জাতীয় ডেস্ক
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো প্রবাসীদের জন্য চালু হওয়া ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ অ্যাপে নিবন্ধন দেড় লাখের বেশি ছাড়িয়েছে। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, শনিবার সকালে পর্যন্ত অ্যাপে নিবন্ধন করেছেন ১ লাখ ৯৩ হাজার ৮৩৬ জন প্রবাসী বাংলাদেশি। বিভিন্ন দেশ থেকে দ্রুতগতিতে নিবন্ধন বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রবাসী ভোটার অংশগ্রহণ নিয়ে ইসির নতুন উদ্যোগে ব্যাপক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে।
ইসির অনলাইন পোর্টালে প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা যায়, বিশ্বজুড়ে বহু দেশে অবস্থানরত বাংলাদেশিরা এ নিবন্ধন কার্যক্রমে যুক্ত হয়েছেন। দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, দক্ষিণ আফ্রিকা, চীন, মিশর, মোজাম্বিক, লিবিয়া, মরিশাস, হংকং, ব্রাজিল, উগান্ডা, কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, ইথিওপিয়া, নাইজেরিয়া, লাইবেরিয়া, বতসোয়ানা, কেনিয়া, রুয়ান্ডা, আলজেরিয়া, অ্যাঙ্গোলা, তানজানিয়া, সোমালিয়া, ঘানা, গিনি, মরক্কো, দক্ষিণ সুদান, চিলি, সিয়েরা লিওন, ইকুয়েডর, তাইওয়ান, আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, গাম্বিয়া, পেরু, জিম্বাবুয়ে ও যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ থেকে প্রবাসীরা এভাবে ভোটার হিসেবে নিজেদের অন্তর্ভুক্ত করছেন।
প্রবাসী ভোটার অন্তর্ভুক্তির জন্য এবারই প্রথমবারের মতো আইটি-নির্ভর পোস্টাল ব্যালট ব্যবস্থার উদ্যোগ নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। পূর্ববর্তী নির্বাচনগুলোতে বিদেশে বসবাসকারীদের জন্য কোনো প্রত্যক্ষ ভোটদান ব্যবস্থা চালু ছিল না। এবার পোস্টাল ভোটের আওতায় প্রবাসীদের পাশাপাশি আইনি হেফাজতে থাকা ভোটার এবং ভোটের দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তারাও অংশ নিতে পারবেন।
ইসির নির্দেশনা অনুযায়ী, ভোট দিতে হলে অবশ্যই অ্যাপে নিবন্ধন করতে হবে। নিবন্ধন কার্যক্রম ১৯ নভেম্বর শুরু হয়েছে, যা চলবে ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অ্যাপ ব্যবহার করে সংশ্লিষ্ট জাতীয় পরিচয়পত্র ও প্রয়োজনীয় তথ্য জমা দিলেই প্রবাসীরা ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাবেন। ইসি জানিয়েছে, নিবন্ধন শেষে সংশ্লিষ্ট ভোটারদের ঠিকানায় ডাকযোগে পোস্টাল ব্যালট পাঠানো হবে। ভোটাররা ব্যালটে ভোট দিয়ে নির্ধারিত ফিরতি খামে তা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে পাঠিয়ে দেবেন।
এই নতুন পদ্ধতি বাস্তবায়নের মাধ্যমে বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশিকে আনুষ্ঠানিক ভোটদান প্রক্রিয়ার আওতায় আনার পরিকল্পনা করছে ইসি। সংস্থাটি জানিয়েছে, বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা প্রায় ৫০ লাখ সম্ভাব্য প্রবাসী ভোটারকে অন্তর্ভুক্ত করার লক্ষ্যে তারা কাজ করছে। এতে বাংলাদেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় দীর্ঘদিনের একটি বড় সীমাবদ্ধতা দূর হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মরত বা বসবাসরত লক্ষাধিক বাংলাদেশির দীর্ঘদিনের দাবি ছিল সহজ উপায়ে ভোটাধিকার প্রয়োগের ব্যবস্থা। কাজের ব্যস্ততা, দূরত্ব এবং দূতাবাসভিত্তিক সীমিত সুবিধার কারণে অধিকাংশ প্রবাসী কখনও ভোট দিতে পারতেন না। এবার পোস্টাল ব্যালট পদ্ধতি সেই সমস্যা দূর করতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।
পোস্টাল ভোট ব্যবস্থা চালু হলে প্রবাসীদের রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব আরও সুসংহত হতে পারে। দেশের অর্থনীতিতে প্রবাসী আয়ের অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় তাদের ভোটাধিকার বাস্তবায়নকে নির্বাচন কমিশন তাৎপর্যপূর্ণ একটি পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করছে। এ ছাড়া বিশ্বব্যাপী অবস্থানরত বাংলাদেশিদের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় সংযোগ জোরদার করার ক্ষেত্রেও এই উদ্যোগের ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে নিবন্ধন সময়সীমা শেষ হওয়ার পর ইসি বিভিন্ন ধাপে পোস্টাল ব্যালট পাঠানো, সংগ্রহ ও গণনার প্রস্তুতি নেবে। ডাকযোগে ব্যালট আদান–প্রদানের কার্যক্রম সহজতর করতে সংশ্লিষ্ট দেশের ডাক বিভাগ ও দূতাবাসগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করা হবে। ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পোস্টাল ভোট ব্যবস্থার সুষ্ঠু প্রয়োগে আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতে তারা প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত ব্যবস্থা ও নিরাপত্তা প্রটোকল তৈরি করছেন।
ইসি ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছে যে আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। তার আগে প্রবাসী ভোটার অন্তর্ভুক্তির এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে বিদেশে থাকা নাগরিকদের প্রথমবারের মতো জাতীয় নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
প্রবাসী ভোটার নিবন্ধনের সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। নিবন্ধন শুরুর পর অল্প সময়েই প্রায় দুই লাখের কাছাকাছি ভোটার সংযুক্ত হওয়া ইঙ্গিত দেয় যে প্রবাসীদের মধ্যে এ উদ্যোগ নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়েছে। সময়সীমা শেষ হওয়ার আগে নিবন্ধনের সংখ্যা আরও উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে বলে সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন।


