নিজস্ব প্রতিবেদক
আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে দেশের জন্য বড় পরীক্ষা হিসেবে উল্লেখ করেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। তিনি বলেছেন, নির্বাচনী পরিবেশ, সরকারি প্রশাসন এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনায় আইনশৃঙ্খলার স্থিতিশীলতা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দুর্বল থাকলে নির্বাচনী প্রক্রিয়া এবং পরবর্তী প্রশাসনিক কাঠামোর ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে তিনি সতর্ক করেন। শনিবার রংপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
মতবিনিময় সভায় পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অতীতে নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে, যা সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর কার্যক্রমকে প্রভাবিত করেছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে পরিস্থিতি উন্নতির দিকে এবং পুলিশ বাহিনী নিজেদের অবস্থান সুসংহত করতে সক্ষম হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তাঁর মতে, নির্বাচনী পরিবেশে শৃঙ্খলা বজায় রাখা শুধু পুলিশ নয়, প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার সমন্বিত দায়িত্ব।
তিনি বলেন, নির্বাচনে পরাজয়ের সম্ভাবনা রয়েছে—এমন কিছু প্রার্থী বা তাদের সমর্থকদের কাছ থেকে অস্থিরতা বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির ঝুঁকি থাকতে পারে। তাই আগাম সতর্কতা বজায় রাখা জরুরি। তিনি জানান, নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে নির্বাচন কমিশন এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিচ্ছে। সম্ভাব্য অস্থিতিশীলতা মাথায় রেখে নিরাপত্তা সংস্থাগুলো দায়িত্ব পালন করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতির বিষয়ে তিনি বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার সম্প্রতি নিরাপত্তা সংস্থা ও প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কোনো ধরনের গণ্ডগোল বা নাশকতা প্রতিরোধে সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে কেন্দ্রীয় নির্দেশনার পাশাপাশি জেলা-উপজেলা পর্যায়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা, টহল জোরদার, বিশেষ নজরদারি এবং সংবেদনশীল এলাকায় অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েনের উদ্যোগ।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা আশা প্রকাশ করে বলেন, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নতুন সরকার গঠিত হবে এবং সরকার পরিবর্তনের স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় দায়িত্ব হস্তান্তর সম্পন্ন হবে। তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা এবং প্রশাসনিক স্থিতিশীলতার জন্য একটি শান্তিপূর্ণ নির্বাচন প্রয়োজন, যা দেশীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে সুদৃঢ় করবে।
মতবিনিময় সভায় দেশের বৈদেশিক কর্মসংস্থানের নিম্নমুখী প্রবণতা, বিশেষত উত্তরবঙ্গ অঞ্চলের বাস্তবতা নিয়েও আলোচনা হয়। এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বৈদেশিক শ্রমবাজারে প্রতিযোগিতা বাড়ায় বিভিন্ন দেশের নিয়োগদাতারা দক্ষ কর্মীকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। প্রয়োজনীয় দক্ষতা বা প্রশিক্ষণের অভাব উত্তরবঙ্গে বিদেশগামী কর্মীর হার কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি জানান, যদি কোনো বিদেশি নিয়োগদাতা বাংলাদেশের শ্রমিকদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে আগ্রহ প্রকাশ করে এবং প্রশিক্ষণ প্রদানের প্রস্তাব রাখে, তাহলে সরকারি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলো তাদের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। দক্ষতা উন্নয়ন ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শ্রমবাজারে প্রবেশাধিকারের সুযোগ বাড়াতে সরকার এসব উদ্যোগ বাস্তবায়নে আগ্রহী। এর ফলে উত্তরবঙ্গসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের শ্রমিক বৈদেশিক বাজারে পুনরায় প্রতিযোগিতায় সক্ষম হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সভায় জেলা পর্যায়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তারা বিভিন্ন দফতরের কাজ, নির্বাচনী প্রস্তুতি, নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং জনসেবামূলক কার্যক্রমের অগ্রগতি উপদেষ্টাকে অবহিত করেন। তাঁরা জানান, নির্বাচনকে সামনে রেখে মাঠ প্রশাসন ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট দফতরের মধ্যে সমন্বয় জোরদার করেছে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল আহসান, মহানগর উপ-পুলিশ কমিশনার (অপরাধ) তোফায়েল আহমেদ, পুলিশ সুপার মারুফাত হোসাইনসহ বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তা। মতবিনিময় শেষে উপদেষ্টা কর্মকর্তাদের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করেন এবং নির্বাচনী কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করেন।


