সরঞ্জাম, সঙ্গে থাকা মেডিকেল টিম, প্রয়োজনীয় সাপোর্ট সিস্টেম এবং লন্ডনে পৌঁছানোর পর হাসপাতালের প্রস্তুতির বিষয়গুলোও সমন্বয়ের আওতায় রয়েছে। এসব প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত যাত্রার তারিখ নির্ধারণ করা সম্ভব নয় বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন ধরনের জটিল শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে এবং তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণ ও বিশেষজ্ঞদের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার দাবি তার পরিবার দীর্ঘদিন ধরে করে আসছে। চিকিৎসকদের সুপারিশ এবং বিদেশে উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে লন্ডনই তার সম্ভাব্য গন্তব্য হিসেবে নির্ধারণ করা হয়।
তবে যাত্রার সময় পরিবর্তিত হওয়ায় পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। দলের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, চিকিৎসকদের মূল্যায়নই এ সিদ্ধান্তের মূল ভিত্তি হবে। শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলে দ্রুত যাত্রার নতুন তারিখ ঘোষণা করা হবে। পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকলে সময়সূচি আরও পিছিয়ে যেতে পারে।
বর্তমান অবস্থায় চিকিৎসক, পরিবার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যাত্রাকে নিরাপদ রাখাকে সবচেয়ে গুরুত্ব দিচ্ছেন। সব প্রস্তুতি সম্পন্ন এবং ঝুঁকিমুক্ত পরিস্থিতি নিশ্চিত হওয়ার পরই খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হবে।


