বিএনপির জোট কৌশলে অনিশ্চয়তা, রাজনৈতিক সংকট আরও গভীর হওয়ার আশঙ্কা

বিএনপির জোট কৌশলে অনিশ্চয়তা, রাজনৈতিক সংকট আরও গভীর হওয়ার আশঙ্কা

রাজনীতি ডেস্ক

রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতা এবং আগামী জাতীয় নির্বাচনে জোট গঠনের সম্ভাবনা ঘিরে অনিশ্চয়তা বাড়ার প্রেক্ষাপটে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নতুনভাবে আলোচনায় এসেছে। বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত ‘বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, নির্বাচন ও গণতন্ত্রের সংগ্রাম’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতারা এ পরিস্থিতি নিয়ে মতামত তুলে ধরেন। সেখানে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি ও গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না বিএনপির নির্বাচনকেন্দ্রিক কৌশল, নেতৃত্ব সংকট এবং বহুদলীয় সমন্বয়প্রচেষ্টার অগ্রগতি নিয়ে বিশদ বক্তব্য উপস্থাপন করেন।

সভায় অংশ নেওয়া নেতাদের আলোচনায় প্রধানত আগামী নির্বাচন ঘিরে অনিশ্চয়তা, রাজনৈতিক সমঝোতার ঘাটতি, নেতৃত্বের স্বাস্থঝুঁকি এবং নির্বাচনী আইনের সাম্প্রতিক পরিবর্তন নিয়ে উদ্বেগ সামনে আসে। এসব বক্তব্য দেশের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় সম্ভাব্য অচলাবস্থা এবং নির্বাচন পরিচালনার চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে নতুন প্রশ্ন উত্থাপন করে।

মান্না তাঁর বক্তব্যে বলেন, বিএনপি সমমনাদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনার পূর্বে নিজস্বভাবে প্রার্থী ঘোষণা করায় জোটবদ্ধ নির্বাচনী কৌশল নিয়ে স্পষ্টতা কমে গেছে। তাঁর মতে, এ ধরনের পদক্ষেপ ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক সমন্বয়কে জটিল করতে পারে এবং জোট রাজনীতির কাঠামো দুর্বল হওয়ার ঝুঁকি তৈরি করেছে। তিনি আরও বলেন, বর্তমান সময়ে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অত্যন্ত জটিল পর্যায়ে অবস্থান করছে, যেখানে বড় রাজনৈতিক দলের সিদ্ধান্তগুলো জাতীয় প্রেক্ষাপটে তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে।

এ সময় তিনি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতিকে রাজনৈতিক অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক হিসেবে উল্লেখ করেন। মান্নার ভাষ্য অনুযায়ী, বড় রাজনৈতিক দলের প্রধান নেতার দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থতা সংশ্লিষ্ট দলের নির্বাচন প্রস্তুতি ব্যাহত করতে পারে এবং দলীয় নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া ধীরগতি হতে পারে। ওই পরিস্থিতিতে দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের জনসংযোগ কার্যক্রমও শ্লথ হয়ে পড়েছে বলে সংশ্লিষ্ট মহলের ধারণা।

বিএনপির নির্বাচনী কৌশল নিয়ে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, দলটি এখনো জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করবে কি না—এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছায়নি। আসনভিত্তিক সমঝোতার সম্ভাবনা থাকলেও কোথায়, কতটি আসনে সমমনা দলগুলোকে ছাড় দেওয়া হতে পারে—তা স্পষ্ট নয়। এই অনিশ্চয়তা দেশব্যাপী বিরোধী রাজনৈতিক জোটগুলোর কার্যক্রমে সতর্কতার পরিবেশ তৈরি করেছে। ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক সহযোগিতা, নির্বাচনী প্রচারণা এবং প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রক্রিয়া এ অনিশ্চয়তার দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।

আলোচনা সভায় অন্য বক্তারাও নির্বাচন, আইনি কাঠামো এবং সরকারের ভূমিকা নিয়ে বিভিন্ন মতামত তুলে ধরেন। গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, রাজনৈতিক ব্যবস্থায় গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত না হলে যে কোনো ধরনের কর্তৃত্ববাদী প্রবণতা সামাজিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়িয়ে তুলতে পারে। তিনি মনে করেন, অবাধ ও প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন ছাড়া চলমান সংকট দীর্ঘায়িত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, সাম্প্রতিক সংশোধিত নির্বাচনী আইনের বিভিন্ন ধারাকে ঘিরে প্রশ্ন উঠেছে, যা নির্দিষ্ট কোনো রাজনৈতিক পক্ষের জন্য সুবিধাজনক হতে পারে কি না—তা নিয়ে জনমনে সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে। তিনি সতর্ক করে বলেন, নির্বাচন কমিশন ও সরকারের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত না হলে আগামী নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা ঝুঁকিতে পড়বে এবং তা নতুন রাজনৈতিক জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।

সভায় উপস্থিত নেতারা আরও বলেন, দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বহুলাংশে নির্ভর করছে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক আস্থা ও সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করার ওপর। বিভিন্ন দলের বক্তব্যে উঠে আসে, নির্বাচনকে ঘিরে যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে তা দূর করার জন্য দ্রুত রাজনৈতিক সংলাপ, প্রাসঙ্গিক আইনি বিষয়ের স্বচ্ছতা এবং নির্বাচন পরিচালনা কাঠামোর প্রতি আস্থা পুনর্গঠন প্রয়োজন।

আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন। সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা, যারা দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি, গণতান্ত্রিক চর্চার ধারা অব্যাহত রাখা এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়ার বিশ্বাসযোগ্যতা নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।

এসব বক্তব্য থেকে স্পষ্ট হয় যে নির্বাচনের পূর্ববর্তী সময়ে রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরীণ কৌশলগত সিদ্ধান্ত, নেতৃত্বের সক্ষমতা এবং পারস্পরিক সম্পর্ক দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে। আগামী নির্বাচন ঘিরে চলমান অনিশ্চয়তা দূর না হলে দেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট আরও জটিল হতে পারে বলে সভায় অংশ নেওয়া নেতারা মত প্রকাশ করেন।

রাজনীতি শীর্ষ সংবাদ